আল মুমিন

৮৫ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
৩১ ) যেমন দিন এসেছিলো নূহ (আ), আদ, সামূদ এবং তাদের পরবর্তী কওমসমূহের ওপর। আর এটা সত্য যে, আল্লাহ‌ তার বান্দাদের ওপর জুলুম করার কোন ইচ্ছা রাখেন না। ৫০
مِثْلَ دَأْبِ قَوْمِ نُوحٍ وَعَادٍ وَثَمُودَ وَٱلَّذِينَ مِنۢ بَعْدِهِمْ وَمَا ٱللَّهُ يُرِيدُ ظُلْمًا لِّلْعِبَادِ ٣١
৩২ ) হে কওম, আমার ভয় হয়, তোমাদের ওপর ফরিয়াদ ও অনুশোচনা করার দিন না এসে পড়ে,
وَيَٰقَوْمِ إِنِّىٓ أَخَافُ عَلَيْكُمْ يَوْمَ ٱلتَّنَادِ ٣٢
৩৩ ) যখন তোমরা একে অপরকে ডাকতে থাকবে এবং দৌঁড়িয়ে পালাতে থাকবে। কিন্তু সেখানে আল্লাহর হাত থেকে বাঁচানোর কেউ থাকবে না। সত্য কথা হচ্ছে এই যে, আল্লাহ‌ যাকে পথভ্রষ্ট করে দেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না।
يَوْمَ تُوَلُّونَ مُدْبِرِينَ مَا لَكُم مِّنَ ٱللَّهِ مِنْ عَاصِمٍ وَمَن يُضْلِلِ ٱللَّهُ فَمَا لَهُۥ مِنْ هَادٍ ٣٣
৩৪ ) এর আগে ইউসুফ তোমাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শনসূমহ নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু তোমরা তাঁর আনীত শিক্ষার ব্যাপারে সন্দেহই পোষণ করেছো। পরে তাঁর ইন্তিকাল হলে তোমরা বললেঃ এখন আর আল্লাহ‌ কোন রসূল পাঠাবেন না। ৫১ এভাবে ৫২ আল্লাহ তা’আলা সেসব লোকদের গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করেন যারা সীমালংঘনকারী ও সন্দেহ প্রবণ হয়।
وَلَقَدْ جَآءَكُمْ يُوسُفُ مِن قَبْلُ بِٱلْبَيِّنَٰتِ فَمَا زِلْتُمْ فِى شَكٍّ مِّمَّا جَآءَكُم بِهِۦ حَتَّىٰٓ إِذَا هَلَكَ قُلْتُمْ لَن يَبْعَثَ ٱللَّهُ مِنۢ بَعْدِهِۦ رَسُولًا كَذَٰلِكَ يُضِلُّ ٱللَّهُ مَنْ هُوَ مُسْرِفٌ مُّرْتَابٌ ٣٤
৩৫ ) এবং আল্লাহ‌র আয়াতসমূহের ব্যাপারে ঝগড়া করে। অথচ এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোন সনদ বা প্রমাণ আসেনি। ৫৩ আল্লাহ ও ঈমানদারদের কাছে এ আচরণ অত্যন্ত ক্রোধ উদ্রেককারী। এভাবে আল্লাহ‌ প্রত্যেক অহংকারী ও স্বেচ্ছাচারীর মনে মোহর লাগিয়ে দেন। ৫৪
ٱلَّذِينَ يُجَٰدِلُونَ فِىٓ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ بِغَيْرِ سُلْطَٰنٍ أَتَىٰهُمْ كَبُرَ مَقْتًا عِندَ ٱللَّهِ وَعِندَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ كَذَٰلِكَ يَطْبَعُ ٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ قَلْبِ مُتَكَبِّرٍ جَبَّارٍ ٣٥
৩৬ ) ফেরাউন বললোঃ “হে হামান, আমার জন্য একটি সুউচ্চ ইমরাত নির্মাণ করো যাতে আমি রাস্তাসমূহ পর্যন্ত পৌঁছতে পারি
وَقَالَ فِرْعَوْنُ يَٰهَٰمَٰنُ ٱبْنِ لِى صَرْحًا لَّعَلِّىٓ أَبْلُغُ ٱلْأَسْبَٰبَ ٣٦
৩৭ ) অর্থাৎ আসমানের রাস্তা এবং মূসার ইলাহকে উঁকি দিয়ে দেখতে পারি। মূসাকে মিথ্যাবাদী বলেই আমার মনে হয়।” ৫৫ এভাবে ফেরাউনের জন্য তার কুকর্মসমূহ সুদৃশ্য বানিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তার সোজা পথে চলা থামিয়ে দেয়া হয়েছে। ফেরাউনের সমস্ত চক্রান্ত (তার নিজের) ধ্বংসের পথেই ব্যয়িত হয়েছে।
أَسْبَٰبَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ فَأَطَّلِعَ إِلَىٰٓ إِلَٰهِ مُوسَىٰ وَإِنِّى لَأَظُنُّهُۥ كَٰذِبًا وَكَذَٰلِكَ زُيِّنَ لِفِرْعَوْنَ سُوٓءُ عَمَلِهِۦ وَصُدَّ عَنِ ٱلسَّبِيلِ وَمَا كَيْدُ فِرْعَوْنَ إِلَّا فِى تَبَابٍ ٣٧
৩৮ ) যে ব্যক্তি ঈমান এনেছিলো, বললোঃ হে আমার কওমের লোকেরা, আমার কথা মেনে নাও। আমি তোমাদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দিচ্ছি।
وَقَالَ ٱلَّذِىٓ ءَامَنَ يَٰقَوْمِ ٱتَّبِعُونِ أَهْدِكُمْ سَبِيلَ ٱلرَّشَادِ ٣٨
৩৯ ) হে কওম, দুনিয়ার এ জীবন তো কয়েক দিনের জন্য। ৫৬ একমাত্র আখেরাতই চিরদিনের অবস্থানস্থল।
يَٰقَوْمِ إِنَّمَا هَٰذِهِ ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَا مَتَٰعٌ وَإِنَّ ٱلْءَاخِرَةَ هِىَ دَارُ ٱلْقَرَارِ ٣٩
৪০ ) যে মন্দ কাজ করবে সে যতটুকু মন্দ করবে ততটুকুরই প্রতিফল লাভ করবে। আর নারী হোক বা পুরুষ যে নেক কাজ করবে সে যদি ঈমানদার হয় তাহলে তারা সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেখানে তাদেরকে বেহিসেব রিযিক দেয়া হবে।
مَنْ عَمِلَ سَيِّئَةً فَلَا يُجْزَىٰٓ إِلَّا مِثْلَهَا وَمَنْ عَمِلَ صَٰلِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُو۟لَٰٓئِكَ يَدْخُلُونَ ٱلْجَنَّةَ يُرْزَقُونَ فِيهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ ٤٠
৫০.
অর্থাৎ বান্দার সাথে আল্লাহর কোন শত্রুতা নেই যে, তিনি অযথা তাদের ধ্বংস করবেন। তিনি তাদের ওপর আযাব কেবল তখনই পাঠান যখন তারা সীমালঙ্ঘন করে। আর সে সময় তাদের ওপর আযাব তাঁর ন্যায় ও ইনসাফের দাবী হয়ে দাঁড়ায়।
৫১.
অর্থাৎ তোমাদের গোমরাহী এবং সে গোমরাহীর ব্যাপারে তোমাদের হঠকারিতার অবস্থা এই যে, মূসা আলাইহিস সাল্লামের পূর্বে তোমাদের দেশে ইউসুফ আলাইহিস সালাম নবী হয়ে এসেছিলেন। তাঁর সম্পর্কে তোমরা নিজেরাও স্বীকার করো যে, তিনি অত্যন্ত উন্নত স্বভাব-চরিত্রের অধিকারী ছিলেন, একথাও তোমরা স্বীকার করো যে, সে সময়ে তোমাদের ওপর যে দুর্ভিক্ষ এসেছিলো তৎকালীন বাদশাহর স্বপ্নের সঠিক ব্যাখ্যা বলে দিয়ে সাত বছর ব্যাপী সে ভয়ানক দুর্ভিক্ষের ধ্বংসকারিতা থেকে তিনি তোমাদের রক্ষা করেছিলেন। তোমাদের গোটা জাতি একথাও স্বীকার করে যে, তাঁর শাসনামলের চেয়ে অধিক ন্যায় ও ইনসাফ এবং কল্যাণ ও বরকতের যুগ মিসরে আর কখনো আসেনি। কিন্তু তাঁর এসব গুণাবলী জানা ও মানা সত্ত্বেও তোমরা তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর ওপর কখনো ঈমান আনো নাই। তাঁর মৃত্যু হলে তোমরা বলতে শুরু করলে, তাঁর মত লোক কি আর কখনো জন্ম নিতে পারে? তোমরা তাঁর গুণাবলী স্বীকার করলেও পরবর্তী কালেও সেটিকেই যেন তোমরা পরবর্তী সমস্ত নবীকে অস্বীকার করার একটা স্থায়ী বাহানা বানিয়ে নিয়েছো। এর অর্থ, কোন অবস্থায়ই তোমরা হিদায়াত গ্রহণ করবে না।
৫২.
বাহ্যত মনে হয়, ফেরাউনের সভাসদদের মধ্যকার ঈমান গ্রহণকারী ব্যক্তির বক্তব্যের ব্যাখ্যা ও সংযোজনা হিসেবে আল্লাহ‌ তা’আলা পরবর্তী বাক্যগুলো বলেছেন।
৫৩.
অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে সেসব লোককেই গোমরাহীতে নিক্ষেপ করা হয় যাদের মধ্যে এ তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এক, তারা কুকর্মে সীমা লংঘন করে এবংস গোনাহ ও পাপাচারে এমনভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে যে, নৈতিক চরিত্র সংশোধনের কোন আহবানই গ্রহণ করতে প্রস্তুত হয় না। দুই, নবী-রসূলদের (আলাইহিমুস সালাম) ব্যাপারে সন্দেহ-সংশয়ে লিপ্ত থাকা হয় তাদের স্থায়ী আচরণ। আল্লাহর নবী তাদের সামনে যত সুস্পষ্ট নিদর্শনই পেশ করুন না কেন, তারা তাঁর নবুওয়াতের ব্যাপারেও সন্দেহ পোষণ করে। তাছাড়া তাওহীদ ও আখেরাত সম্পর্কে তারা যেসব সত্য ও বাস্তবতা পেশ করেছেন তারা সেগুলোকেও সবসময় সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে থাকে। তিন, তারা আল্লাহর‌ কিতাবের বাণীসমূহ সম্পর্কে যুক্তি গ্রাহ্য পন্থায় চিন্তা-ভাবনা করার পরিবর্তে কূট তর্কের দ্বারা তার মোকাবিলার চেষ্টা করে। তাদের এ কূট তর্কের ভিত্তি কোন জ্ঞানগত যুক্তি বা আসমানী কিতাবের সনদ নয় বরং প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তাদের জিদ ও হঠকারিতাই তার একমাত্র ভিত্তি। যখন কোন গোষ্ঠীর মধ্যে এ তিনটি দোষ দেখা দেয় আল্লাহ‌ তখন তাদেরকে গোমরাহীর গহবরে নিক্ষেপ করেন। দুনিয়ার কোন শক্তিই তাদেরকে সেখান থেকে উদ্ধার করতে পারে না।
৫৪.
অর্থাৎ বিনা কারণে কারো মনে মোহর লাগিয়ে দেয়া হয় না। যার মধ্যে অহংকার ও স্বেচ্ছাচারিতা সৃষ্টি হয় লা’নতের এ মোহর কেবল তার মনের ওপরেই লাগানো হয়। ‘তাকাববুর’ অর্থ ব্যক্তির মিথ্যা অহংকার যার কারণে ন্যায় ও সত্যের সামনে মাথা নত করাকে সে তার মর্যাদার চেয়ে নীচু কাজ বলে মনে করে। স্বেচ্ছাচারিতা অর্থ আল্লাহর সৃষ্টির ওপর জুলুম করা। এ জুলুমের অবাধ লাইসেন্স লাভের জন্য ব্যক্তি আল্লাহর শরীয়াতের বাধ্য-বাধকতা মেনে নেয়া থেকে দূরে থাকে।
৫৫.
ফেরাউনের সভাসদদের মধ্যকার মু’মিন ব্যক্তির বক্তব্য পেশের সময় ফেরাউন হামানকে সম্বোধন করে একথা কিছুটা এমন ভঙিতে বলছে যেন ঐ মু’মিনের কথাকে আদৌ বিবেচনার যোগ্য বলে মনে করে না। তাই অহংকারী ভঙ্গিতে তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে হামানকে বলছে? আমার জন্য একটা উঁচু ইমরাত নির্মাণ করো। আমি দেখতে চাই, মূসা যে আল্লাহর কথা বলে সে আল্লাহ‌ কোথায় থাকে। (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুর্‌আন, আল কাসাস, টীকা ৫২ থেকে ৫৪)
৫৬.
অর্থাৎ তোমরা যে এ পৃথিবীর অস্থায়ী ধন-সম্পদ ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে গর্বিত হয়ে আল্লাহকে ভুলে যাচ্ছো তা তোমাদের অজ্ঞতা।
অনুবাদ: