وَكَذَٰلِكَ أَوْحَيْنَآ إِلَيْكَ رُوحًۭا مِّنْ أَمْرِنَا ۚ مَا كُنتَ تَدْرِى مَا ٱلْكِتَـٰبُ وَلَا ٱلْإِيمَـٰنُ وَلَـٰكِن جَعَلْنَـٰهُ نُورًۭا نَّهْدِى بِهِۦ مَن نَّشَآءُ مِنْ عِبَادِنَا ۚ وَإِنَّكَ لَتَهْدِىٓ إِلَىٰ صِرَٰطٍۢ مُّسْتَقِيمٍۢ
এভাবেই (হে মুহাম্মাদ) , আমি আমার নির্দেশে তোমার কাছে এক রূহকে অহী করেছি। ৮৩ তুমি আদৌ জানতে না কিতাব কি এবং ঈমানই বা কি। ৮৪ কিন্তু সেই রূহকে আমি একটি আলো বানিয়ে দিয়েছি যা দিয়ে আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথ দেখিয়ে থাকি। নিশ্চিতভাবেই আমি তোমাকে সোজা পথের দিক নির্দেশনা দান করছি।
৮৩
“এভাবেই” অর্থ শুধু শেষ পদ্ধতি নয়, বরং ওপরের আয়াতে যে তিনটি পদ্ধতি উল্লেখিত হয়েছে তার সব ক’টি। আর ‘রূহ’ অর্থ অহী অথবা অহীর মাধ্যমে নবীকে ﷺ যে শিক্ষা দান করা হয়েছে সেই শিক্ষা। কুরআন ও হাদীস থেকেই একথা প্রমাণিত যে, এই তিনটি পদ্ধতিতেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হিদায়াত দান করা হয়েছেঃ
একঃ হাদীস শরীফে হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অহী আসার সূচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের আকারে (বুখারী ও মুসলিম)। এই ধারা পরবর্তী সময় পর্যন্ত জারি ছিল। তাই হাদীসে তাঁর বহু সংখ্যক স্বপ্নের উল্লেখ দেখা যায়। যার মাধ্যমে হয় তাঁকে কোন শিক্ষা দেয়া হয়েছে কিংবা কোন বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তাছাড়া কুরআন মজীদে নবীর ﷺ একটি স্বপ্নের সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে (আল ফাতহু, আয়াত ২৭)। তাছাড়া কতিপয় হাদীসে একথারও উল্লেখ আছে যে, নবী (সা.) বলেছেন, আমার মনে অমুক বিষয়টি সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে, কিংবা আমাকে একথাটি বলা হয়েছে বা আমাকে এই নির্দেশ দান করা হয়েছে অথবা আমাকে এ কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ ধরনের সব কিছু অহীর প্রথমোক্ত শ্রেণীর সাথে সম্পর্কিত। বেশীর ভাগ হাদীসে কুদসী এই শ্রেণীরই অন্তর্ভুক্ত।
দুইঃ মে’রাজে নবীকে ﷺ দ্বিতীয় প্রকার অহী দ্বারা সম্মানতি করা হয়েছে। কতিপয় হাদীসে নবীকে ﷺ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের নির্দেশ দেয়া এবং তা নিয়ে তাঁর বার বার দরখাস্ত পেশ করার কথা যেভাবে উল্লেখিত হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, সে সময় আল্লাহ এবং তাঁর বান্দা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে ঠিক তেমনি কথাবার্তা হয়েছিলো যেমনটি তূর পাহাড়ের পাদদেশে মূসা (আ) ও আল্লাহর মধ্যে হয়েছিলো।
তিনঃ এরপর থাকে অহীর তৃতীয় শ্রেণী। এ ব্যাপারে কুরআন নিজেই সাক্ষ্য দান করে যে, কুরআনকে জিবরাঈল আমীনের মাধ্যমে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌঁছানো হয়েছে (আল বাকারা ৯৭, আশ শু’আরা ১৯২ থেকে ১৯৫ আয়াত)।
৮৪
অর্থাৎ নবুওয়াতের মর্যাদায় ভূষিত হওয়ার আগে নবীর ﷺ মগজে এ ধারণা পর্যন্তও কোন দিন আসেনি যে, তিনি কোন কিতাব লাভ করতে যাচ্ছেন বা তাঁর লাভ করা উচিত। বরং তিনি আসমানী কিতাব এবং তার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আদৌ কিছু জানতেন না। অনুরূপ আল্লাহর প্রতি তাঁর ঈমান অবশ্যই ছিল। কিন্তু মানুষকে আল্লাহ সম্পর্কে কি কি বিষয় মানতে হবে সচেতনভাবে তিনি তার বিস্তারিত কিছুই জানতেন না। একথাও তাঁর জানা ছিল না যে, এর সাথে ফেরেশতা, নবুওয়াত, আল্লাহর কিতাবসমূহ এবং আখেরাত সম্পর্কে অনেক কিছুই মানা আবশ্যক। এ দু’টি ছিল এমনই বিষয় যা মক্কার কাফেরদের কাছেও গোপন ছিল না। মক্কার কোন মানুষই এ প্রমাণ দিতে সক্ষম ছিল না যে, হঠাৎ নবুওয়াত ঘোষণার পূর্বে সে কখনো নবীর ﷺ মুখে আল্লাহর কিতাবের কথা শুনেছে কিংবা মানুষদের অমুক অমুক বিষয়ের প্রতি ঈমান আনতে হবে এমন কোন কথা শুনেছে। একথা সুস্পষ্ট যদি কোন ব্যক্তি পূর্ব থেকেই নবী হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে তাহলে চল্লিশ বছর পর্যন্ত রাত দিন তাঁর সাথে উঠাবসা করেও কেউ তাঁর মুখ থেকে কিতাব ও ঈমান শব্দ পর্যন্ত শুনবে না। অথচ চল্লিশ বছর পর সে ঐ সব বিষয়েই হঠাৎ জোরালো বক্তব্য পেশ করতে শুরু করবে তা কখনো হতে পারে না।