قُلْ أَرَءَيْتُمْ إِن كَانَ مِنْ عِندِ ٱللَّهِ وَكَفَرْتُم بِهِۦ وَشَهِدَ شَاهِدٌۭ مِّنۢ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ عَلَىٰ مِثْلِهِۦ فَـَٔامَنَ وَٱسْتَكْبَرْتُمْ ۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلظَّـٰلِمِينَ
হে নবী (সা.) ! তাদের বলো, তোমরা কি কখনো একথা ভেবে দেখেছো, যদি এই বাণী আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসে থাকে আর তোমরা তা প্রত্যাখ্যান করো (তাহলে তোমাদের পরিণাম কী হবে)? ১৩ এ রকম একটি বাণী সম্পর্কে তো বনী ইসরাঈলদের একজন সাক্ষী সাক্ষ্যও দিয়েছে। সে ঈমান এনেছে। কিন্তু তোমরা আত্মম্ভরিতায় ডুবে আছো। ১৪ এ রকম জালেমদের আল্লাহ হিদায়াত দান করেন না’।
১৩
এ বিষয়টি ইতিপূর্বে অন্যভাবে সূরা হা-মীম আস-সাজদার ৫২ আয়াতে বলা হয়েছে। ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, উল্লিখিত সূরার তাফসীর, টীকা ৬৯।
১৪
মুফাসসিরদের একটি বড় দল এই সাক্ষী বলতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালামকে বুঝিয়েছেন। তিনি মদীনার একজন বড় ইহুদী আলেম ছিলেন। তিনি হিজরতের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর ঈমান আনেন। এ ঘটনা যেহেতু মদীনাতে সংঘটিত হয়েছিলো তাই মুফাসসিরদের মত হলো, এটি মদীনায় অবতীর্ণ আয়াত। আয়াতটি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম সম্পর্কে নাযিল হয়েছিলো, হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াককাসের এই বর্ণনাই এ ব্যাখ্যার ভিত্তি। (বুখারী, মুসলিম, নাসায়ী, ইবনে জারীর)। এ কারণেই ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ, কাতাদা, দাহহাক, ইবনে সিরীন, হাসান বাসারী, ইবনে যায়েদ এবং ‘আওফ ইবনে মালেক আল-আশজায়ীর মত কিছু সংখ্যক বড় বড় মুফাসসিরও এই ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু অপর দিকে ইকরিমা, শা'বী ও মাসরুক বলেনঃ এ আয়াত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম সম্পর্কে হতে পারে না। কারণ, গোটা সূরাই মক্কায় অবতীর্ণ। ইবনে জারীর তাবারীও এ মতটিকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি হলো, প্রথম থেকেই মক্কার মুশরিকদের উদ্দেশ্য করে ধারাবাহিকভাবে গোটা বক্তব্য চলে আসছে এবং পরের সবটুকু বক্তব্যও তাদের উদ্দেশেই পূর্বাপর এই প্রসঙ্গের মধ্যে হঠাৎ মদীনায় অবতীর্ণ আয়াত এসে যাওয়া কল্পনা করা যায় না। পরবর্তীকালের যেসব মুফাসসির এই দ্বিতীয় মতটি গ্রহণ করেছেন তারা হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াককাসের বর্ণনাটি প্রত্যাখ্যান করেন না। তারা মনে করেন, আয়াতটি যেহেতু হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালামের ঈমান গ্রহণের ব্যাপারেও খাটে তাই হযরত সা’দ প্রাচীনদের অভ্যাস অনুসারে বলেছেন এটি আবদুল্লাহ ইবনে সালাম সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। এর অর্থ এ নয় যে, তিনি যখন ঈমান এনেছেন তখন এটি তাঁর সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। বরং এর অর্থ হলো, এ আয়াত তাঁর বেলায়ও হুবহু ঠিক। তাঁর ঈমান গ্রহণের ব্যাপারে এ আয়াত পুরোপুরি প্রযোজ্য।
বাহ্যত এই দ্বিতীয় মতটিই অধিক বিশুদ্ধ ও যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়। এরপর আরো একটি প্রশ্নের সমাধান দেয়া দরকার যে, সাক্ষী বলতে এখানে কাকে বুঝানো হয়েছে? যেসব মুফাসসির এই দ্বিতীয় মতটি গ্রহণ করেছেন তাদের কেউ কেউ বলেন, এর দ্বারা মূসা আলাইহিস সালামকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী বাক্যাংশ, “সে ঈমান এনেছে। কিন্তু তোমরা আত্মম্ভরিতায় ডুবে আছো।” এর এই ব্যাখ্যার সাথে কোন মিল নেই। মুফাসসির নিশাপুরী ও ইবনে কাসীর যে মত ব্যক্ত করেছেন সেটিই অধিক বিশুদ্ধ বলে মনে হয়। অর্থাৎ এখানে সাক্ষী অর্থ কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি নয়, বরং বনী ইসরাঈলদের যে কোন সাধারণ ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহর বাণীর প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, কুরআন তোমাদের সামনেই যে শিক্ষা পেশ করছে তা কোন অভিনব জিনিস নয়। পৃথিবীতে প্রথমবারের মত শুধুমাত্র তোমাদের সামনেই তা পেশ করা হয়নি যে, তোমরা ওজর পেশ করে বলবেঃ এ ধরণের কথা তো ইতিপূর্বে মানব জাতির কাছে আসেনি। তাই আমরা কী করে তা মানতে পারি। ইতিপূর্বেও এসব শিক্ষা এভাবেই অহীর মাধ্যমেই বণী ইসরাঈলদের একজন সাধারণ মানুষও তা মেনে নিয়েছিলো যে, অহীই হচ্ছে এসব শিক্ষা নাযিল হওয়ার মাধ্যম। তাই অহী এবং এই শিক্ষা দুর্বোধ্য জিনিস তোমরা সে দাবী করতে পার না। আসল কথা হলো, তোমাদের গর্ব, অহংকার এবং ভিত্তিহীন আত্মম্ভরিতা ঈমানের পথে অন্তরায়।