قُلْ يَـٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَـٰبِ لَسْتُمْ عَلَىٰ شَىْءٍ حَتَّىٰ تُقِيمُوا۟ ٱلتَّوْرَىٰةَ وَٱلْإِنجِيلَ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ ۗ وَلَيَزِيدَنَّ كَثِيرًۭا مِّنْهُم مَّآ أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ طُغْيَـٰنًۭا وَكُفْرًۭا ۖ فَلَا تَأْسَ عَلَى ٱلْقَوْمِ ٱلْكَـٰفِرِينَ
পরিষ্কার বলে দাও, “হে আহলি কিতাব! তোমরা কখনোই কোন মূল সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে না। যতক্ষণ না তোমরা তাওরাত, ইনজিল ও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে নাযিল করা অন্যান্য কিতাবগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করবে।” ৯৭ তোমার ওপর এই যে ফরমান নাযিল করা হয়েছে এটা অবশ্যি তাদের অনেকের গোয়ার্তুমী ও অবিশ্বাস আরো বাড়িয়ে দেবে। ৯৮ কিন্তু অস্বীকারকারীদের অবস্থার জন্য কোন দুঃখ করো না।
৯৭
তাওরাত ও ইনজীলকে প্রতিষ্ঠিত করার মানে হচ্ছে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করা এবং তাদেরকে নিজের জীবন বিধানে পরিণত করা। এ প্রসঙ্গে একথাটি ভালভাবে হৃদয়ংগম করে নিতে হবে যে, বাইবেলের পবিত্র পুস্তক সমষ্টিতে এক ধরনের বাণী আছে, যেগুলো ইহুদী ও খৃস্টান লেখকরা নিজেরাই রচনা করে লিখে দিয়েছেন আর এক ধরনের বাণী সেখানে আছে, যেগুলো আল্লাহর বাণী বা হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ও অন্যান্য পয়গম্বরের বাণী হিসেবে উদ্ধৃত হয়েছে এবং যেগুলোতে একথা সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ একথা বলেছেন বা অমুক নবী একথা বলেছেন। বাইবেলের এ বচনগুলোর মধ্য থেকে প্রথম ধরনের বচনগুলোকে আলাদা করে যদি কোন ব্যক্তি শুধুমাত্র দ্বিতীয় ধরনের বাণীগুলোর মধ্যে অনুসন্ধান চালান, তাহলে তিনি সহজেই দেখতে পাবেন সেগুলোর শিক্ষা ও কুরআনের শিক্ষার মধ্যে কোন উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নেই। অনুবাদক, অনুলেখক ও ব্যাখ্যাদাতাগণের হস্তক্ষেপ এবং কোথাও কোথাও ঐশী বর্ণনাকারীদের ভুলের কারণে এ দ্বিতীয় ধরনের বাণীগুলোও পুরোপুরি অবিকৃত নেই তবু প্রত্যেক ব্যক্তি নিঃসন্দেহে একথা অনুভব করবেন যে, কুরআন যে নির্ভেজাল তাওহীদের দাওয়াত দিয়ে চলেছে এগুলো মধ্যেও ঠিক সেই একই নির্ভেজাল তাওহীদের দাওয়াত দেয়া হয়েছে। কুরআন যে আকীদা বিশ্বাসের কথা উপস্থাপন করেছে এখানেও সেই একই আকীদা বিশ্বাস উপস্থাপিত হয়েছে। কুরআন যে জীবন পদ্ধতির দিকে পথনির্দেশ করেছে এখানেও সেই একই জীবন পদ্ধতির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাজেই ইহুদী ও খৃস্টানরা যদি তাদের ধর্মগ্রন্থে আল্লাহ ও নবীদের পক্ষ থেকে উদ্ধৃত প্রকৃত শিক্ষার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতো তাহলে নিঃসন্দেহে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাবকালে তাদেরকে একটি ন্যায়বাদী ও সত্যপন্থী দল হিসেবে পাওয়া যেতো। এক্ষেত্রে তারা কুরআনের মধ্যে সেই একই আলো দেখতে পেতো, যা পূর্ববর্তী কিতাবগুলোর মধ্যে পাওয়া যেতো। এ অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য করার জন্য তাদের ধর্ম পরিবর্তন করার আদতে কোন প্রশ্নই দেখা দিতো না। বরং যে পথে তারা চলে আসছিল সে পথের ধারাবাহিক পরিণতি হিসেবেই তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারী হয়ে সামনে অগ্রসর হতে পারতো।
৯৮
অর্থাৎ একথা শোনার পর তারা স্থির মস্তিষ্কে চিন্তাকরার ও যথার্থ সত্য হৃদয়ঙ্গম করার পরিবর্তে একগুঁয়েমী ও হঠকারিতার বশবর্তী হয়ে আরো বেশী কঠোরভাবে বিরোধিতা শুরু করে দেবে।