مَّنْ خَشِىَ ٱلرَّحْمَـٰنَ بِٱلْغَيْبِ وَجَآءَ بِقَلْبٍۢ مُّنِيبٍ
যে অদেখা দয়াময়কে ভয় করতো, ৪২ যে অনুরক্ত হৃদয় নিয়ে এসেছে। ৪৩
৪২
অর্থাৎ সে কোথাও রহমান বা পরম দয়ালু আল্লাহর দেখা পেতো না এবং নিজের ইন্দ্রিয়সমূহ দ্বারাও কোনভাবেই তাঁকে অনুভব করতে পারতো না। তা সত্ত্বেও তাঁর নাফরমানী করতে সে ভয় পেতো। অন্যান্য অনুভূত শক্তি এবং প্রকাশ্যে দৃষ্টিগোচর হয় এমন সব শক্তি ও সত্তার তুলনায় তার মনে অদেখা রহমানের ভয় অধিক প্রবল ছিল। তিনি ‘রহমান’ বা দয়ালু একথা জানা সত্ত্বেও তাঁর রহমতের ভরসায় সে গোনাহর কাজে লিপ্ত হয়নি, বরং সব সময়ই তাঁর অসন্তুষ্টিকে ভয় পেয়েছে। এভাবে আয়াতটি ঈমানদার ব্যক্তির দু’টি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক গুণের প্রতি ইঙ্গিত করে। একটি হচ্ছে, অনুভূত ও দৃষ্টিগোচর না হওয়া সত্ত্বেও সে আল্লাহকে ভয় করে। অপরটি হচ্ছে, সে আল্লাহর রহমত গুণটি সম্পর্কে ভালভাবে অবহিত হওয়া সত্ত্বেও গোনাহ করার দুঃসাহস করে না। এ দু’টি গুণই তাকে আল্লাহর কাছে মর্যাদার অধিকারী করে তোলে। তাছাড়াও এ আয়াতের মধ্যে আরো একটি সূক্ষ্ম বিষয়ও আছে যা ইমাম রাযী বর্ণনা করেছেন। বিষয়টি হচ্ছে, আরবী ভাষায় ভয় বুঝাতে خوف ও
خشيت এ দু’টি শব্দ ব্যবহৃত হয়। এ দু’টি শব্দের অর্থে একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান।
خوف শব্দটি সাধারণত এমন ভয় বুঝাতে ব্যবহৃত হয় যা কারো শক্তির সামনে নিজের দুর্বলতার অনুভূতির কারণে নিজের মধ্যে সৃষ্টি হয়। আর
خشيت বলা হয় এমন এমন ভীষণ ভয়কে যা করো বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা থেকে মানুষের মনে সৃষ্টি হয়। এখানে
خوف এর পরিবর্তে
خشيت শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এভাবে বুঝাতে চাওয়া হয়েছে যে, শুধু শাস্তির আশঙ্কায়ই মু’মিন বান্দার অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয় না। তার চেয়েও বড় জিনিস অর্থাৎ আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব ও মর্যাদার অনুভূতি সবসময় তার মনে এক ভয়ানক ভীতিভাব জাগিয়ে রাখে।
৪৩
মূল কথাটি হচ্ছে قَلْبٍ مُنِيْبٍ নিয়ে এসেছে।
منيب শব্দটির উৎপত্তি
انابت থেকে যার অর্থ একদিকে মুখ করা এবং বারবার সেদিকেই ফিরে যাওয়া। যেমন কম্পাসের কাঁটা সবসময় মেরুর দিকেই মুখে করে থাকে। আপনি তাকে যতই নাড়া চাড়া বা ঝাঁকুনি দেন না কেন তা ঘুরে ফিরে মেরুর দিকে চলে আসে। অতএব
قَلْبٍ مُنِيْبٍ অর্থ এমন হৃদয়-মন যা সব দিক থেকে এক আল্লাহর দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। অতঃপর সারা জীবন তার ওপরে যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন তাতে সে বার বার তার দিকেই ফিরে এসেছে। এ বিষয়টাকেই আমরা ‘অনুরক্ত মন” কথাটি দিয়ে ব্যক্ত করেছি। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর কাছে প্রকৃত সম্মানের অধিকারী সে ব্যক্তি যে শুধু মুখে নয় বরং পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে সরল মনে তাঁর একান্ত আপনজন হয়ে আসে।