আয়াত
৪১ ) আর শোনো যেদিন আহ্বানকারী (প্রত্যেক মানুষের) নিকট স্থান থেকে আহ্বান করবে, ৫২
وَٱسْتَمِعْ يَوْمَ يُنَادِ ٱلْمُنَادِ مِن مَّكَانٍ قَرِيبٍ ٤١
৪২ ) যেদিন সকলে হাশরের কোলাহল ঠিকমত শুনতে পাবে, ৫৩ সেদিনটি হবে কবর থেকে মৃতদের বেরুবার দিন।
يَوْمَ يَسْمَعُونَ ٱلصَّيْحَةَ بِٱلْحَقِّ ذَٰلِكَ يَوْمُ ٱلْخُرُوجِ ٤٢
৪৩ ) আমিই জীবন দান করি, আমিই মৃত্যু ঘটাই। এবং আমার কাছেই সবাইকে ফিরে আসতে হবে সেদিন---
إِنَّا نَحْنُ نُحْىِۦ وَنُمِيتُ وَإِلَيْنَا ٱلْمَصِيرُ ٤٣
৪৪ ) যেদিন পৃথিবী বিদীর্ণ হবে, এবং লোকেরা তার ভেতর থেকে বেরিয়ে জোর কদমে ছুটতে থাকবে, এরূপ হাশর সংঘটিত করা আমার নিকট খুবই সহজ। ৫৪
يَوْمَ تَشَقَّقُ ٱلْأَرْضُ عَنْهُمْ سِرَاعًا ذَٰلِكَ حَشْرٌ عَلَيْنَا يَسِيرٌ ٤٤
৪৫ ) হে নবী! ওরা যেসব কথা বলে, তা আমি ভালো করেই জানি, ৫৫ বস্তুত তাদের কাছ থেকে বলপ্রয়োগে আনুগত্য আদায় করা তোমার কাজ নয়। কাজেই তুমি এ কুরআন দ্বারা আমার হুশিয়ারীকে যারা ডরায়, তাদেরকে তুমি উপদেশ দাও। ৫৬
نَّحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَقُولُونَ وَمَآ أَنتَ عَلَيْهِم بِجَبَّارٍ فَذَكِّرْ بِٱلْقُرْءَانِ مَن يَخَافُ وَعِيدِ ٤٥
৫২.
অর্থাৎ যেখানেই যে ব্যক্তি মরে পড়ে থাকবে কিংবা পৃথিবীতে যেখানেই তার মৃত্যু সংঘটিত হয়েছিল সেখানেই তার কাছে আল্লাহর ঘোষকের এ আওয়াজ পৌঁছবে যে, উঠ এবং তোমার রবের কাছে হিসেব দেয়ার জন্য চলো। এ আওয়াজ হবে এমন যে, ভুপৃষ্ঠের আনাচে-কানাচে যেখানেই যে ব্যক্তি জীবিত হয়ে উঠবে সেখানেই সে মনে করবে, যে আহ্বানকারী নিকটেই কোথাও থেকে তাকে আহবান করেছে। একই সময়ে গোটা পৃথিবীর সব জায়গায় সমানভাবে এ আওয়াজ শোনা যাবে। এ থেকেও কিছুটা অনুমান করা যায় যে, আখিরাতের স্থান ও কাল বর্তমান আমাদের এ পৃথিবীর স্থান ও কালের তুলনায় কতটা পরিবর্তিত হবে এবং সেখানে কেমন সব শক্তি কি ধরনের আইনানুসারে তৎপর ও সক্রিয় থাকবে।
৫৩.
মূল আয়াতাংশ হচ্ছে يَسْمَعُونَ الصَّيْحَةَ بِالْحَقِّ । এর দু’টি অর্থ হতে পারে। একটি হচ্ছে, সমস্ত মানুষই মহাসত্য সম্পর্কিত আহবান শুনতে পাবে। অপর অর্থটি হচ্ছে হাশরের কলরব ঠিকমতই শুনতে পাবে। প্রথম অর্থ অনুসারে বক্তব্যের সারমর্ম দাঁড়ায় মানুষ নিজ কানে সেই মহাসত্যের আহবান শুনতে পাবে যা তারা পৃথিবীতে মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল না, যা অস্বীকার করতে তাদের ছিল চরম একগুঁয়েমী এবং যার সংবাদদাতা নবী-রসূলদের তারা বিদ্রূপ করতো। দ্বিতীয় অর্থ অনুসারে এর প্রতিপাদ্য বিষয় দাঁড়ায় এই যে, নিশ্চিতভাবেই তারা হাশরের কলরব-কোলাহল শুনবে, তারা নিজেরাই জানতে পারবে, এটা কোন কাল্পনিক বিষয় নয়, বরং প্রকৃতই হাশরের কলরব-কোলাহল। ইতিপূর্বে তাদেরকে যে হাশরের খবর দেয়া হয়েছিলো তা যে সত্যিই এসে হাজির হয়েছে এবং এ যে তারই শোরগোল উত্থিত হচ্ছে সে ব্যাপারে তাদের কোন সন্দেহই থাকবে না।
৫৪.
তিন নম্বর আয়াতে কাফেরদের যে কথা উদ্ধৃত করা হয়েছে এটা তারই জবাব। তারা বলতো, আমরা যখন মরে মাটিতে মিশে যাবো তখন আমাদেরকে আবার জীবিত করে উঠানো হবে তা কি করে হতে পারে। এভাবে পুনরুত্থান তো অসম্ভব ও অযৌক্তিক। তাদের এ বক্তব্যের জবাবে বলা হয়েছে, এ হাশর অর্থাৎ একই সময়ে আগের ও পরের সমস্ত মানুষকে জীবিত করে একত্রিত করা আমার জন্য একেবারেই সহজ। কোন ব্যক্তির মাটি কোথায় পড়ে আছে তা জানা আমার জন্য আদৌ কোন কঠিন ব্যাপার নয়। এসব বিক্ষিপ্ত অণু-পরমাণুর মধ্যে কোন্গুলো যায়েদের আর কোন্গুলো বকরের তা জানতেও আমার কোন কষ্ট হবে না। এসব অণু-পরমাণুকে আলাদাভাবে একত্রিত করে একেকজন মানুষের দেহ পুনরায় তৈরী করা এবং ঐ দেহ হুবহু আগের ব্যক্তিত্ব নতুনভাবে সৃষ্টি করে দেয়া আমার জন্য কোন শ্রমসাধ্য ব্যাপার নয়, বরং আমার একটি মাত্র ইঙ্গিতেই তৎক্ষণাৎ তা হতে পারে। আদমের সময় থেকে কিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে যত মানুষ সৃষ্টি হয়েছে আমার একটি মাত্র আদেশে তারা সবাই অতি সহজে সমবেত হতে পারে। তোমাদের অতি ক্ষুদ্র বুদ্ধি-বিবেক একে অসম্ভব মনে করলে মনে করুক। বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টার ক্ষমতার কাছে তা অসম্ভব নয়।
৫৫.
এ আয়াতাংশে যুগপৎ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য সান্ত্বনা এবং কাফেরদের জন্য হুমকি বিদ্যমান। নবীকে ﷺ উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে যে, এসব লোক তোমার বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা রটনা করছে মোটেই তার পরোয়া করো না। আমি সবকিছু জানি। তাদের সাথে বুঝা পড়া করা আমার কাজ। কাফেরদের হুঁশিয়ার করে দেয়া হচ্ছে যে, তোমরা আমার নবীর বিরুদ্ধে যেসব বিদ্রূপাত্মক উক্তি করছো সেজন্য তোমাদেরকে অনেক মূল্য দিতে হবে। আমি নিজে প্রতিটি কথা শুনেছি। তোমাদেরকে তার মাশুল দিতে হবে।
৫৬.
এর অর্থ এ নয় যে, নবী ﷺ জোর করে নিজের কথা মানুষকে মানাতে চাইতেন কিন্তু আল্লাহ তা’আলা তা থেকে তাঁকে বিরত রেখেছেন। প্রকৃতপক্ষে নবীকে ﷺ সম্বোধন করে কাফেরদের একথা শুনানো হচ্ছে। তাদেরকে বলা হচ্ছে, তোমাদের কাছে আমার নবীকে শক্তি প্রয়োগকারী করে পাঠানো হয়নি। তোমাদেরকে জোর করে মু’মিন বানানো তার কাজ নয়, তোমরা মানতে না চাইলেও তিনি তোমাদেরকে তা মানতে বাধ্য করবেন। তাঁর দায়িত্ব কেবল এতটুকু যে, সাবধান করে দিলে যারা সতর্ক হয়ে যাবে তিনি তাদেরকে কুরআন শুনিয়ে প্রকৃত সত্য বুঝিয়ে দেবেন। এরপরও যদি তোমরা না মানো তাহলে নবী তোমাদের সাথে বুঝাপড়া করবেন না, বরং আমি নিজে তোমাদের সাথে বুঝাপড়া করবো।