إِنَّكُمْ لَفِى قَوْلٍۢ مُّخْتَلِفٍۢ
(আখেরাত সম্পর্কে) তোমাদের কথা পরস্পর ভিন্ন। ৬
৬
এ ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যের ব্যাপারে বিভিন্ন আকৃতির আসমানের শপথ করা হয়েছে উপমা হিসেবে। অর্থাৎ আসমানের মেঘমালা ও তারকাপুঞ্জের আকৃতি যেমন ভিন্ন এবং তাদের মধ্যে কোন সাদৃশ্য ও মিল দেখা যায় না, তোমরাও আখেরাত সম্পর্কে অনুরূপ রকমারি মতামত ও বক্তব্য পেশ করছো এবং তোমাদের একজনের কথা আরেকজনের থেকে ভিন্ন। তোমাদের কেউ বলে এ পৃথিবী অনাদি ও চিরস্থায়ী। তাই কোন রকম কিয়ামত সংঘটিত হতে পারে না। কেউ বলে, এ ব্যবস্থা ধ্বংসশীল এবং এক সময় এটা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তবে মানুষসহ যেসব জিনিস ধ্বংস হয়ে গিয়েছে তার পুনরুজ্জীবন সম্ভব নয়। কেউ পুনরুজ্জীবনকে সম্ভব বলে মনে করে কিন্তু তার আকীদা-বিশ্বাস এই যে, মানুষ তার ভাল কাজের ফলাফল ভোগের জন্য এ পৃথিবীতে বারবার জন্ম নেয়। কেউ জান্নাত এবং জাহান্নামও বিশ্বাস করে, কিন্তু তার সাথে আবার জন্মান্তরবাদেরও সমন্বয় সাধন করে অর্থাৎ তার ধারণা হচ্ছে গোনাহগার ব্যক্তি জাহান্নামেও শাস্তি ভোগ করে এবং এ পৃথিবীতেও শাস্তি পাওয়ার জন্য বারবার জন্ম লাভ করতে থাকে। কেউ বলে, দুনিয়ার এ জীবনটাই তো একটা শাস্তি। মানবাত্মার যতদিন পর্যন্ত বন্তু জীবনের সাথে সম্পর্ক থাকে ততদিন পর্যন্ত মরে পুনরায় এ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করতে থাকে। তার প্রকৃত মুক্তি (নির্বান লাভ) হচ্ছে, অস্তিত্বহীন হয়ে যাওয়। কেউ আখেরাত এবং জান্নাত ও জাহান্নাম বিশ্বাস করে ঠিকই, কিন্তু বলে, আল্লাহ তাঁর একমাত্র পুত্রকে ক্রুশে মৃত্যু দান করে মানুষের সর্বকালের গোনাহর কাফফারা আদায় করে দিয়েছেন। মানুষ আল্লাহর সেই পুত্রের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে নিজের কুকর্মের মন্দ পরিণতি থেকে রক্ষা পেয়ে যাবে। কিছু লোক আছে যারা আখেরাত এবং শাস্তি ও পুরস্কারে বিশ্বাস করেও এমন কিছু বুযুর্গ ব্যক্তিকে সুপারিশকারী মনে করে নেয়---তাদের ধারণায় তারা আল্লাহর এতই প্রিয় বা আল্লাহর কাছে এমন ক্ষমতার অধিকারী যে, যারাই তাদের ভক্ত হয়ে যাবে তারা পৃথিবীতে সবকিছু করেও শাস্তি থেকে বেঁচে যাবে। এসব সম্মানিত সত্তা সম্পর্কে এ আকীদা পোষণকারীদের মধ্যে মতের মিল নেই। প্রত্যেক গোষ্ঠিই তাদের নিজেদের আলাদা আলাদা সুপারিশকারী বানিয়ে রেখেছে। মতের এ ভিন্নতাই প্রমাণ করে যে, অহী ও রিসালাতের তোয়াক্কা না করে মানুষ তার নিজের এবং এ পৃথিবীর পরিণতি সম্পর্কে যখনই কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তা অজ্ঞতা প্রসূত হয়েছে। অন্যথায়, মানুষের কাছে সত্যিই যদি এ ব্যাপারে সরাসরি জ্ঞান লাভের কোন মাধ্যম থাকতো তাহলে এত ভিন্ন ভিন্ন ও পরস্পর বিরোধী আকীদা-বিশ্বাস সৃষ্টি হতো না।