মূল আয়াত হচ্ছে,
فَأَوْحَى إِلَى عَبْدِهِ مَا أَوْحَى । এ আয়াতাংশটির দু’টি অনুবাদ সম্ভব। একটি হচ্ছে, তিনি আল্লাহর বান্দার প্রতি যা কিছু অহী নাযিল করার ছিল তা করলেন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তিনি অহী করলেন নিজের বান্দার ওপর যা কিছু অহী করার ছিল। প্রথম অনুবাদ করা হলে তার অর্থ হবে জিবরাঈল আল্লাহর বান্দাকে অর্থাৎ রসূল ﷺ কে অহী দিলেন যা তাঁকে অহী দেয়ার ছিল। দ্বিতীয় অনুবাদটি করলে তার অর্থ হবে আল্লাহ তা’আলা জিবরাঈলের মাধ্যমে তাঁর বান্দাহকে অহী দিলেন যা অহী দেয়ার ছিল। তাফসীরকারগণ এ দু’টি অর্থই বর্ণনা করেছেন। কিন্তু প্রথম অর্থটাই পূর্বাপর বিষয়ের সাথে অধিক সামঞ্জস্যশীল। হযরত হাসান বাসরী এবং ইবনে যায়েদ থেকে এ অর্থটাই বর্ণিত হয়েছে এক্ষেত্রে প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে যে,
عَبدُهُ শব্দের
ه সর্বনাম
اوحى ক্রিয়ার কর্তার প্রতি ইঙ্গিত করার পরিবর্তে আল্লাহর প্রতি কিভাবে ইঙ্গিত করবে? কারণ সূরার শুরু থেকে এ পর্যন্ত কোথাও আদৌ আল্লাহর নাম উল্লেখিত হয়নি। এর জবাব হলো, যেখানে বক্তব্যের পূর্ব প্রসঙ্গ দ্বারা সর্বনামের উদ্দিষ্ট বিশেষ ব্যক্তির প্রতি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় সেখানে পূর্বে উল্লেখ করা হোক বা না হোক সর্বনাম দ্বারা আপনা থেকেই সে ব্যক্তিকে বুঝাবো। কুরআন মজীদে এর অনেকগুলো দৃষ্টান্ত আছে। যেমনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ “আমি কদরের রাতে তা নাযিল করেছি।” এখানে কোথাও কুরআনের উল্লেখ মোটেই করা হয়নি। কিন্তু বক্তব্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে,
ه সর্বনাম দ্বারা কুরআনকেই বুঝানো হয়েছে। অন্য এক জায়গায় বলা হয়েছেঃ
وَلَوْ يُؤَاخِذُ اللَّهُ النَّاسَ بِمَا كَسَبُوا مَا تَرَكَ عَلَى ظَهْرِهَا مِنْ دَابَّةٍ
“আল্লাহ্ যদি মানুষকে তাদের কৃতকর্মের জন্য পাকড়াও করতে শুরু করেন তাহলে তার পৃষ্ঠে জীবন্ত কিছুই রাখবেন না।”
এখানে আগে বা পরে পৃথিবীর কোন উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু কথার ধরন থেকে আপনিই প্রকাশ পায় যে, তার পৃষ্ঠ অর্থ ভূ-পৃষ্ঠ। সূরা ইয়াসীনে বলা হয়েছে وَمَا عَلَّمْنَاهُ الشِّعْرَ وَمَا يَنْبَغِي لَهُ “আমি তাকে কবিতা শিক্ষা দেইনি। আর কবিতা তার জন্য শোভাও পায় না।” এখানে পূর্বে বা পরে কোথাও রসূলুল্লাহ্ ﷺ এর কোন উল্লেখ নেই। কিন্তু কথার ধরন থেকে প্রকাশ পায় যে, সর্বনামগুলো তাঁর প্রতি ইঙ্গিত করেছে। সূরা আর-রহমানে বলা হয়েছেঃ
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ “তার ওপরে যা আছে সবই ধ্বংস হয়ে যাবে।” এখানে আগে ও পরে পৃথিবী পৃষ্ঠের কোন উল্লেখ নেই। কিন্তু বাচনভঙ্গি দ্বারা বুঝা যায় عليها এর সর্বনাম ها দ্বারা সেদিনকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
সূরা ওয়াকিয়ায় বলা হয়েছেঃ
إِنَّا أَنْشَأْنَاهُنَّ إِنْشَاءً “আমি তাদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করবো। আশে পাশে এমন কোন বস্তু নেই যার প্রতি هُنّ শব্দটি দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে মনে করা যেতে পারে। কথার ভঙ্গি থেকে প্রকাশ পায় যে, এর দ্বারা জান্নাতের নারীদের বুঝানো হয়েছে। জিবরাঈল নিজের বান্দাকে অহী দিলেন اَوْحَى اِلَى عَبْدِهِ আয়াতাংশের অর্থ যেহেতু এরকম হতে পারে না। তাই “জিবরাঈল (আঃ) আল্লাহর বান্দাকে অহী দিলেন কিংবা আল্লাহ জিবরাঈলের মাধ্যমে তাঁর বান্দাকে অহী দিলেন।” অনিবার্যরূপে এই অর্থই গ্রহণ করতে হবে।