লাতের আস্তানা ছিল তায়েফে। বনী সাকীফ গোত্র তার এত ভক্ত ছিল যে, আবরাহা যে সময় হস্তী বাহিনী নিয়ে কা’বা ঘর ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে মক্কার ওপর আক্রমণ করতে যাচ্ছিল তখন তারা শুধু তাদের এ উপাস্যের আস্তানা রক্ষা করার জন্য সে অত্যাচারীকে মক্কার রাস্তা দেখানোর জন্য পথ প্রদর্শক সরবরাহ করেছিল যাতে সে লাতের কোন ক্ষতি না করে। অথচ কা’বা যে আল্লাহর ঘর গোটা আরববাসীর মত সাকীফ গোত্রও একথা বিশ্বাস করতো। লাত শব্দের অর্থ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতানৈক্য আছে। ইবনে জারীর তাবারীর জ্ঞানগর্ভ বিশ্লেষণ হচ্ছে এ শব্দটি আল্লাহ শব্দের স্ত্রীলিংগ। মূল শব্দটি ছিল اللهة । এটিকেই পরিবর্তন করে اللات করা হয়েছে। যামাখশারীর মতে- لوى يلوى থেকে শব্দটির উৎপত্তি। এর অর্থ ঘুরা বা কারো প্রতি ঝুঁকে পড়া। মুশরিকরা যেহেতু ইবাদতের জন্য তার প্রতি মনযোগী হতো, তার সামনে ঝুঁকতো এবং তার তাওয়াফ করতো তাই তাকে ‘লাত’ আখ্যা দেয়া শুরু হলো। ইবনে আব্বাস نا বর্ণটিতে “তাশদীদ” প্রয়োগ করে لات পড়তেন এবং لت بلت থেকে এর উৎপত্তি হয়েছে বলতেন। এর অর্থ মন্থন করা বা লেপন করা। ইবনে আব্বাস ও মুজাহিদ বর্ণনা করেছেন যে, মূলত সে ছিল একজন মানুষ, যে তায়েফের সন্নিকটে এক কঙ্করময় ভূমিতে বাস করতো এবং হজ্জের উদ্দেশ্যে গমনকারীদের ছাতু ও অন্যান্য খাদ্য খাওয়াতো। সে মারা গেলে লোকেরা ঐ কঙ্করময় ভূমিতে তার নামে একটা আস্তানা গড়ে তোলে এবং তার উপাসনা করতে শুরু করে। কিন্তু লাতের এ ব্যাখ্যা ইবনে আব্বাস ও মুজাহিদের মত সম্মানিত ব্যক্তিদের থেকে বর্ণিত হওয়া সত্ত্বেও দু’টি কারণে গ্রহণযোগ্য নয়। একটি কারণ হলো একে لات লাত বলা হয়েছে لات “লাত্তা” বলা হয়নি। অপর কারণটি হলো, কুরআন মজীদে তিনজনকেই দেবী বলে উল্লেখ করেছে কিন্তু বর্ণিত হাদীস অনুসারে সে পুরুষ ছিল নারী নয়।
عزى উয্যা শব্দটির উৎপত্তি عزت শব্দ থেকে। এর অর্থ সম্মানিতা। এটা ছিল কুরাইশদের বিশেষ দেবী। এর আস্তানা ছিল মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী “নাখলা” উপত্যকার “হুরাদ” নামক স্থানে (নাখলার অবস্থান জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, আল-আহকাফ, টীকা-৩৩) বনী হাশেমের মিত্র বনী শায়বান গোত্রের লোক এর প্রতিবেশী ছিল। কুরাইশ এবং অন্যান্য গোত্রের লোকজন এর যিয়ারতের জন্য আসতো, এর উদ্দেশ্যে মানত করতো এবং বলি দান করতো। কা’বার মত এ স্থানটিতেও কুরবানী বা বলির জন্তু নিয়ে যাওয়া হতো এবং এটিকে সমস্ত মূর্তির চেয়ে অধিক সম্মান দেয়া হতো। ইবনে হিশাম বর্ণনা করেছেন আবু উহায়হার মৃত্যু ঘনিয়ে আসলে আবু লাহাব তাকে রোগ শয্যায় দেখতে গিয়ে দেখলো সে কাঁদছে। আবু লাহাব জিজ্ঞেস করলোঃ আবু উহায়হা, তুমি কাঁদছ কেন? তুমি কি মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছো? মৃত্যু তো সবারই হবে। সে বললোঃ আল্লাহর শপথ, আমি মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয়ে কাঁদছি না। আমার মৃত্যুর পর উয্যার পূজার কি উপায় হবে সে দুশ্চিন্তা আমাকে নিশেষ করে দিচ্ছে। আবু লাহাব বললোঃ তোমার জিবদ্দশায় ও তোমার কারণে উয্যার পূজা করা হতো না আর তোমার মৃত্যুর পরে তাকে পরিত্যাগ করাও হবে না। আবু উহায়হা বললোঃ এখন আমি নিশ্চিন্ত হলাম যে, আমার মৃত্যুর পরে কেউ অবশ্যই আমার স্থান পূরণ করবে।
মানাতের আস্তানা ছিল মক্কা ও মদীনার মাঝে লোহিত সাগরের তীরবর্তী কুদাইদ নামক স্থানে। বিশেষ করে খুযা’আ, আওস এবং খাযরাজ গোত্রের লোকেরা এর খুব ভক্ত ছিল। তার হজ্জ ও তাওয়াফ করা হতো এবং তার উদ্দেশ্যে মানতের বলি দেয়া হতো। হজ্জের মওসূমে হাজীরা বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ এবং আরাফাতের ও মিনার অবস্থানের পর সেখান থেকে মানতের যিয়ারত তথা দর্শনলাভের জন্য লাব্বায়কা লাব্বায়কা ধ্বনি দিতে শুরু করতো। যারা এ দ্বিতীয় হজ্জের নিয়ত করতো তারা সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাঈ করতো না।