يَوْمَ تَرَى ٱلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَـٰتِ يَسْعَىٰ نُورُهُم بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَـٰنِهِم بُشْرَىٰكُمُ ٱلْيَوْمَ جَنَّـٰتٌۭ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَـٰرُ خَـٰلِدِينَ فِيهَا ۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلْفَوْزُ ٱلْعَظِيمُ
যেদিন তোমরা ঈমানদার নারী ও পুরুষদের দেখবে, তাদের ‘নূর’ তাদের সামনে ও ডান দিকে দৌড়াচ্ছে। ১৭ (তাদেরকে বলা হবে) “আজ তোমাদের জন্য সুসংবাদ।” জান্নাতসমূহ থাকবে যার পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে। যেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই বড় সফলতা।
১৭
এ আয়াতটি এবং পরবর্তী আয়াতসমূহ থেকে জানা যায় হাশরের ময়দানে শুধুমাত্র নেককার ঈমানদারদেরই ‘নূর’ থাকবে। কাফের, মুনাফিক, ফাসেক ও ফাজেররা দুনিয়াতে যেমন অন্ধকারে পথ হারিয়ে হাতড়িয়ে মরেছে সেখানেও তেমনি অন্ধকারে হাতড়িয়ে মরতে থাকবে। যেখানে আলো যেটুকু হবে তা সৎ আকীদা-বিশ্বাস ও সৎ আমলের। ঈমানের সততা এবং সৎচরিত্র ও কর্মের পবিত্রতাই ‘নূরে’ রূপান্তরিত হবে যার কারণে সৎ লোকদের ব্যক্তিত্ব ঝলমলিয়ে উঠবে। যার কর্ম যতটা উজ্জল হবে তার ব্যক্তিসত্তার আলোক রশ্মিও তত বেশী তীব্র হবে। সে যখন হাশরের ময়দান থেকে জান্নাতের দিকে যাত্রা করবে তখন তার ‘নূর’ বা আলো তার আগে আগে ছুটতে থাকবে। এর সর্বোত্তম ব্যাখ্যা হচ্ছে কাতাদা বর্ণিত একটি ‘মুরসাল’ হাদীস। উক্ত হাদীসে তিনি বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ “কারো কারো ‘নূর’ এত তীব্র হবে যে, মদীনা থেকে “আদন” এর সম পরিমাণ দূরত্ব পর্যন্ত পৌঁছতে থাকবে। তাছাড়া কারো ‘নূর’ পৌঁছবে মদীনা থেকে সান’আ পর্যন্ত কারো তার চেয়েও কম এমনকি এমন মু’মিন থাকবে যার নূর তার পায়ের তলা থেকে সামনে যাবে না” (ইবনে জারীর)। অন্য কথায় যার মাধ্যমে পৃথিবীর যত বেশী কল্যাণ হবে তার ‘নূর’ তত বেশী উজ্জ্বল হবে এবং পৃথিবীর যেসব স্থানে তার কল্যাণ পৌঁছবে হাশরের ময়দানেও তার নূরের আলো ততটা দূরত্ব পর্যন্ত দৌড়াতে থাকবে।
এখানে একটি প্রশ্ন মানুষের মনে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে পারে। প্রশ্নটি হচ্ছে, নূর বা আলোক রশ্মির আগে আগে দৌড়ানোর ব্যাপারটি বোধগম্য হয়। কিন্তু শুধু ডান পাশে নূর দৌড়ানোর অর্থ কি? তবে কি তাদের বাঁ দিকে অন্ধকার থাকবে? এ প্রশ্নের জবাব হচ্ছে, কেউ যদি তার ডান হাতে আলো নিয়ে পথ চলতে থাকে তাহলে তার বাঁ দিকটাও কিন্তু আলোকিত হবে। অথচ বাস্তব ঘটনা এই যে, আলো আছে তার ডান হাতে। হযরত আবু যার ও আবুদ দারদা কর্তৃক বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদীস থেকে এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। নবী (সা.) বলেছেনঃ
اعرفهم بنورهم الذى يسعى بين ايديهم وعن ايمانهم وعن شمائلهم-
“আমি সেখানে আমার উম্মতের নেককার লোকদের তাদের নূরের সাহায্যে চিনতে পারবো---যে নূর তাদের সামনে ডানে ও বাঁয়ে দৌড়াতে থাকবে” (হাকেম, ইবনে আবী হাতেম, ইবনে মারদুইয়া)।