ذَٰلِكَ بِأَنَّهُۥ كَانَت تَّأْتِيهِمْ رُسُلُهُم بِٱلْبَيِّنَـٰتِ فَقَالُوٓا۟ أَبَشَرٌۭ يَهْدُونَنَا فَكَفَرُوا۟ وَتَوَلَّوا۟ ۚ وَّٱسْتَغْنَى ٱللَّهُ ۚ وَٱللَّهُ غَنِىٌّ حَمِيدٌۭ
তারা এরূপ পরিণতির সম্মুখীন হয়েছে এ কারণে যে, তাদের কাছে যেসব রসূল এসেছেন তাঁরা স্পষ্ট দলীল-প্রমাণ নিয়ে তাদের কাছে এসেছিলেন। ১১ কিন্তু তারা বলেছিলঃ মানুষ কি আমাদের হিদায়াত দান করবে? ১২ এভাবে তারা মানতে অস্বীকৃতি জানালো এবং মুখ ফিরিয়ে নিল। তখন আল্লাহও তাদের তোয়াক্কা করলেন না। আল্লাহ তো আদৌ কারো মুখাপেক্ষীই নন। তিনি আপন সত্তায় প্রশংসিত। ১৩
১১
মূল আয়াতে ‘বাইয়েনাত’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দটির অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। আরবী ভাষায় بين বলা হয় এমন জিনিসকে যা প্রকাশ্য ও স্পষ্ট। নবী-রসূলগণ بينات
আসতেন এ কথার অর্থ প্রথমত এই যে, তাঁরা এমনসব স্পষ্ট প্রমাণ ও নিদর্শন নিয়ে আসতেন যা সরাসরি প্রমাণ করতো, তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট। দ্বিতীয়ত, তাঁরা যেসব কথা পেশ করতেন তা খুবই যুক্তিসঙ্গতভাবে ও উজ্জ্বল দলীল-প্রমাণাদিসহ পেশ করতেন। তৃতীয়ত, তাঁদের শিক্ষায় কোন অস্পষ্টতা ছিল না, বরং হক কি এবং বাতিল কি, জায়েজ কি এবং নাজায়েয কি এবং কোন্ পথে মানুষের চলা উচিত আর কোন্ পথে চলা উচিত নয় তা অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় তাঁরা বলে দিতেন।
১২
এটা ছিল তাদের ধ্বংসের প্রাথমিক ও মূল কারণ। স্রষ্টা কর্তৃক সঠিক জ্ঞান দেয়া ছাড়া মানুষের পক্ষে দুনিয়ার সঠিক কর্মপন্থা বেছে নেয়া সম্ভব ছিল না। আর স্রষ্টার পক্ষ থেকে মানুষের মধ্যে থেকে কিছু সংখ্যক লোককে জ্ঞান দান করে অন্যদের কাছে তা পৌঁছানোর দায়িত্ব অর্পণ করা ছাড়া মানুষকে জ্ঞান দানের আর কোন বাস্তব পন্থাও হতে পারতো না। এ উদ্দেশ্যেই তিনি بينات সব নবী-রসূলদের পাঠিয়েছেন যাতে তাঁদের সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করার যুক্তিসঙ্গত কোন কারণ মানুষের কাছে না থাকে। কিন্তু মানুষ আল্লাহর রসূল হতে পারে এ কথা তারা আদৌ মানতে রাজী হলো না বরং অস্বীকৃতি জানিয়ে বসলো। এরপর তাদের হিদায়াত পাওয়ার আর কোন উপায় রইল না। (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা ইয়াসীন, টীকা ১১)। এক্ষেত্রে পথভ্রষ্ট মানুষদের মূর্খতা ও জ্ঞানহীনতার যে বিস্ময়কর বিষয়টি আমাদের কাছে ধরা পড়ে তা হলো, মানুষের দিকনির্দেশনা মেনে নিতে তো তারা কোন সময়ই দ্বিধা করেনি। এমন কি মানুষের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করেই তারাই কাঠ ও পাথরের মূর্তিকে উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে, এই মানুষকেই খোদা, খোদার অবতার এবং খোদার পুত্র বলেও স্বীকার করেছে। আর পথভ্রষ্ট নেতাদের অন্ধ আনুগত্য করতে গিয়ে এমন সব অদ্ভূত পথ ও পন্থা গ্রহণ করেছে যা মানুষের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও নৈতিকতাকে উলট-পালট করে দিয়েছে। কিন্তু আল্লাহর রসূল যখন তাদের কাছে সত্য ও ন্যায় নিয়ে এসেছেন এবং সকল ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে তাদের কাছে নির্ভেজাল সত্য পেশ করেছেন তখন তারা বলেছেঃ “আপনি তো মানুষ। আর মানুষ হয়ে আমাদের হিদায়াত দিবেন কি করে?” এর মানে হলো মানুষ যদি পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত করে তাহলে তাকে সাদরে গ্রহণ করা হবে। কিন্তু যদি সত্য, সঠিক ও ন্যায়ের পথ দেখায় তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
১৩
অর্থাৎ তারা যখন আল্লাহর দেয়া হিদায়াতের পরোয়া করলো না তখন তারা গোমরাহীর কোন্ গহ্বরে পতিত হতে যাচ্ছে, আল্লাহও তার পরোয়া করলেন না। কোন ব্যাপারেই আল্লাহ তাদের কাছে ঠেকা ছিলেন না যে, তারা তাঁকে খোদা হিসেবে মানলে তবেই তিনি খোদা থাকবেন অন্যথায় তাঁর কর্তৃত্বের আসন হাত ছাড়া হয়ে যাবে। তিনি তাদের ইবাদাত-বন্দেগীরও মুখাপেক্ষী নন কিংবা প্রশংসা ও স্তব-স্তুতিরও মুখাপেক্ষী নন। তাদের নিজেদের কল্যাণের জন্যই তিনি তাদেরকে সত্য ও সঠিক পথ দেখাতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে আল্লাহও তাদের প্রতি বিমুখ হয়ে গেলেন। এরপর আল্লাহ তাদেরকে না হিদায়াত দিয়েছেন, না রক্ষা করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, না তাদেরকে ধ্বংসের মুখে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন এবং না নিজেদের ওপর ধ্বংস ডেকে আনা থেকে বাঁধা দিয়েছেন। কারণ তারা নিজেরাই তাঁর হিদায়াত ও বন্ধুত্ব লাভের আকাঙ্খী ছিল না।