فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمْسِكُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ أَوْ فَارِقُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍۢ وَأَشْهِدُوا۟ ذَوَىْ عَدْلٍۢ مِّنكُمْ وَأَقِيمُوا۟ ٱلشَّهَـٰدَةَ لِلَّهِ ۚ ذَٰلِكُمْ يُوعَظُ بِهِۦ مَن كَانَ يُؤْمِنُ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْـَٔاخِرِ ۚ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجْعَل لَّهُۥ مَخْرَجًۭا
এরপর তারা যখন তাদের (ইদ্দতের) সময়ের সমাপ্তির পর্যায়ে পৌঁছবে তখন হয় তাদেরকে ভালভাবে (বিবাহ বন্ধনে) আবদ্ধ রাখো নয় ভালভাবেই তাদের থেকে আলাদা হয়ে যাও। ৬ এমন দুই ব্যক্তিকে সাক্ষী বানাও তোমাদের মধ্যে যারা ন্যায়বান। ৭ হে সাক্ষীরা, আল্লাহর জন্য সঠিকভাবে সাক্ষ্য দাও। যারা আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের প্রতি ঈমান পোষণ করে ৮ তাদের জন্য উপদেশ হিসেবে এসব কথা বলা হচ্ছে। যে ব্যক্তিই আল্লাহকে ভয় করে চলবে আল্লাহ তার জন্য কঠিন অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সৃষ্টি করে দেবেন। ৯
৬
অর্থাৎ এক অথবা দুই তালাক দেয়ার ক্ষেত্রে স্ত্রীকে দাম্পত্য বন্ধনে রাখবে কি রাখবে না সে বিষয়ে ‘ইদ্দতকাল’ শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো। যদি রাখতে চাও তাহলে সদাচরণের উদ্দেশ্যেই রাখো। এ উদ্দেশ্যে রাখবে না যে, তাকে জ্বালাতন ও উত্যক্ত করার জন্য ‘রুজু’ করবে তারপর আবার তালাক দিয়ে তার ইদ্দতকালকে দীর্ঘায়িত করতে থাকবে। আর যদি বিদায় দিতে হয় তাহলে সৎ ও ভাল মানুষের মতো কোন প্রকার ঝগড়াঝাঁটি ছাড়াই বিদায় দিয়ে দাও, মোহরানা বা মোহরানার আংশিক যদি পাওনা থাকে তা পরিশোধ করে দাও এবং সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু না কিছু মুতআ’ (কিছু ব্যবহার্য সামগ্রী) হিসেবে দাও। সূরা বাকারার ২৪১ আয়াতে এ বিষয়েই বলা হয়েছে। (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, আল আহযাব, টীকা ৮৬)।
৭
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ এর অর্থ তালাক এবং ‘রুজু’ উভয় বিষয়েই সাক্ষী রাখা। (ইবনে জারীর) হযরত ইমরান ইবনে হুসাইনকে জিজ্ঞেস করা হলো যে, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পরে ‘রুজু’ করেছে। কিন্তু সে তালাক ও ‘রুজু’ করা কোনটির ব্যাপারেই কাউকে সাক্ষী বানায়নি। তিনি জবাব দিলেনঃ তুমি তালাকও দিয়েছো সুন্নাতের পরিপন্থী পন্থায় এবং ‘রুজু’ও করেছো সুন্নাতের পরিপন্থী পন্থায়। তালাক দেয়া এবং ‘রুজু’ দু’টি ক্ষেত্রেই সাক্ষী রাখো এবং ভবিষ্যতে এরূপ কাজ আর করবে না। (আবু দাউদ, ইবনে মাজা) কিন্তু চার মাযহাবের ফিকাহবিদগণ এ ব্যাপারে একমত যে, তালাক দেয়া ‘রুজু করা’ এবং বিচ্ছেদের ব্যাপারে সাক্ষী রাখা এসব কাজের শুদ্ধতার জন্য শর্ত নয়। অর্থাৎ সাক্ষী না রাখলে তালাক কার্যকর হবে না এবং রুজু ও বিচ্ছেদও হবে না এমনটি নয়। বরং সতর্কতার জন্য এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যাতে উভয়ের কেউ-ই পরে কোন ঘটনা অস্বীকার করতে না পারে, ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি হলে সহজেই তার ফায়সালা দেয়া যায় এবং সংশয় ও সন্দেহের পথ বন্ধ করা যায়। এ নির্দেশটি হুবহু وَأَشْهِدُوا إِذَا تَبَايَعْتُمْ “তোমরা যখন পরস্পর ক্রয়-বিক্রয় করবে তখন সাক্ষী রাখবে” (আল বাকারাহ, ২৮২) এ আয়াতে বর্ণিত নির্দেশের মতো। এর নির্দেশের অর্থ এ নয় যে, ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে সাক্ষী রাখা ফরয এবং সাক্ষী না রাখলে ক্রয়-বিক্রয় বৈধ ও সঠিক হবে না। বরং এটি একটি বিজ্ঞোচিত উপদেশ, বিভিন্ন রকমের ঝগড়া-বিবাদ ও বিরোধের পথ বন্ধ করার জন্য এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশ অনুসারে কাজ করার মধ্যেই কল্যাণ নিহিত আছে। অনুরূপ তালাক দেয়া এবং ‘রুজু’ করার ক্ষেত্রেও সঠিক কথা হলো, এর প্রতিটি কাজ সাক্ষী ছাড়া আইনগত বৈধতা লাভ করে। কিন্তু সাবধানতার দাবী হলো, যে কাজই করা হোক না কেন তা করার সময় বা তার পরে দু’জন ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিকে সাক্ষী বানাতে হবে।
৮
এ কথা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে যে, ওপরে যেসব নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা নসীহত ও উপদেশ মাত্র, এর আইনগত কোন মর্যাদা নেই। কেউ যদি সুন্নাতের পরিপন্থী পন্থায় তালাক দিয়ে ফেলে, ইদ্দতের হিসেব সংরক্ষণ না করে, স্ত্রীকে যুক্তিগ্রাহ্য কোন কারণ ছাড়া বাড়ি থেকে বের করে দেয়, ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে রুজু করলে স্ত্রীকে জ্বালাতন ও উত্যক্ত করার জন্য তা করে, বিদায় দিলে ঝগড়া-বিবাদ করে বিদায় দেয় এবং তালাক দেয়া রুজু করা ও বিচ্ছেদ ঘটানো কোন ব্যাপারেই সাক্ষী না রাখে তাহলে তালাক দেয়া, রুজু করা এবং বিচ্ছেদের আইনগত ফলাফলের কোন পার্থক্য হবে না। তবে আল্লাহ তা’আলার উপদেশের পরিপন্থী কাজ করা থেকে প্রমাণ হবে যে, তার মনে আল্লাহ ও আখেরাত সম্পর্কে সঠিক ঈমান নেই। তাই সে এমন কর্মপন্থা অনুসরণ করেছে যা একজন সাচ্চা মু’মিনের পক্ষে করা উচিত নয়।
৯
পূর্বের বক্তব্য থেকে এ কথা বুঝা যায় যে, আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করে কাজ করার অর্থ এখানে সুন্নাত অনুসারে তালাক দেয়া, ঠিকমত ইদ্দতের হিসেব রাখা, স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে না দেয়া, ইদ্দতের শেষ পর্যায়ে যদি স্ত্রীকে রাখতে হয় তাহলে মিলেমিশে থাকা ও সদাচরণের নিয়তে রুজু করা, আর বিচ্ছিন্ন হতে হলে ভাল ও সৎ মানুষের মতো তাকে বিদায় করে দেয়া এবং তালাক দেয়া রুজু করা বা বিচ্ছেদ ঘটনো যাই হোক না কেন সে বিষয়ে দু’জন ন্যায়বান লোককে সাক্ষী রাখা। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলার বাণী হলো, যে ব্যক্তি এভাবে তাকওয়া অবলম্বন করে কাজ করবে তার জন্য আমি কোন না কোন مخرج (অর্থাৎ জটিলতা ও বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার উপায়) করে দেবো। এভাবে আপনা থেকেই এর অর্থ দাঁড়ায় এই যে, যে ব্যক্তি এসব ব্যাপারে তাকওয়া বা আল্লাহকে ভয় করে কাজ করবে না সে নিজেই তার জন্য এমন সব সমস্যা ও জটিলতা সৃষ্টি করে নেবে যা থেকে বাঁচার কোন পথ খুঁজে পাবে না।
এ কথাটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে স্পষ্ট বুঝা যায়, যেসব লোকের মতে বেদয়াতী তালাক আদৌ কার্যকর হয় না এবং যারা এক সাথে একই তুহুরে দেয়া তিন তালাককে এক তালাক বলে গণ্য করেন তাদের মতটি সঠিক নয়। কারণ, বেদয়াতী তালাক যদি কার্যকরই না হয় তাহলে মোটেই কোন জটিলতা সৃষ্টি হয় না যা থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন উপায়ের প্রয়োজন হতে পারে। আর একসাথে তিন তালাক দিয়ে দিলেও যদি এক তালাকই হয় তাহলেও রক্ষা পাওয়ার কোন উপায়ের প্রয়োজন হয় না। এ অবস্থায় কি এমন জটিলতা থাকতে পারে যা থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন প্রয়োজন দেখা দিবে?