আল কলম

৫২ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
১১ ) যে গীবত করে, চোগল খোরী করে বেড়ায়,
هَمَّازٍ مَّشَّآءٍۭ بِنَمِيمٍ ١١
১২ ) কল্যাণের কাজে বাধা দেয়, জুলুম ও বাড়াবাড়িতে সীমালংঘন করে,
مَّنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ مُعْتَدٍ أَثِيمٍ ١٢
১৩ ) চরম পাপিষ্ঠ ঝগড়াটে ও হিংস্র এবং সর্বোপরি বজ্জাত।
عُتُلٍّۭ بَعْدَ ذَٰلِكَ زَنِيمٍ ١٣
১৪ ) কারণ সে সম্পদশালী ও অনেক সন্তানের পিতা ১০
أَن كَانَ ذَا مَالٍ وَبَنِينَ ١٤
১৫ ) তাকে যখন আমার আয়াতসমূহ শোনানো হয় তখন সে বলে এ তো প্রাচীনকালের কিস্সা-কাহিনী।
إِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِ ءَايَٰتُنَا قَالَ أَسَٰطِيرُ ٱلْأَوَّلِينَ ١٥
১৬ ) শিগগীরই আমি তার শুঁড় দাগিয়ে দেবো। ১১
سَنَسِمُهُۥ عَلَى ٱلْخُرْطُومِ ١٦
১৭ ) আমি এদের (মক্কাবাসী)-কে পরীক্ষায় ফেলেছি যেভাবে পরীক্ষায় ফেলেছিলাম ১২ বাগানের মালিকদেরকে, যখন তারা শপথ করেছিল যে, তারা খুব ভোরে গিয়ে অবশ্যি নিজেদের বাগানের ফল আহরণ করবে।
إِنَّا بَلَوْنَٰهُمْ كَمَا بَلَوْنَآ أَصْحَٰبَ ٱلْجَنَّةِ إِذْ أَقْسَمُوا۟ لَيَصْرِمُنَّهَا مُصْبِحِينَ ١٧
১৮ ) তারা এ ব্যাপারে কোন ব্যতিক্রমের সম্ভাবনা স্বীকার করছিলো না। ১৩
وَلَا يَسْتَثْنُونَ ١٨
১৯ ) অতঃপর তোমার রবের পক্ষ থেকে একটি বিপর্যয় এসে সে বাগানে চড়াও হলো। তখন তারা ছিলো নিদ্রিত।
فَطَافَ عَلَيْهَا طَآئِفٌ مِّن رَّبِّكَ وَهُمْ نَآئِمُونَ ١٩
২০ ) বাগানের অবস্থা হয়ে গেলো কর্তিত ফসলের ন্যায়।
فَأَصْبَحَتْ كَٱلصَّرِيمِ ٢٠
৭.
আয়াতে مَنَّاعٍ لِلْخَيْرِ (মান্নাইল্লিলখায়ের) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আরবী ভাষায় অর্থ-সম্পদ ও যাবতীয় ভাল কাজকেও خير (খায়ের) বলা হয়। তাই শব্দটিকে যদি অর্থ-সম্পদ অর্থে গ্রহণ করা হয় তাহলে তার মানে হবে সে অত্যন্ত বখীল এবং কৃপণ। কাউকে কানাকড়ি দেয়ার মত উদারতা এবং মন-মানসও তার নেই। আর যদি خير খায়ের শব্দটি নেকী ও ভাল কাজের অর্থে গ্রহণ করা হয়, তবে সে ক্ষেত্রে তার একটি অর্থ হতে পারে, সে প্রতিটি কল্যাণের কাজে বাধা সৃষ্টি করে। আরেকটি অর্থ হতে পারে সে ইসলাম থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখতে অত্যন্ত তৎপর।
৮.
আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ হলো عُتُل (ওতুল্লিন)। আরবী ভাষায় عتل ওতুল বলা হয় এমন লোককে যে অত্যন্ত সুঠামদেহী ও অধিকমাত্রায় পানাহারকারী। অধিকন্তু চরম দুশ্চরিত্র ঝগড়াটে এবং হিংস্র ও পাষণ্ড।
৯.
মূল আয়াতে زَنِيمٍ (যানীম) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আরবদের ভাষায় এ শব্দটি এমন অবৈধ সন্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যে পরিবারের লোক নয়, কিন্তু তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছে। সাঈদ ইবনে জুবাইর এবং শা'বী বলেনঃ এ শব্দটি এমন লোকের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় যে তার অন্যায় ও দুষ্কৃতির কারণে বেশ প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।

এসব আয়াতে বর্ণিত বৈশিষ্টগুলো যে ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে তার সম্পর্কে মুফাসিসরগণ ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। কেউ বলেছেন যে, সে ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা। কেউ আসওয়াদ ইবনে আবদে ইয়াগুসের নাম উল্লেখ করেছেন। কেউ আখনাস ইবনে শুরাইককে এই ব্যক্তি বলে চিহ্নিত করেছেন। আবার কেউ কেউ অন্য ব্যক্তির প্রতিও ইঙ্গিত করেছেন। কিন্তু কুরআন মজীদে তার নাম উল্লেখ না করে শুধু বৈশিষ্টগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে সে মক্কায় বেশ পরিচিত ছিল। তাই তার নাম উল্লেখ করা প্রয়োজন ছিল না। এসব বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা মাত্র যে কোন লোক বুঝতে পারতো, কার প্রতি ইঙ্গিত করা হচ্ছে।

১০.
এ আয়াতটির সম্পর্কে পূর্বোক্ত আয়াতগুলোর সাথেও হতে পারে এবং পরের আয়াতের সাথেও হতে পারে। পূর্বোক্ত আয়াতগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অর্থ হবে, বিপুল অর্থ-সম্পদ এবং অনেক সন্তান আছে বলে এ ধরনের লোকের দাপট ও প্রভাব-প্রতিপত্তি মেনে নিয়ো না। পরবর্তী আয়াতের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অর্থ হবে, বিপুল অর্থ-সম্পদ ও অনেক সন্তান থাকার কারণে সে অহংকারী হয়েছে। তাকে আমার আয়াত শুনালে সে বলে এসব তো প্রাচীনকালের কিস্সা কাহিনী মাত্র।
১১.
সে যেহেতু নিজেকে খুব মর্যাদাবান মনে করতো তাই তার নাককে শুঁড় বলা হয়েছে। নাক দাগিয়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে লাঞ্ছিত করা। অর্থাৎ আমি তাকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গাতেই এমন লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবো যে, এ লাঞ্ছনা ও অপমান থেকে সে কখনো নিষ্কৃতি পাবে না।
১২.
এখানে সূরা কাহাফের পঞ্চম রুকূর আয়াতগুলো সামনে রাখতে হবে। সেখানেও একইভাবে উপদেশ দেয়ার জন্য দুই বাগান মালিকের উদাহরণ পেশ করা হয়েছে।
১৩.
অর্থাৎ নিজেদের ক্ষমতা ও যোগ্যতার ওপর তাদের এমন আস্থা ছিল যে, শপথ করে দ্বিধাহীন চিত্তে বলে ফেললো, কালকে আমরা অবশ্যই আমাদের বাগানের ফল আহরণ করবো। আল্লাহর ইচ্ছা থাকলে আমরা এ কাজ করবো এতটুকু কথা বলার প্রয়োজনও তারা বোধ করেনি।
অনুবাদ: