وَلَمَّا رَجَعَ مُوسَىٰٓ إِلَىٰ قَوْمِهِۦ غَضْبَـٰنَ أَسِفًۭا قَالَ بِئْسَمَا خَلَفْتُمُونِى مِنۢ بَعْدِىٓ ۖ أَعَجِلْتُمْ أَمْرَ رَبِّكُمْ ۖ وَأَلْقَى ٱلْأَلْوَاحَ وَأَخَذَ بِرَأْسِ أَخِيهِ يَجُرُّهُۥٓ إِلَيْهِ ۚ قَالَ ٱبْنَ أُمَّ إِنَّ ٱلْقَوْمَ ٱسْتَضْعَفُونِى وَكَادُوا۟ يَقْتُلُونَنِى فَلَا تُشْمِتْ بِىَ ٱلْأَعْدَآءَ وَلَا تَجْعَلْنِى مَعَ ٱلْقَوْمِ ٱلظَّـٰلِمِينَ
ওদিকে মূসা ফিরে এলেন তার জাতির কাছে ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ অবস্থায়। এসেই বললেনঃ “আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার বড়ই নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করেছো! তোমরা কি নিজেদের রবের হুকুমের অপেক্ষা করার মত এতটুকু সবরও করতে পারলে না?” সে ফলকগুলো ছুঁড়ে দিল এবং নিজের ভাইয়ের (হারুন) মাথার চুল ধরে টেনে আনলো। হারুন বললোঃ “হে আমার সহোদর! এ লোকগুলো আমাকে দুর্বল করে ফেলেছিল এবং আমাকে হত্যা করার উপক্রম করেছিল। কাজেই তুমি শত্রুর কাছে আমাকে হাস্যাম্পদ করো না এবং আমাকে এ জালেম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করো না। ১০৮
১০৮
ইহুদীরা জোরপূর্বক হযরত হারুনের ওপর একটি জঘন্য অপবাদ আরোপ করে আসছিল। কুরআন মজীদ এখানে তা খণ্ডন করেছে। বাইবেলে বাছুর পূজার ঘটনাটি নিম্নোক্তভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ হযরত মূসার যখন পাহাড় থেকে নেমে আসতে দেরি হলো, তখন বনী ইসরাঈলীরা অধৈর্য হয়ে হযরত হারুনকে বললো, আমাদের জন্য একটি মাবুদ বানিয়ে দাও। হযরত হারুন তাদের ফরমায়েশ অনুযায়ী একটি সোনার বাছুর বানিয়ে দিলেন। বাছুরটিকে দেখেই বনী ইসরাঈলীরা বলে উঠলো, হে বনী ইসরাঈল! এ তো তোমাদের সেই খোদা, যা তোমাদেরকে মিসর থেকে বের করে নিয়ে এসেছে। তারপর হযরত হারুন তার জন্য একটি বেদী নির্মাণ করলেন, এক ঘোষনার মাধ্যমে পরের দিন সমস্ত বনী ইসরাঈলকে একত্রিত করলেন এবং সেই গো-দেবতার বেদীমূলে কুরবানী দিলেন। (যাত্রা পুস্তক ৩২: ১-৬) কুরআন মজীদের একাধিক স্থানে এ মিথ্যা বর্ণনার প্রতিবাদ করা হয়েছে এবং যথার্থ সত্য ঘটনা বর্ণনা করে সেখানে বলা হয়েছে, আল্লাহর নবী হারুন এ ঘৃণ্য অপরাধটি করেননি বরং এটি করেছিল আল্লাহর দুশমন ও বিদ্রোহী সামেরী। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন সূরা ত্বা-হা ৯০-৯৪ আয়াত)।
আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটি বড় বিস্ময়কর মনে হয়। বনী ইসরাঈলীরা যাদেরকে আল্লাহর নবী বলে মানে তাদের মধ্য থেকে কারোর চরিত্রে তারা কলঙ্ক লেপন না করে ছাড়েনি, আবার কলঙ্ক লেপনও করেছে এমন বিশ্রীভাবে, যা শরীয়াত ও নৈতিকতার দৃষ্টিতে নিকৃষ্টতম অপরাধ বিবেচিত হয়। যেমন, শিরক, যাদু, ব্যভিচার, মিথ্যাচার, প্রতারণা এবং এমনি ধরনের আরো বিভিন্ন জঘন্য গুনাহের কাজ, যেগুলোতে লিপ্ত হওয়া একজন নবী তো দূরের কথা সাধারণ মু’মিন ও ভদ্রলোকের পক্ষেও মারাত্মক লজ্জার ব্যাপার মনে করা হয়। বাহ্যত কথাটি বড়ই অদ্ভুত মনে হয়। কিন্তু বনী ইসরাঈলীদের নৈতিকতার ইতিহাস অধ্যয়ন করলে জানা যায়, আসলে এ জাতিটির ব্যাপারে এটি মোটেই বিস্ময়কর নয়। এ জাতিটি যখন নৈতিক ও ধর্মীয় অধঃপতনের শিকার হলো এবং তাদের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ পর্যন্ত এমনকি উলামা, মাশায়েখ ও দ্বীনী পদাধিকারী ব্যক্তিরাও গোমরাহী ও চরিত্রহীনতার সয়লাবে ভেসে গেলো, তখন তাদের অপরাধী বিবেক নিজেদের এ অবস্থার জন্য ওযর তৈরী করতে শুরু করে দিল এবং যেসব অপরাধ তারা নিজেরা করে চলছিল, সেগুলো সবই নবীদের সাথে সংশ্লিষ্ট করে তাদের নবীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিল। এভাবে তারা বলতে চাইলো যে, নবীরাই যখন এসব থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে পারেননি তখন অন্যেরা আর কেমন করে বাঁচতে পারে? এ ব্যাপারে হিন্দুদের সাথে ইহুদীদের অবস্থার মিল রয়েছে। হিন্দুদের মধ্যেও যখন নৈতিক অধঃপতন চরম পর্যায়ে পৌঁছে তখন এমন ধরনের সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছিল, যেখানে দেবতা, মুনি-ঋষি, অবতার তথা জাতির যারা সর্বোত্তম আদর্শ ব্যক্তিত্ব ছিল তাদের সবার গায়ে কলঙ্ক লেপন করে দেয়া হয়েছিল। এভাবে তারা বলতে চেয়েছিল যে, এত বড় মহান ব্যক্তিত্বরাই যখন এসব খারাপ কাজে লিপ্ত হতে পারে, তখন আমরা সাধারণ মানুষরা আর কোন ছার? আর এ কাজগুলো যখন এ ধরনের মহীম মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য লজ্জাকর নয়, তখন আমাদের জন্যই বা তা কলঙ্কজনক হতে যাবে কেন?