শয়তান যে অবকাশ চেয়েছিল এবং আল্লাহ তাকে যে অবকাশ দিয়েছিলেন সেটি নিছক সময়ের অবকাশ ছিল না বরং সে যে কাজ করতে চাচ্ছিল সে কাজটি করার সুযোগও এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। অর্থাৎ তার দাবী ছিল, মানুষকে বিভ্রান্ত করে তার দুর্বলতাসমূহকে কাজে লাগিয়ে তাকে অযোগ্য প্রমাণ করার সুযোগ দিতে হবে। এ সুযোগ আল্লাহ তাকে দিয়েছেন। সূরা বনী ইসরাঈলের সপ্তম রুকূ’তে (আয়াত ৬১-৬৫) এর বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। সেখানে আল্লাহ শয়তানকে এ ক্ষমতা ও ইখতিয়ার দেবার কথা বলেছেন যে, আদম ও তার সন্তান-সন্তুতিদেরকে সত্য-সঠিক পথ থেকে বিচ্যূত করার জন্য সে নিজের ইচ্ছা মত যে কোন কৌশল অবলম্বন করতে পারে। এসব কৌশল অবলম্বন করার ক্ষেত্রে তাকে কোন প্রকার বাধা দেয়া হবে না। বরং যেসব পথে সে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে সেই সমস্ত পথই খোলা থাকবে। কিন্তু এই সঙ্গে এ শর্তটিও জুড়ে দেয়া হয়েছে-
إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ
অর্থাৎ “আমার বান্দাদের ওপর তোমার কোন কর্তৃত্ব থাকবে না।” তুমি কেবল এতটুকু করতে পারবে, তাদেরকে বিভ্রান্তির মধ্যে নিক্ষেপ করতে পারবে। মিথ্যা আশার ছলনে ভুলাতে পারবে, অসৎ কাজ ও গোমরাহীকে সুশোভন করে তাদের সামনে পেশ করতে পারবে, ভোগের আনন্দ ও স্বার্থের লোভ দেখিয়ে তাদেরকে ভুল পথের দিকে আহবান জানাতে পারবে। কিন্তু তাদের হাত ধরে জবরদস্তি তাদেরকে তোমার পথের দিকে টেনে আনবে এবং তারা যদি সত্য-সঠিক পথে চলতে চায় তাহলেও তুমি তা থেকে তাদেরকে বিরত রাখবে, সে ক্ষমতা তোমাকে দেয়া হবে না। সূরা ইবরাহীমের চতুর্থ রুকূ’তেও একই কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহর আদালত থেকে ফয়সালা শুনিয়ে দেবার পর শয়তান তার অনুসারী মানুষদেরকে বলবেঃ
وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيْكُمْ مِنْ سُلْطَانٍ إِلَّا أَنْ دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِي فَلَا تَلُومُونِي وَلُومُوا أَنْفُسَكُمْ
“তোমাদের ওপর আমার তো কোন জবরদস্তি ছিল না, আমার অনুসরণ করার জন্য আমি তোমাদের বাধ্য করিনি। আমি তোমাদেরকে আমার পথের দিকে আহবান জানিয়েছিলাম, এর বেশী আমি কিছুই করিনি। আর তোমরা আমার আহবান গ্রহণ করেছিলে। কাজেই এখন আমাকে তিরষ্কার করো না বরং তোমাদের নিজেদেরকেই তিরস্কার করো।”
আর শয়তান যে এখানে আল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে যে, তুমিই আমাকে গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করেছো, এর অর্থ হচ্ছে এই যে, শয়তান নিজের গোনাহের দায়-দায়িত্ব আল্লাহর ওপর চাপিয়ে দিতে চায়। তার অভিযোগ হচ্ছে, আদমের সামনে সিজদা করার হুকুম দিয়ে তুমি আমাকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছো এবং আমার আত্মাভিমান ও আত্মম্ভরিতায় আঘাত দিয়ে আমাকে এমন অবস্থার সম্মুখীন করেছো যার ফলে আমি তোমার নাফরমানী করেছি। অন্য কথায় বলা যায়, নির্বোধ শয়তান চাচ্ছিল, তার মনের গোপন ইচ্ছা যেন ধরা না পড়ে। বরং যে মিথ্যা অহমিকা ও বিদ্রোহ সে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল, তাকে সে পর্দার অন্তরালে সঙ্গোপন করে রাখতে চাচ্ছিল। এটা ছিল একটি হীন ও নির্বোধসুলভ আচরণ। এহেন আচরণের জবাব দেবার কোন প্রয়োজন ছিল না। তাই মহান আল্লাহ তার এ অভিযোগের আদৌ কোন গুরুত্বই দেননি।