কুরআন মজীদে চৌদ্দটি স্থানে সিজদার আয়াত এসেছে। এ আয়াতগুলো পড়লে বা শুনলে সিজদা করতে হবে, এটি ইসলামী শরীয়াতের একটি বিধিবদ্ধ বিষয়, এ ব্যাপারে সবাই একমত। তবে এ সিজদা ওয়াজিব হবার ব্যাপারে বিভিন্ন মত রয়েছে। ইমাম আবু হানীফা (র) তেলাওয়াতে সিজদাকে ওয়াজিব বলেন। অন্যান্য উলামা বলেন, এটি সুন্নত। নবী ﷺ অনেক সময় একটি বড় সমাবেশ কুরআনে পড়তেন এবং সেখানে সিজদার আয়াত এলে তিনি নিজে তৎক্ষণাৎ সিজদা করতেন এবং সাহাবীগণ এর যিনি যেখানে থাকতেন তিনি সেখানেই সিজদাবনত হতেন। এমনকি কেউ কেউ সিজদা করার জায়গা না পেয়ে নিজের সামনের ব্যক্তির পিঠের ওপর সিজদা করতেন। হাদীসে একথাও এসেছে, মক্কা বিজয়ের সময় তিনি কুরআন পড়েন। সেখানে সিজদার আয়াত এলে যারা মাটির ওপর দাঁড়িয়েছিলেন তারা মাটিতে সিজদা করেন এবং যারা ঘোড়ার ও উটের পিঠে সওয়ার ছিলেন তারা নিজেদের বাহনের পিঠেই ঝুঁকে পড়েন। কখনো নবী (সা.) খুতবার মধ্যে সিজদার আয়াত পড়তেন, তখন মিম্বার থেকে নেমে সিজদা করতেন তারপর আবার মিম্বারের ওপর উঠে খুতবা দিতেন।
অধিকাংশ আলেমের মতে নামাযের জন্য যেসব শর্ত নির্ধারিত, এ তেলাওয়াতের সিজদার জন্যও তাই নির্ধারিত। অর্থাৎ অযুসহকারে কিবলার দিকে মুখ করে নামাযের সিজদার মত করে মাটিতে মাথা ঠেকাতে হবে। কিন্তু তেলাওয়াতের সিজদার অধ্যায়ে আমরা যতগুলো হাদীস পেয়েছি সেখানে কোথাও এ শর্তগুলোর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ নেই। সেখান থেকে তো একথাই জানা যায় যে, সিজদার আয়াত শুনে যে ব্যক্তি যেখানে যে অবস্থায় থাকে, সে অবস্থায়ই যেন সিজদা করে-তার অযু থাক বা না থাক, কিবলামুখী হওয়া তার পক্ষে সম্ভব হোক বা না হোক, মাটিতে মাথা রাখার সুযোগ পাক বা না পাক তাতে কিছু আসে যায় না। প্রথম যুগের আলেমদের মধ্যেও আমরা এমন অনেক লোক দেখি যারা এভাবেই তেলাওয়াতের সিজদা করেছেন। ইমাম বুখারী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) সম্পর্কে লিখেছেন, তিনি অযু ছাড়াই তেলাওয়াতের সিজদা করতেন। ফাতহুল বারীতে আবু আবদুর রহমান সুলামী সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি পথ চলতে কুরআন মজীদ পড়তেন এবং কোথাও সিজদার আয়াত এলেই মাথা ঝুঁকিয়ে নিতেন। অযু সহকারে থাকুন বা না থাকুন এবং কিবলার দিকে মুখ ফিরানো থাক বা না থাক, তার পরোয়া করতেন না। এসব কারণে আমি মনে করি, যদিও অধিকাংশ আলেমের মতটিই অধিকতর সতর্কতামূলক তবুও কোন ব্যক্তি যদি অধিকাংশ আলেমের মতের বিপরীত আমল করে, তাহলে তাকে তিরস্কার করা যেতে পারে না। কারণ অধিকাংশ আলেমের মতের স্বপক্ষে কোন প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত নেই। আবার প্রথম দিকের আলেমদের মধ্যে এমনসব লোকও পাওয়া গেছে, যাদের রীতি ছিল পরবর্তীকালের অধিকাংশ আলেমদের থেকে ভিন্নতর।