وَقَالَتْ أُولَىٰهُمْ لِأُخْرَىٰهُمْ فَمَا كَانَ لَكُمْ عَلَيْنَا مِن فَضْلٍۢ فَذُوقُوا۟ ٱلْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ
প্রথম দলটি দ্বিতীয় দলকে বলবেঃ (যদি আমরা দোষী হয়ে থাকি) তাহলে তোমরা কোন দিক দিয়ে আমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ ছিলে? এখন নিজেদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ আযাবের স্বাদ গ্রহণ করো। ৩১
৩১
জাহান্নামবাসীদের এ পারস্পরিক সংলাপ ও তর্ক-বিতর্ক কুরআন মজীদের আরো কয়েকটি স্থানে বর্ণিত হয়েছে। যেমন সূরা সাবা'র ৪ রুকূ’তে বলা হয়েছেঃ হায়! তোমরা যদি সেই সময়টি দেখতে পেতে যখন এ জালেমরা নিজেদের রবের সামনে দাঁড়াবে এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে থাকবে। যাদেরকে দুনিয়ায় দুর্বল করে রাখা হয়েছিল তারা বড় ও শক্তিশালীর আসনে যারা বসেছিল তাদেরকে বলবেঃ তোমরা না থাকলে আমরা মু'মিন হতাম। বড় ও শক্তিশালীর আসনে যারা বসেছিল, তারা দুর্বল করে রাখা লোকদেরকে জবাব দেবেঃ তোমাদের কাছে যখন হেদায়াত এসেছিল তখন আমরা কি তা গ্রহণ করতে তোমাদেরকে বাধা দিয়েছিলাম? না, তা নয়, বরং তোমরা নিজেরাই অপরাধী ছিলে। এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা আবার কবে হেদায়াতের প্রত্যাশী ছিলে? আমরা যদি তোমাদেরকে দুনিয়ার লোভ দেখিয়ে নিজেদের দাসে পরিণত করে থাকি, তাহলে তোমরা লোভী ছিলে বলেই তো আমাদের ফাঁদে পা দিয়েছিলে। যদি আমরা তোমাদেরকে কিনে নিয়ে থাকি, তাহলে তোমরা নিজেরাই তো বিকোবার জন্য তৈরী ছিলে, তবেই না আমরা কিনতে পেরেছিলাম। যদি আমরা তোমাদেরকে বস্তুবাদ, বৈষয়িক লালসা, জাতিপূজা এবং এ ধরনের আরো বিভিন্ন প্রকার গোমরাহী ও অসৎকাজে লিপ্ত করে থাকি, তাহলে তোমরা নিজেরাই তো আল্লাহর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে দুনিয়ার পূজারী সেজেছিলে, তবেই না তোমরা আল্লাহর আনুগত্য ও আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বানকারীদেরকে ত্যাগ করে আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলে। যদি আমরা তোমাদের ধর্মের আবরণে প্রতারিত করে থাকি, তাহলে যে জিনিসগুলো আমরা পেশ করছিলাম এবং তোমরা লুফে নিচ্ছিলে, সেগুলোর চাহিদা তো তোমাদের নিজেদের মধ্যেই ছিল। তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন সব প্রয়োজন পূরণকারী খুঁজে বেড়াচ্ছিলে, যারা তোমাদের কাছে কোন নৈতিক বিধানের আনুগত্যের দাবী না করেই কেবলমাত্র তোমাদের ইস্পিত কাজই করে যেতে থাকতো। আমরা সেই সব প্রয়োজন পুরণকারী তৈরী করে তোমাদেরকে দিয়েছিলাম। তোমরা আল্লাহর আদেশ নিষেধ থেকে বেপরোয়া হয়ে দুনিয়ার কুকুর হয়ে গিয়েছিলে এবং তোমাদের পাপ মোচনের জন্য এমন এক ধরনের সুপারিশকারী খুঁজে বেড়াচ্ছিলে যারা তোমাদের গোনাহ মাফ করিয়ে দেয়ার সমস্ত দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে নিয়ে নেবে। আমরা সেই সব সুপারিশকারী তৈরী করে তোমাদের কাছে সরবরাহ করেছিলাম। তোমরা নিরস ও স্বাদ-গন্ধহীন দ্বীনদারী, পরহেজগারী, কুরবানী এবং প্রচেষ্টা ও সাধনার পরিবর্তে নাজাত লাভের জন্য অন্য কোন পথের সন্ধান চাচ্ছিলে। তোমরা চাচ্ছিলে এ পথে তোমাদের প্রবৃত্তি ও লালসা চরিতার্থ করতে, নানা প্রকার স্বাদ আহরণ করতে কোন বাধা না থাকে এবং প্রবৃত্তি ও লালসা যেন সব রকমের বিধি-নিষেধের আওতামুক্ত থাকে। আমরা এ ধরনের সুদৃশ্য ধর্ম উদ্ভাবন করে তোমাদের সামনে রেখেছিলাম। মোটকথা দায়-দায়িত্ব কেবল আমাদের একার নয়। তোমরাও এতে সমান অংশীদার। আমরা যদি গোমরাহী সরবরাহ করে থাকি, তাহলে তোমরা ছিলে তার খরিদ্দার।