فَلَنَسْـَٔلَنَّ ٱلَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْـَٔلَنَّ ٱلْمُرْسَلِينَ
কাজেই যাদের কাছে আমি রসূল পাঠিয়েছি তাদেরকে অবশ্যি জিজ্ঞাসাবাদ করবো ৬ এবং রসূলদেরকেও জিজ্ঞেস করবো (তারা পয়গাম পৌঁছিয়ে দেবার দায়িত্ব কতটুকু সম্পাদন করেছে এবং এর কি জবাব পেয়েছে) । ৭
৬
এখানে জিজ্ঞাসাবাদ বলতে কিয়ামতের হিসেব-নিকেশ বুঝানো হয়েছে। অসৎ ব্যক্তি ও জাতিদের ওপর দুনিয়ায় যেসব আযাব আসে সেগুলো আসলে তাদের অসৎকর্মের চূড়ান্ত ফল নয় এবং সেগুলো তাদের অপরাধের পূর্ণ শাস্তিও নয়।বরং এটাকে এ অবস্থার পর্যায়ে ফেলা যেতে পারে যে, একজন অপরাধী স্বাধীনভাবে অপরাধ করে বেড়াচ্ছিল, তাকে অকস্মাৎ গ্রেফতার করে তার আরো বেশী জুলুম, অন্যায় ও ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার সুযোগ ছিনিয়ে নেয়া হলো।মানব জাতির ইতিহাসে এ ধরনের গ্রেফতারীর অসংখ্য নজীর পাওয়া যায়।এ নজীরগুলো এ কথারই এক একটি সুস্পষ্ট আলামত যে, মানুষকে এ দুনিয়ায় যেখানে সেখানে চরে বেড়াবার এবং যাচ্ছে তাই করে বেড়াবার জন্য লাগামহীন উটের মতো স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া হয়নি। বরং সবার ওপরে কোন এক শক্তি আছে যে একটি বিশেষ সীমারেখা পর্যন্ত তার রশি আলগা করে রাখে। অসৎ প্রবণতা থেকে ফিরে আসার জন্য একের পর এক সতর্ক সিগন্যাল দিয়ে যেতে থাকে। আর যখন দেখা যায়, সে কোনক্রমেই সৎ পথে ফিরে আসছে না তখন হঠাৎ এক সময় তাকে পাকড়াও করে ফেলে। তারপর এ ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার ওপর চিন্তা-ভাবনা করলে কোন ব্যক্তি সহজেই এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে যে, এ বিশ্বজাহানের ওপর যে শাসনকর্তার শাসন চলছে তিনি নিশ্চয়ই এমন একটি সময় নির্ধারিত করে রেখে থাকবেন যখন এসব অপরাধীদের বিচার করা হবে এবং নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের জবাবাদিহি করতে হবে। এ কারণে ওপরের যে আয়াতটিতে পার্থিব আযাবের কথা বলা হয়েছে, তাকে “কাজেই” শব্দটি দ্বারা পরবর্তী আয়াতের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ পার্থিব আযাব বার বার আসা যেন আখেরাতে জবাবদিহির নিশ্চয়তার একটি প্রমাণ।
৭
এ থেকে জানা গেলো, আখেরাতে জিজ্ঞাসাবাদ সরাসরি রিসালাতের ভিত্তিতেই অনুষ্ঠিত হবে। একদিকে নবীদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, মানব সম্প্রদায়ের কাছে আল্লাহর পয়গাম পৌঁছিয়ে দেবার জন্য তোমরা কি কি কাজ করেছো? অন্যদিকে যাদের কাছে, রসূলের দাওয়াত পৌঁছে গেছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, এ দাওয়াতের সাথে তোমরা কি ব্যবহার করছো? যেসব ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের কাছে নবীদের বাণী পৌঁছেনি তাদের মামলার নিষ্পত্তি কিভাবে হবে, সে সম্পর্কে কুরআন মজীদ আমাদের কিছুই বলেনি। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাঁর ফয়সালা সংরক্ষিত করে রেখেছেন। কিন্তু যেসব ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের কাছে নবীদের শিক্ষা পৌঁছে গেছে তাদের সম্পর্কে কুরআন পরিষ্কার ঘোষণা করেছে যে, তারা নিজেদের কুফরী, অবাধ্যতা, অস্বীকৃতি, ফাসিকী ও নাফরমানীর স্বপক্ষে কোন যুক্তি-প্রমাণ পেশ করতে পারবে না। আর লজ্জায়, আক্ষেপে ও অনুতাপে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে জাহান্নামের পথে এগিয়ে চলা ছাড়া কিয়ামতের দিন তাদের জন্য দ্বিতীয় কোন পথ থাকবে না।