۞ وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًۭا ۗ قَالَ يَـٰقَوْمِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُۥٓ ۚ أَفَلَا تَتَّقُونَ
আর 'আদ' (জাতি) র ৫১ কাছে আমি পাঠাই তাদের ভাই হূদকে। সে বলেঃ “হে আমার সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। এরপরও কি তোমরা ভুল পথে চলার ব্যাপারে সাবধান হবে না?”
৫১
'আদ' ছিল আরবের প্রাচীনতম জাতি। আরবের সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এদের কাহিনী প্রচলিত ছিল। ছোট ছোট শিশুরাও তাদের নাম জানতো। তাদের অতীত কালের প্রতাপ-প্রতিপত্তি ও গৌরব গাঁথা প্রবাদ বাক্যে পরিণত হয়েছিল। তারপর দুনিয়ার বুক থেকে তাদের নাম-নিশানা মুছে যাওয়াটাও প্রবাদের রূপ নিয়েছিল। আদ জাতির এ বিপুল পরিচিতির কারণেই আরবী ভাষায় প্রত্যেকটি প্রাচীন ও পুরাতন জিনিসের জন্য 'আদি' শব্দ ব্যবহার করা হয়। প্রাচীন ধ্বংসাবশেষকে 'আদিয়াত' বলা হয়। যে জমির মালিক বেঁচে নেই এবং চাষাবাদকারী না থাকার কারণে যে জমি অনাবাদ পড়ে থাকে তাকে 'আদি-উল-আরদ' বলা হয়। প্রাচীন আরবী কবিতায় আমরা এ জাতির নামের ব্যবহার দেখি প্রচুর পরিমাণে। আরবের বংশধারা বিশেষজ্ঞগণও নিজেদের দেশের বিলুপ্ত জাতিদের মধ্যে সর্বপ্রথম এ জাতিটির নামোচ্চারণ করে থাকেন। হাদীসে বলা হয়েছে, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বনু যহল ইবনে শাইবান গোত্রের এক ব্যক্তি আসেন। তিনি আদ জাতির এলাকার অধিবাসী ছিলেন। তিনি প্রাচীনকাল থেকে তাদের এলাকার লোকদের মধ্যে আদজাতি সম্পর্কে যেসব কিংবদন্তী চলে আসছে তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শুনান।
কুরআনের বর্ণনা মতে এ জাতিটির আবাসস্থল ছিল 'আহকাফ' এলাকা। এ এলাকাটি হিজায, ইয়ামন ও ইয়ামামার মধ্যবর্তী 'রাবয়ুল খালী'র দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত। এখন থেকে অগ্রসর হয়ে তারা ইয়ামনের পশ্চিম সমুদ্রোপকূল এবং ওমান ও হাজরা মাউত থেকে ইরাক পর্যন্ত নিজেদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বিস্তৃত করেছিল। ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে এ জাতিটির নিদর্শনাবলী দুনিয়ার বুক থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কিন্তু দক্ষিণ আরবের কোথাও কোথাও এখনো কিছু পুরাতন ধ্বংস স্তূপ দেখা যায়। সেগুলোকে আদ জাতির নিদর্শন মনে করা হয়ে থাকে। হাজরা মাউতে এক জায়গায় হযরত হূদ আলাইহিস সালামের নামে একটি কবরও পরিচিত লাভ করেছে। ১৮৩৭ খৃস্টাব্দে James R.Wellested নামক একজন ইংরেজ নৌ-সেনাপতি 'হিসনে গুরাবে' একটি পুরাতন ফলকের সন্ধান লাভ করেন। এতে হযরত হূদ আলাইহিস সালামের উল্লেখ রয়েছে। এ ফলকে উৎকীর্ণ লিপি থেকে পরিষ্কার জানা যায়, এটি হযরত হূদের শরীয়াতের অনুসারীদের লেখা ফলক। (আল আহকাফ দেখুন)।