আল আরাফ

২০৬ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
১৮১ ) আমার সৃষ্টির মধ্যে একটি দল এমনও আছে যে, যথার্থ সত্য অনুযায়ী পথনির্দেশ দেয় এবং সত্য অনুযায়ী বিচার করে।
وَمِمَّنْ خَلَقْنَآ أُمَّةٌ يَهْدُونَ بِٱلْحَقِّ وَبِهِۦ يَعْدِلُونَ ١٨١
১৮২ ) আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে তাদেরকে আমি এমন পদ্ধতিতে পর্যায়ক্রমে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবো যে, তারা জানতেও পারবে না।
وَٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا سَنَسْتَدْرِجُهُم مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُونَ ١٨٢
১৮৩ ) আমি তাদেরকে ঢিল দিচ্ছি। আমার কৌশল অব্যর্থ।
وَأُمْلِى لَهُمْ إِنَّ كَيْدِى مَتِينٌ ١٨٣
১৮৪ ) তারা কি কখনো চিন্তা করে না, তাদের সাথীর ওপর উন্মাদনার কোন প্রভাব নেই? সে তো একজন সতর্ককারী মাত্র, (অশুভ পরিণতির উদ্ভব হবার আগেই) সুস্পষ্টভাবে সতর্ক করে দিচ্ছি।
أَوَلَمْ يَتَفَكَّرُوا۟ مَا بِصَاحِبِهِم مِّن جِنَّةٍ إِنْ هُوَ إِلَّا نَذِيرٌ مُّبِينٌ ١٨٤
১৮৫ ) তারা কি কখনো আকাশ ও পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে চিন্তা করেনি এবং আল্লাহর সৃষ্ট কোন জিনিসের দিকে চোখ মেলে তাকায়নি? ১৪৩ আর তারা কি এটাও ভেবে দেখেনি যে, সম্ভবত তাদের জীবনের অবকাশকাল পূর্ণ হবার সময় ঘনিয়ে এসেছে? ১৪৪
أَوَلَمْ يَنظُرُوا۟ فِى مَلَكُوتِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَمَا خَلَقَ ٱللَّهُ مِن شَىْءٍ وَأَنْ عَسَىٰٓ أَن يَكُونَ قَدِ ٱقْتَرَبَ أَجَلُهُمْ فَبِأَىِّ حَدِيثٍۭ بَعْدَهُۥ يُؤْمِنُونَ ١٨٥
১৮৬ ) তাহলে নবীর এ সতর্কীকরণের পর আর এমন কি কথা থাকতে পারে যার প্রতি তারা ঈমান আনবে? আল্লাহ‌ যাকে পথনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত করেন, তার জন্য আর কোন পথ নির্দেশক নেই। আর আল্লাহ‌ তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার মধ্যে উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াবার জন্য ছেড়ে দেন।
مَن يُضْلِلِ ٱللَّهُ فَلَا هَادِىَ لَهُۥ وَيَذَرُهُمْ فِى طُغْيَٰنِهِمْ يَعْمَهُونَ ١٨٦
১৮৭ ) তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, কিয়ামত কবে ও কখন হবে? বলে দাও, “একমাত্র আমার রবই এর জ্ঞান রাখেন। সঠিক সময়ে তিনিই তা প্রকাশ করবেন। আকাশ ও পৃথিবীতে তা হবে ভয়ংকর কঠিন সময়। সহসাই তা তোমাদের ওপর এসে পড়বে।” তারা তোমার কাছে এ ব্যাপারে এমনভাবে জিজ্ঞেস করছে যেন তুমি তার সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছ? বলে দাও, “একমাত্র আল্লাহই এর জ্ঞান রাখেন। কিন্তু অধিকাংশ লোক এ সত্যটি জানে না।”
يَسْـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَىٰهَا قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ رَبِّى لَا يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَآ إِلَّا هُوَ ثَقُلَتْ فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً يَسْـَٔلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِىٌّ عَنْهَا قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ ٱللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ١٨٧
১৮৮ ) হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলো, নিজের জন্য লাভ-ক্ষতির কোন ইখতিয়ার আমার নেই। একমাত্র আল্লাহই যা কিছু চান তাই হয়। আর যদি আমি গায়েবের খবর জানতাম, তাহলে নিজের জন্য অনেক ফায়দা হাসিল করতে পারতাম এবং কখনো আমার কোন ক্ষতি হতো না। ১৪৫ আমি তো যারা আমার কথা মেনে নেয় তাদের জন্য নিছক একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা মাত্র।”
قُل لَّآ أَمْلِكُ لِنَفْسِى نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُ وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ ٱلْغَيْبَ لَٱسْتَكْثَرْتُ مِنَ ٱلْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِىَ ٱلسُّوٓءُ إِنْ أَنَا۠ إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ ١٨٨
১৮৯ ) আল্লাহই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র প্রাণ থেকে এবং তারই প্রজাতি থেকে তার জুড়ি বানিয়েছেন, যাতে তার কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারে। তারপর যখন পুরুষ নারীকে ঢেকে ফেলে, তখন সে হালকা গর্ভধারণ করে। তাকে বহন করে সে চলাফেরা করে। গর্ভ যখন ভারি হয়ে যায় তখন তারা দু'জনে মিলে এক সাথে তাদের রব আল্লাহর কাছে দোয়া করেঃ যদি তুমি আমাদের একটি ভাল সন্তান দাও, তাহলে আমরা তোমার শোকরগুজারী করবো।
هُوَ ٱلَّذِى خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَٰحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا فَلَمَّا تَغَشَّىٰهَا حَمَلَتْ حَمْلًا خَفِيفًا فَمَرَّتْ بِهِۦ فَلَمَّآ أَثْقَلَت دَّعَوَا ٱللَّهَ رَبَّهُمَا لَئِنْ ءَاتَيْتَنَا صَٰلِحًا لَّنَكُونَنَّ مِنَ ٱلشَّٰكِرِينَ ١٨٩
১৯০ ) কিন্তু যখন আল্লাহ‌ তাদেরকে একটি সুস্থ-নিখুঁত সন্তান দান করেন, তখন তারা তাঁর এ দান ও অনুগ্রহে অন্যদেরকে তাঁর সাথে শরীক করতে থাকে। তারা যেসব মুশরিকী কথাবার্তা বলে, আল্লাহ‌ তার অনেক উর্ধ্বে। ১৪৬
فَلَمَّآ ءَاتَىٰهُمَا صَٰلِحًا جَعَلَا لَهُۥ شُرَكَآءَ فِيمَآ ءَاتَىٰهُمَا فَتَعَٰلَى ٱللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ ١٩٠
১৪৩.
সাথী বলতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বুঝানো হয়েছে। তিনি তাদের মধ্যেই জন্মলাভ করেন। তাদের মধ্যে বসবাস করেন। শৈশব থেকে যৌবন এবং যৌবন থেকে বার্ধক্যে পদার্পণ করেন। নবুওয়াত লাভের পূর্বে সমগ্র জাতি তাঁকে একজন অত্যন্ত শান্ত-শিষ্ট-ভারসাম্যপূর্ণ স্বভাব প্রকৃতি ও সুস্থ মন-মগজধারী মানুষ বলে জানতো। নবুওয়াত লাভের পর যে-ই তিনি মানুষের কাছে আল্লাহর দাওয়াত পৌঁছাতে শুরু করলেন, অমনি তাঁকে পাগল বলা আরম্ভ হয়ে গেল। একথা সুস্পষ্ট, নবী হবার আগে তিনি যেসব কথা বলতেন সেগুলো জন্য তাঁকে পাগল বলা হয়নি বরং নবী হবার পর তিনি যেসব কথা প্রচার করতে থাকেন, সেগুলোর জন্য তাঁকে পাগল বলা হতে থাকে। তাই এখানে বলা হচ্ছে, তারা কি কখনো ভেবে দেখেছে, যে কথা গুলো তিনি বলছেন তার মধ্যে কোনটি পাগলামির কথা? কোন কথাটি অর্থহীন, ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক? যদি তারা আসমান ও যমীনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তা করতো অথবা আল্লাহর তৈরী যে কোন একটি জিনিসকে গভীর দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করতো, তাহলে তারা নিজেরাই বুঝতে পারতো যে, শিরকের মতবাদ খণ্ডন, তাওহীদের প্রমাণ, রবের বন্দেগীর দাওয়াত এবং মানুষের দায়িত্ব পালন ও জবাবদিহি সম্পর্কে তাদের ভাই তাদেরকে যা কিছু বুঝাচ্ছেন, এই সমগ্র বিশ্ব ব্যবস্থা ও আল্লাহর সৃষ্টিলোকের প্রতিটি অনুকণিকা তারই সত্যতার সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছে।
১৪৪.
অর্থাৎ এ নির্বোধরা এতটুকুও চিন্তা করে না যে, মৃত্যুর সময় কারোর জানা নেই। কেউ জানে না কার মৃত্যু কখন এসে পড়বে। তারপর যখন কারোর মৃত্যুর সময় এসে যাবে এবং তার কর্মনীতির সংশোধন করার জন্য ইহকালীন জীবনকালের যে অবকাশটুকু সে পেয়েছিল, তাকে যদি সে গোমরাহী ও অসৎকাজে নষ্ট করে দিয়ে থাকে তাহলে তার পরিণাম কি হবে?
১৪৫.
এর অর্থ হচ্ছে, কিয়ামতের সঠিক তারিখ একমাত্র সে-ই বলতে পারে, যে গায়েবের জ্ঞান রাখে আর আমার অবস্থা এমন যে, আমি আগামীকাল আমার ও আমার পরিবারবর্গের কি অবস্থা হবে তাও বলতে পারিনা। তোমরা নিজেরাই বুঝতে পারো, যদি আমি এ জ্ঞানের অধিকারী হতাম তাহলে পূর্বাহ্ণে অবগত হয়ে বহু ক্ষতির হাত থেকে আমি বেঁচে যেতাম এবং নিছক আগেভাগে জানতে পারার কারণে নিজের বহু স্বার্থোদ্ধার করা আমার পক্ষে সহজতর হতো। এ অবস্থা দেখার ও জানার পরও তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস করছো-কিয়ামত কবে হবে? এটা তোমাদের কত বড় অজ্ঞতার পরিচায়ক।
১৪৬.
এখানে মুশরিকদের জাহেলিয়াত প্রসূত গোমরাহীর সমালোচনা করা হয়েছে। এ ভাষণটির মূল বক্তব্য হচ্ছে, মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহই সর্বপ্রথম মানব জাতিকে সৃষ্টি করেন। মুশরিকরাও একথা অস্বীকার করেনা। তারপর পরবর্তিকালের প্রত্যেকটি মানুষকেও তিনিই অস্তিত্ব দান করেন। আর একথাটিও মুশরিকরা জানে। নারী গর্ভে শুক্রকে সংরক্ষণ, তারপর এ সামান্য হালকা গর্ভটি লালন করে তাকে একটি জীবন্ত মানব শিশুতে পরিণত করা, এরপর সেই শিশুটির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শক্তি ও যোগ্যতা সৃষ্টি করে তাকে একটি সুস্থ ও পরিপূর্ণ অবয়বের অধিকারী মানুষ হিসেবে দুনিয়ার বুকে ভূমিষ্ঠ করা-এসবকিছু আল্লাহর ইচ্ছাধীন। মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ‌ যদি নারীর গর্ভে সাপ, বাঁদর বা অন্য কোন অদ্ভুত দেহাবয়ব বিশিষ্ট জীব সৃষ্টি করে দেন অথবা মায়ের গর্ভেই শিশুকে অন্ধ, বধির, বোবা, খঞ্জ করে দেন বা তার শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক শক্তির মধ্যে কোন ত্রুটি জন্মিয়ে দেন, তাহলে আল্লাহর গড়া এ আকৃতিকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা কারোর নেই। একক আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসীদের ন্যায় মুশরিকরাও এ সত্যটি সম্পর্কে সমানভাবে অবগত। তাই দেখা যায়, গর্ভবস্থায় সুস্থ, সবল ও নিখুঁত অবয়বধারী শিশু ভূমিষ্ঠ হবার ব্যাপারে আল্লাহর ওপরই পূর্ণ ভরসা করা হয়। কিন্তু সেই আশা পূর্ণ হয়ে যদি চাঁদের মত ফুটফুটে সুন্দর শিশু ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলেও জাহেলী কর্মকাণ্ড নবতর রূপ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে কোন দেবী, অবতার, অলী ও পীরের নামে নজরানা ও শিন্নী নিবেদন করা হয় এবং শিশুকে এমন সব নামে অভিহিত করা হয় যেন, মনে হয় সে আল্লাহর নয়, বরং অন্য কারোর অনুগ্রহের ফল। যেমন তার নামকরণ করা হয় হোসাইন বখশ (হোসাইনের দান), পীর বখশ (পীরের দান), আবদুর রসূল (রসূলের গোলাম), আবদুল উয্যা(উয্যা দেবতার দাস), আবদে শামস(সূর্য দাস) ইত্যাদি ইত্যাদি।

সূরার এ অংশটি অনুধাবন করার ব্যাপারে আরো একটি বড় ধরনের ভুল হয়ে থাকে। বিভিন্ন দুর্বল হাদীসের বর্ণনা এ ভুলের ভিতকে আরো শক্তিশালী করে দিয়েছে। শুরুতে একটি মাত্র প্রাণ থেকে মানব জাতির জন্মের সূচনা হবার কথা বলা হয়েছে। এ প্রথম মানব প্রাণটি হচ্ছে হযরত আদম আলাইহিস সালাম। তারপর তার সাথে সাথেই একটি পুরুষ ও একটি নারীর কথা বলা হয়েছে। তারা প্রথমে সুস্থ ও পূর্ণাবয়ব সম্পন্ন শিশুর জন্মের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে। তারপর যখন শিশু ভূমিষ্ঠ হয়, তখন তারা আল্লাহর দানের সাথে অন্যদেরকেও শরীক করে নেয়। এ বর্ণনাভঙ্গীর কারণে একদল লোক মনে করে নিয়েছে যে, আল্লাহর সাথে শরীককারী এ স্বামী-স্ত্রী নিশ্চয়ই হযরত আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালামই হবেন। মজার ব্যাপার এই যে, এ ভুল ধারণার সাথে আবার কিছু দুর্বল হাদীসের মিশ্রণ ঘটিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ গল্প রচনা করা হয়েছে। গল্পটি এ রকম যে, হযরত হাওয়ার ছেলে-মেয়ে পয়দা হবার পর মরে যেতো। অবশেষে এক সন্তান জন্মের পর শয়তানের প্ররোচনায় তিনি তার নাম আবদুল হারেস (শয়তানের বান্দা) রাখতে উদ্বুদ্ধ হন। সবচেয়ে মারাত্বক ও সর্বনাশা ব্যাপার হচ্ছে এই যে, এ হাদীসগুলোর মধ্য থেকে কোন কোনটির সনদ খোদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্তও পৌঁছিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু মূলত এ জাতীয় সমস্ত হাদীসই ভুল। কুরআনের বক্তব্যও এর সমর্থন করে না। কুরআন কেবল এতটুকুই বলছেঃ মানব জাতির যে প্রথম দম্পত্তির মাধ্যমে পৃথিবীতে মানব বংশের সূচনা হয়েছিল, তার স্রষ্টাও ছিলেন আল্লাহ, অন্য কেউ নয়। তাই সৃষ্টিকর্মে কেউ তার সাহায্যকারী ছিল না। তারপর প্রত্যেকটি পুরুষ ও নারীর মিলনে যে শিশু জন্ম নেয়, তার স্রষ্টাও সেই একই আল্লাহ, যার সাথে কৃত অঙ্গীকারের ছাপ তোমাদের সবার হৃদয়ে সংরক্ষিত আছে। তাই এ অঙ্গীকারের কারণে তোমরা আশা-নিরাশার দোলায় আন্দোলিত হয়ে যখন দোয়া করো, তখন সেই আল্লাহর কাছেই দোয়া করে থাকো। কিন্তু পরে আশা পূর্ণ হয়ে গেলে তোমাদের মাথায় আবার শিরকের উদ্ভব হয়। এ আয়াতে কোন বিশেষ পুরুষ ও বিশেষ নারীর কথা বলা হয়নি বরং মুশরিকদের প্রত্যেকটি পুরুষ ও নারীর অবস্থা এখানে তুলে ধরা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আর একটি কথাও প্রণিধানযোগ্য। এসব আয়াতে আল্লাহ‌ যাদের নিন্দাবাদ করেছেন তারা ছিল আরবের মুশরিক সম্প্রদায়। তাদের অপরাধ ছিল, তারা সুস্থ, সবল ও পূর্ণাবয়ব সম্পন্ন সন্তান জন্মের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতো কিন্তু সন্তানের জন্মের পর আল্লাহর এ দানে অন্যদেরকে অংশীদার করতো। নিঃসন্দেহে তাদের এ অবস্থা ছিল অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু বর্তমানে তাওহীদের দাবীদারদের মধ্যে আমরা যে শিরকের চেহারা দেখছি তা তার চাইতেও খারাপ। এ তাওহীদের তথাকথিত দাবীদাররা সন্তানও চায় আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের কাছে। গর্ভসঞ্চারের পর আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের নামে মানত মানে এবং সন্তান জন্মের পর তাদেরই আস্তানায় যেয়ে নজরানা নিবেদন করে। এরপরও জাহেলী যুগের আরবরাই কেবল মুশরিক, আর এরা নাকি পাক্কা তাওহীদবাদী! তাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত ছিল আর এদের জন্য রয়েছে নাজাতের গ্যারান্টি। তাদের গোমরাহীর কঠোর সমালোচনা ও নিন্দা করা হয়, কিন্তু এদের গোমরাহীর সমালোচনা করলে ধর্মীয় নেতাদের দরবারে বিরাট অস্থিরতা দেখা দেয়। কবি আলতাফ হোসাইন হালী তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘মুসাদ্দাস’-এ এ অবস্থারই চিত্র এঁকেছেনঃ

-------------------------------------

“অন্যে করে মূর্তি পূজা

সে হয় কাফের সন্দেহ নেই

অন্যে বানায় খোদার পুত্র

সে হয় কাফের সন্দেহ নেই

অগ্নিতে যে নোয়ায় মাথা

সে হয় কাফের সন্দেহ নেই

তারার শক্তি মানলে তুমি

কাফের হবে সন্দেহ নেই,

কিন্তু মু’মিন তারা তাই প্রশস্ত এসব পথই তাদের জন্য

করুক পূজা ইচ্ছা যাকে অনেক খোদার ভিন্ন ভিন্ন!

নবীকে বসাও যদি আল্লাহর আসনে

ইমামকে বসাও যদি নবীজির সামনে

পীরের মাজারে চাও সিন্নী চড়াও

শহীদের কবরে গিয়ে দোয়া যদি চাও

তবুও তাওহীদের গায়ে লাগে না আঁচড়

ঈমান অটুট থাকে ইসলাম অনঢ়।"

অনুবাদ: