আমাদের কাছে প্রথম বিবেচ্য বিষয় হলো, যখন একই কথার মধ্যে একের পর এক পাঁচটি বিশেষণ উল্লেখ করা হয়েছে এবং এর মধ্যে এমন কোন ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে না যা দিয়ে বুঝা যেতে পারে যে, কোন পর্যন্ত একটি জিসিসের গুণ-পরিচয়ের বর্ণনা শুরু হয়েছে তখন অযৌক্তিকভাবে শুধু অনুমানের ওপর ভিত্তি করে একথা বলা কতটা সঠিক ও যুক্তিযুক্ত হতে পারে যে, এখানে শুধু দু’টি বা তিনটি জিনিসের শপথ করা হয়েছে? বরং এক্ষেত্রে বক্তব্যের ধারাবাহিকতা দাবী করে যে, সম্পূর্ণ বাক্যকে কোন একটি জিনিসের গুণ বা পরিচিতির সাথে সম্পর্কিত বলে মেনে নেয়া উচিত। দ্বিতীয় কথা হলো, কুরআন মজীদে যেখানেই সন্দেহ পোষণকারী বা অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারীকে কোন অতীন্দ্রিয় বা গায়েবী সত্যকে বিশ্বাস কারানোর জন্য কোন জিনিস বা বস্তু বিশেষের শপথ করা হয়েছে সেখানেই শপথ প্রমাণ উপস্থাপনের সমার্থক হয়েছে অর্থাৎ তার উদ্দেশ্য হয় একথা বুঝানো যে, এ বস্তুটি বা বস্তু সকল সে সত্যটির যথার্থতা প্রমাণ করছে। এটা তো স্পষ্ট যে, এ উদ্দেশ্যে একটি অতীন্দ্রিয় বা গায়েবী বস্তুর পক্ষে আরেকটি অতীন্দ্রিয় বা গায়েবী বস্তুর প্রমাণ স্বরূপ পেশ করা ঠিক নয়। বরং অতীন্দ্রিয়বস্তুর প্রমাণ হিসেবে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুর প্রমাণ পেশ করাই যথার্থ এবং যথোপযুক্ত হতে পারে। সুতরাং আমাদের মতে এর সঠিক তাফসীর হলো এই যে, এর অর্থ বাতাস। যারা বলেছেন যে, পাঁচটি জিনিসের অর্থ ফেরেশতা, আমার মতে তাদের ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ফেরেশতাও কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার মতই অতীন্দ্রিয় বিষয়।
এবার চিন্তা করে দেখুন, বাতাসের এ ভিন্ন ভিন্ন অবস্থা কিয়ামতের বাস্তবতা কিভাবে প্রমাণ করছে। যেসব উপকরণের জন্য পৃথিবীর ওপর জীব-জন্তু ও উদ্ভিদের জীবন সম্ভব হয়েছে তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো বাতাস। সব প্রজাতির জীবনের সাথে বাতাসের বর্ণিত গুণাবলীর যে সম্পর্ক আছে তা এ কথারই সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, কোন একজন মহা শক্তিমান সুনিপুণ স্রষ্টা আছেন যিনি মাটির এ গ্রহে জীবন সৃষ্টির ইচ্ছা করেছেন এবং এ উদ্দেশ্যে এখানে এমন একটি জিনিস সৃষ্টি করলেন যার গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য জীবন্ত মাখলুকাতের বেঁচে থাকার জন্য যা প্রয়োজন তার সাথে হুবহু সামঞ্জস্যশীল। তা সত্ত্বেও তিনি শুধু এতটুকুই করেননি যে, পৃথিবীটার গায়ে বাতাসের একটি চাদর জড়িয়ে রেখে দিয়েছেন। বরং নিজের কুদরতে ও জ্ঞান দ্বারা তিনি এ বাতাসের মধ্যে বৈচিত্রপূর্ণ অসংখ্য অবস্থার সৃষ্টি করেছেন। লক্ষ কোটি বছর ধরে তার ব্যবস্থাপনা এভাবে হয়ে আসছে যে, সে বৈচিত্রপূর্ণ অবস্থার কারণে ভিন্ন ভিন্ন ঋতুর সৃষ্টি হচ্ছে। কখনো বাতাস বন্ধ হয়ে গুমট অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কখনো স্নিগ্ধ শীলত বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। কখনো গরম পড়ে আবার কখনো ঠাণ্ডা পড়ে। কখনো মেঘের ঘনঘটায় চারদিকে আচ্ছ্ন্ন হয়ে যায় আবার কখনো বাতাসে মেঘ ভেসে যায়। কখনো আরামদায়ক বাতাস বয়ে যায় আবার কখনো প্রলংকরী ঝড়-ঝঞ্চ্বার আবির্ভাব ঘটে। কখনো অত্যন্ত উপকারী বৃষ্টিপাত হয় আবার কখনো বৃষ্টির অভাবে দুর্ভিক্ষ দেখা যায়। মোটকথা এক রকম বাতাস নয়, বরং বিভিন্ন সময়ে নানা রকমের বাতাস প্রবাহিত হয় এবং প্রত্যেক প্রকারের বাতাস কোন না কোন উদ্দেশ্য পূরণ করে। এ ব্যবস্থা একটি অজেয় ও পরাক্রমশালী শক্তির প্রমাণ, যার পক্ষে জীবন সৃষ্টি করা যেমন অসম্ভব নয় তেমনি তাকে ধ্বংস করে পুনরায় সৃষ্টি করাও অসম্ভব নয়। অনুরূপভাবে এ ব্যবস্থাপনা পূর্ণমাত্রায় জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তারও প্রমাণ। কোন অজ্ঞ ও নির্বোধ লোকই কেবল একথা মনে করতে পারে যে, এসব কাজ-কারবার শুধু খেলাচ্ছলে করা হচ্ছে। এর পেছনে কোন মহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নেই। এ বিস্ময়কর ব্যবস্থার সামনে মানুষ এত অসহায় যে, সে নিজের প্রয়োজনেও কোন সময় উপকারী বাতাস প্রবাহিত করতে পারে না। আবার ধ্বংসত্মক তুফানের আগমনকে ঠেকাতেও পারে না। সে যতই ঔদ্ধত্য, অসচেতনতা এক গুঁয়েমী ও হঠকারিতা দেখাক না কেন কোন না কোন সময় এ বাতাসই তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সর্বোপরি এক মহাশক্তি তৎপর আছেন যিনি জীবনের এ সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয় উপকরণকে যখন ইচ্ছা তার জন্য রহমত এবং যখন ইচ্ছা তার জন্য ধ্বংসের কারণ বানিয়ে দিতে পারেন। মানুষ তার কোন সিদ্ধান্তকেই রোধ করার ক্ষমতা রাখে না। (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আল জাসিয়া, টীকা৭আয যারিয়াত, টীকা ১থেকে ৪।)