আয়াত
১১ ) কখখনো নয়, ৩ এটি তো একটি উপদেশ, ৪
كَلَّآ إِنَّهَا تَذْكِرَةٌ ١١
১২ ) যার ইচ্ছা এটি গ্রহণ করবে।
فَمَن شَآءَ ذَكَرَهُۥ ١٢
১৩ ) এটি এমন সব বইতে লিখিত আছে, যা সম্মানিত,
فِى صُحُفٍ مُّكَرَّمَةٍ ١٣
১৪ ) উন্নত মর্যাদা সম্পন্ন ও পবিত্র ৫
مَّرْفُوعَةٍ مُّطَهَّرَةٍۭ ١٤
১৫ ) এটি মর্যাদাবান
بِأَيْدِى سَفَرَةٍ ١٥
১৬ ) ও পূত চরিত্র লেখকদের ৬ হাতে থাকে। ৭
كِرَامٍۭ بَرَرَةٍ ١٦
১৭ ) লানত ৮ মানুষের প্রতি, ৯ সে কত বড় সত্য অস্বীকারকারী! ১০
قُتِلَ ٱلْإِنسَٰنُ مَآ أَكْفَرَهُۥ ١٧
১৮ ) কোন্ জিনিস থেকে আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন?
مِنْ أَىِّ شَىْءٍ خَلَقَهُۥ ١٨
১৯ ) এক বিন্দু শুত্রু থেকে ১১ আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন,
مِن نُّطْفَةٍ خَلَقَهُۥ فَقَدَّرَهُۥ ١٩
২০ ) পরে তার তকদীর নির্দিষ্ট করেছেন, ১২ তারপর তার জন্য জীবনের পথ সহজ করেছেন ১৩
ثُمَّ ٱلسَّبِيلَ يَسَّرَهُۥ ٢٠
৩.
অর্থাৎ এমনটি কখনো করো না। যেসব লোক আল্লাহকে ভুলে আছে এবং যারা নিজেদের দুনিয়াবী সহায়-সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তির অহংকারে মত্ত হয়ে আছে, তাদেরকে অযথা গুরুত্ব দিয়ো না। ইসলামের শিক্ষা এমন কোন জিনিস নয় যে, যে ব্যক্তি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকে তার সামনে নতজানু হয়ে তা পেশ করতে হবে। আবার এই ধরনের অহংকারী লোককে ইসলামের দিকে আহবান করার জন্য এমন ধরনের কোন প্রচেষ্টা চালানোও তোমার মর্যাদা বিরোধী, যার ফলে সে এ ভুল ধারণা করে বসে যে, তার সাথে তোমার কোন স্বার্থ জড়িত আছে এবং সে মেনে নিলে তোমার দাওয়াত সম্প্রসারিত হবার পথ প্রশস্ত হবে। অন্যথায় তুমি ব্যর্থ হয়ে যাবে। সে সত্যের যতটা মুখাপেক্ষী নয় সত্যও তার ততটা মুখাপেক্ষী নয়।
৪.
অর্থাৎ কুরআন।
৫.
অর্থাৎ সব ধরনের মিশ্রণ থেকে মুক্ত ও পবিত্র। এর মধ্যে নির্ভেজাল সত্যের শিক্ষা পেশ করা হয়েছে। কোন ধরনের বাতিল, অসৎ ও অন্যায় চিন্তা ও মতবাদের কোন স্থানই সেখানে নেই। দুনিয়ার অন্যান্য ধর্মগুলো যেসব ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধে ভরে তোলা হয়েছে তার সামান্য গন্ধটুকুও এখানে নেই। মানুষের চিন্তা-ভাবনা কল্পনা বা শয়তানী ওয়াসওয়াসা ও দুরভিসন্ধি সবকিছু থেকে তাকে পাক-পবিত্র রাখা হয়েছে।
৬.
এখানে একদল ফেরেশতার কথা বলা হয়েছে। তাঁরা আল্লাহর সরাসরি নির্দেশ অনুসারে কুরআনের বিভিন্ন অংশ লেখা, সেগুলোর হেফাজত করা এবং সেগুলো হুবহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌঁছিয়ে দেবার দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁদের প্রশংসায় এখানে দু’টি শব্দ উচ্চারিত হয়েছে। একটি হচ্ছে মর্যাদাবান এবং অন্যটি পূত পবিত্র। প্রথম শব্দটির মাধ্যমে একথা প্রকাশ করা হয়েছে যে, তাঁরা এত বেশী উন্নত মর্যাদার অধিকারী যার ফলে যে আমানত তাঁদের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে তা থেকে সামান্য পরিমাণ খেয়ানত করাও তাঁদের মতো উন্নত মর্যাদার অধিকারী সত্তার পক্ষে কোনক্রমেই সম্ভব নয়। আর দ্বিতীয় শব্দটি ব্যবহার করে একথা জানানো হয়েছে যে, এই কিতাবের বিভিন্ন অংশ লেখার, সেগুলো সংরক্ষণ করার এবং সেগুলো রসূলের কাছে পৌঁছাবার যে দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত হয়েছে পূর্ণ বিশ্বস্ততা সহকারে তাঁরা সে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
৭.
যে ধারাবাহিক বর্ণনায় এই আয়াতগুলো উদ্ধৃত হয়েছে সে সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করলে জানা যায়, এখানে নিছক কুরআন মজীদের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করার জন্য তার এই প্রশংসা করা হয়নি। বরং এর আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেসব অহংকারী লোক ঘৃণাভরে এর দাওয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, তাদেরকে পরিষ্কারভাবে একথা জানিয়ে দেয়া যে, এই মহান কিতাবটি তোমাদের সামনে পেশ করা হবে এবং তোমরা একে গ্রহণ করে তাকে ধন্য করবে, এই ধরনের কোন কার্যক্রম এর জন্য কোন প্রয়োজন নেই এবং এটি এর অনেক ঊর্ধ্বে। এ কিতাব তোমাদের মুখাপেক্ষী নয় বরং তোমরাই এর মুখাপেক্ষী। নিজেদের ভালো চাইলে তোমাদের মন মগজে যে শয়তান বাসা বেঁধে আছে তাকে সেখানে থেকে বের করে দাও এবং সোজা এই দাওয়াতের সামনে মাথা নত করে দাও। নয়তো তোমরা এর প্রতি যে পরিমাণ অমুখাপেক্ষিতা দেখাচ্ছো এটি তার চাইতে অনেক বেশী তোমাদের অমুখাপেক্ষী। তোমরা একে ঘৃণ্য ও তুচ্ছ জ্ঞান করলে এর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বে সামান্যতম পার্থক্যও দেখা দেবে না। তবে এর ফলে তোমাদের গর্ব ও অহংকারের গগণচুম্বী ইমারত ভেঙে ধূলোয় মিশিয়ে দেয়া হবে।
৮.
এখান থেকে আল্লাহর সত্য দ্বীনের প্রতি মুখাপেক্ষিতা অস্বীকার করে আসছিল এমন ধরনের কাফেররা ক্রোধের লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয়েছে। এর আগে সূরার শুরু থেকে ১৬ আয়াত পর্যন্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে। সেখানে পর্দান্তরালে কাফেরদের প্রতি ক্রোধ বর্ষণ করা হয়েছে। সেখানে বর্ণনাভংগী ছিল নিম্নরূপঃ হে নবী! একজন সত্য সন্ধানীকে বাদ দিয়ে আপনি এ কাদের পেছনে নিজের শক্তি-সামর্থ্য ব্যয় করছেন? সত্যের দাওয়াতের দৃষ্টিতে এদের তো কোন মূল্য ও মর্যাদা নেই। আপনার মতো একজন মহান মর্যাদা সম্পন্ন নবীর পক্ষে কুরআনের মতো উন্নত মর্যাদা সম্পন্ন কিতাব এদের সামনে পেশ করার কোন প্রয়োজন নেই।
৯.
কুরআন মজীদের এই ধরনের বিভিন্ন স্থানে মানুষ শব্দটি মানবজাতির প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ব্যবহৃত হয়নি। বরং সেখানে মানুষ বলতে এমন সব লোককে বুঝানো হয়েছে যাদের অপছন্দনীয় গুণাবলীর নিন্দা করাই মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে। কোথাও অধিকাংশ মানুষের মধ্যে ঐসব অপছন্দনীয় গুণাবলী পাওয়া যাওয়ার কারণে “মানুষ” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। আবার কোথাও এর ব্যবহারের কারণ এই দেখা দিয়েছে যে, বিশেষ কিছু লোককে নির্দিষ্ট করে যদি তাদের নিন্দা বা তিরস্কার করা হয় তাহলে তার ফলে তাদের মধ্যে জিদ ও হঠধর্মিতা সৃষ্টি হয়ে যায়। তাই এক্ষেত্রে উপদেশ দেবার জন্য সাধারণভাবে কথা বলার পদ্ধতিই বেশী প্রভাবশালী প্রমাণিত হয়।
১০.
এর আর একটি অর্থ হতে পারে। অর্থাৎ কোন জিনিসটি তাকে সত্য অস্বীকার করতে উদ্বুদ্ধ করেছে? অন্য কথায় বলা যায়, কিসের জোরে সে কুফরী করে? কুফরী অর্থ এখানে সত্য অস্বীকার হয়, নিজের উপকারীর উপকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করাও হয়, আবার নিজের স্রষ্টা, মালিক, প্রভু ও রিযিকদাতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহীর মতো আচরণ করাও হয়।
১১.
অর্থাৎ প্রথমে তো তার নিজের মৌলিক সত্তা সম্পর্কে একটু চিন্তা করা দরকার। কোন্ জিনিস থেকে সে অস্তিত্ব লাভ করেছে? কোথায় সে লালিত হয়েছে? কোন্ পথে সে দুনিয়ায় এসেছে? কোন্ ধরনের অসহায় অবস্থার মধ্যে দুনিয়ায় তার জীবনের সূচনা হয়েছে? নিজের এই প্রকৃত অবস্থা ভুলে গিয়ে সে কেমন করে “আমার সমতুল্য কেউ নেই” বলে ভুল ধারণা পোষণ করতে পারে? নিজের স্রষ্টার প্রতি বিদ্রূপ ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার প্রবণতা সে কোথা থেকে পেলো? (এই একই কথা সূরা ইয়াসীনের ৭৭-৭৮ আয়াতে বলা হয়েছে)।
১২.
অর্থাৎ সে মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় তার তকদীর নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। সে কোন্ লিংগের হবে? তার গায়ের রং কি হবে? সে কতটুকু উঁচু হবে? তার দেহ কতটুকু কি পরিমাণ মোটা ও পরিপুষ্ট হবে? তার অংগ-প্রত্যংগগুলো কতটুকু নিখুঁত ও অসস্পূর্ণ হবে? তার চেহারা সুরাত ও কণ্ঠস্বর কেমন হবে? তার শারীরিক বল কতটুকু হবে? তার বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা কতটুকু হবে? কোন্ দেশে, পরিবারে এবং কোন্ অবস্থায় ও পরিবেশে সে জন্মগ্রহণ করবে, লালিত-পালিত হবে এবং শেষ পর্যন্ত কি হয়ে গড়ে উঠবে? তার ব্যক্তিত্ব গঠনে বংশ ও পরিবারের প্রভাব, পরিবেশের প্রভাব এবং তার নিজের ব্যক্তিসত্তা ও অহমের প্রভাব কি পর্যায়ে ও কতটুকু থাকবে? দুনিয়ার জীবনে সে কী ভূমিকা পালন করবে? পৃথিবীতে কাজ করার জন্য তাকে কতটুকু সময় দেয়া হবে? এই তকদীর থেকে এক চুল পরিমাণ সরে আসার ক্ষমতাও তার নেই। এর মধ্যে সামান্যতম পরিবর্তনও সে করতে পারবে না। এত সব সত্ত্বেও তার একি দুঃসাহস, যে স্রষ্টার তৈরি করা তকদীরের সামনে সে এতই অসহায়, তার মোকাবেলায় সে কুফরী করে ফিরছে।
১৩.
অর্থাৎ দুনিয়ায় তার জীবন যাপনের সমস্ত উপকরণ সরবরাহ করেছেন। নয়তো স্রষ্টা যদি তার এই শক্তিগুলো ব্যবহার করার মতো এসব উপায় উপকরণ পৃথিবীতে সরবরাহ না করতেন তাহলে তার দেহ ও মস্তিস্কের সমস্ত শক্তি ব্যর্থ প্রমাণিত হতো। এছাড়াও স্রষ্টা তাকে এ সুযোগও দিয়েছেন যে, সে নিজের জন্য ভালো বা মন্দ, কৃতজ্ঞতা বা অকৃতজ্ঞতা, আনুগত্য বা অবাধ্যতার মধ্যে যে কোন পথ চায় গ্রহণ করতে পারে। তিনি উভয় পথই তার সামনে খুলে রেখে দিয়েছেন এবং প্রত্যেকটি পথই তার জন্য সহজ করে দিয়েছেন। এখন এর মধ্য থেকে যে পথে ইচ্ছা সে চলতে পারে।