(১) নিজের ভুলের জন্য সে খোঁড়া অজুহাত ও মনগড়া ব্যাখ্যা পেশ করবে না। বরং যে ভুল হয়ে গেছে সহজ সরলভাবে তা মেনে নেবে।
(২) তার আগের কার্যকলাপ দেখা হবে। সে আন্তরিকতাহীনতার দাগী ও অপরাধী কিনা তা যাচাই করা হবে। যদি আগে সে ইসলামের জামায়াতের এক সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে থাকে এবং তার জীবনের সমস্ত কার্যকলাপে আন্তরিক সেবা, ত্যাগ, কুরবানী ও ভালো কাজে অগ্রবর্তী থাকার রেকর্ড থেকে থাকে, তাহলে ধরে নেয়া হবে যে, বর্তমানে যে ভুল সে করেছে তা ঈমান ও আন্তরিকতাহীনতার ফল নয় বরং তা নিছক সাময়িক সৃষ্ট একটি দুর্বলতা বা পদস্খলন ছাড়া আর কিছুই নয়।
(৩) তার ভবিষ্যত কার্যকলাপের ওপর নজর রাখা হবে। দেখতে হবে, তার ভুলের স্বীকৃতি কি নিছক মৌখিক, না তার মধ্যে লজ্জার গভীর অনুভূতি রয়েছে। যদি নিজের ভুল সংশোধনের জন্য তাকে অস্থির ও উৎকণ্ঠিত দেখা যায় এবং তার প্রতিটি কথা থেকে এ কথা প্রকাশ হয় যে, তার জীবনে যে ঈমানী ত্রুটির চিত্র ভেসে উঠেছিল তাকে মুছে ফেলার ও তা সংশোধন করার জন্য সে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তাহলে সে যথার্থই লজ্জিত হয়েছে বলে মনে করা হবে। এ লজ্জা ও অনুশোচনাই হবে তার ঈমান ও আন্তরিকতার প্রমাণ।
মুহাদ্দিসগণ এ আয়াতগুলো নাযিলের পটভূমী হিসেবে যে ঘটনা বর্ণনা করেছেন তা থেকে এ বিষয়বস্তুটি আয়নার মতো স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। তাঁরা বলেন, এ আয়াতগুলো আবু লুবাবাহ ইবনে আবদুল মুনযির ও তাঁর ছ'জন সাথীর প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছিল। হিজরতের আগে আকাবার বাইআতের সময় যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন আবু লুবাবাহ ছিলেন তাদের একজন। বদর, ওহোদ ও অন্যান্য যুদ্ধে তিনি বরাবর অংশ গ্রহণ করেন। কিন্তু তাবুক যুদ্ধের সময় মানসিক দুর্বলতার তার ওপর প্রধান্য বিস্তার করে এবং কোন প্রকার শরয়ী ওযর ছাড়াই তিনি ঘরে বসে থাকেন। তার অন্য সাথীরাও ছিলেন তারই মতো আন্তরিকতা সম্পন্ন। তারাও এ একই প্রকার দুর্বলতার শিকার হন। নবী (সা.) যখন তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে এলেন এবং যারা পিছনে থেকে গিয়েছিল তাদের সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের মতামত কি তা তারা জানতে পারলেন তখন তারা ভীষণভাবে অনুতপ্ত হলেন। কোন প্রকার জিজ্ঞাসাবাদের আগেই তারা নিজেদেরকে একটি খুঁটির সাথে বেঁধে নেন এবং বলেন, আমাদের মাফ না করে দেয়া পর্যন্ত আমাদের জন্য আহার নিদ্রা হারাম। এ অবস্থায় আমাদের প্রাণ বায়ু বের হয়ে গেলেও আমরা তার পরোয়া করবো না। কয়েক দিন পর্যন্ত এভাবেই তারা বাঁধা অবস্থায় অনাহার অনিদ্রায় কাটান। এমনকি একদিন তারা বেহুশ হয়ে পড়ে যান। শেষে তাদের জানানো হলো, আল্লাহ ও তাঁর রসূল তোমাদের মাফ করে দিয়েছেন। তারা নবী (সা.) কে বলেন, ঘরের যে আরাম আয়েশ আমাদের ফরয থেকে গাফেল করে দিয়েছিল তা এবং নিজেদের সমস্ত ধন-সম্পদ আমরা আল্লাহর পথে দান করে দেবো, এটাও আমাদের তাওবার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু নবী (সা.) বলেন, সমস্ত ধন-সম্পদ দান করে দেবার দরকার নেই, শুধুমাত্র এক তৃতীয়াংশই যথেষ্ট। তদনুসারে তখনই তারা সেগুলো আল্লাহর পথে ওয়াকফ করে দেন। এ ঘটনাটি বিশ্লেষণ করলে পরিষ্কার জানা যায়, কোন ধরনের দুর্বলতা আল্লাহ মাফ করেন। উল্লিখিত মহান সাহাবীগণ এ ধরনের আন্তরিকতাহীন আচরণে অভ্যস্ত ছিলেন না। বরং তাদের বিগত জীবনের কার্যকলাপ তাদের ঈমানী নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দৃঢ়তার দৃষ্টান্তে পরিপূর্ণ ছিল। এবারেও রসূল ﷺ এর নিকট তাদের কেউ মিথ্যা অজুহাত পেশ করেননি। বরং নিজেদের ভুলকে নিজেরাই অকপটে ভুল হিসেবে স্বীকৃতি দেন। তাঁরা ভুলের স্বীকারোক্তি সহকারে নিজেদের কার্য ধারার মাধ্যমে একথা প্রমাণ করে দিয়েছের যে, তারা যথার্থই লজ্জিত হয়েছেন এবং নিজেদের গোনাহ মাফ করাবার জন্য অত্যন্ত অস্থির ও উদ্ধিগ্ন।
এখানে আলোচ্য আয়াতটিতে আর একটি মূল্যবান কথা বলা হয়েছে। সে কথাটি হচ্ছে, গোনাহ মাফের জন্য মুখ ও অন্তর দিয়ে তাওবা করার সাথে সাথে বাস্তব কাজের মাধ্যমেও তাওবা করতে হবে। আর আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ দান করা হচ্ছে বাস্তব তাওবার একটি পদ্ধতি। এভাবে নফসের মধ্যে যে দূষিত ময়লা আবর্জনা লালিত হচ্ছিল এবং যার কারণে মানুষ গোনাহে লিপ্ত হয়েছিল তা দূর হয়ে যায় এবং ভালো ও কল্যাণের দিকে ফিরে যাবার যোগ্যতা বেড়ে যায়। গোনাহ করার পর তা স্বীকার করার ব্যাপারটি এমন যেমন এক ব্যক্তি গর্তের মধ্যে পড়ে যায় এবং নিজের পড়ে যাওয়াটা সে অনুভব করতে পারে। তারপর নিজের গোনাহের ওপর তার লজ্জিত হওয়াটা এ অর্থ বহন করে যে, এ গর্তকে সে নিজের অবস্থানের জন্য বড়ই খারাপ জায়গা মনে করে এবং