مَا كَانَ لِلنَّبِىِّ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَن يَسْتَغْفِرُوا۟ لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوٓا۟ أُو۟لِى قُرْبَىٰ مِنۢ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَـٰبُ ٱلْجَحِيمِ
নবী ও যারা ঈমান এনেছে তাদের পক্ষে মুশরিকদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা, সঙ্গত নয়, তারা তাদের আত্মীয়-স্বজন হলেই বা কি এসে যায়, যখন একথা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামেরই উপযুক্ত। ১১১
১১১
কোন ব্যক্তির জন্য ক্ষমার আবেদন জানানোর অনিবার্য অর্থ হচ্ছে এই যে, আমরা তার প্রতি সহানুভূতিশীল এবং তাকে ভালবাসি। আমরা তার দোষকে ক্ষমা যোগ্য মনে করি। যারা বিশ্বস্তদের অন্তর্ভুক্ত এবং শুধুমাত্র গোনাহগার তাদের ক্ষেত্রে এ দুটো কথাই ঠিক। কিন্তু যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে তার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া তাকে ভালবাসা ও তার অপরাধকে ক্ষমা যোগ্য মনে করা শুধু যে নীতিগতভাবে ভুল তাই নয় বরং এর ফলে আমাদের নিজেদের বিশ্বস্ততা ও সন্দেহযুক্ত হয়ে পড়ে। আর যদি শুধুমাত্র আমাদের আত্মীয় বলে আমরা তাকে মাফ করে দিতে চাই তাহলে এর মানে হবে, আমাদের কাছে আত্মীয়তার সম্পর্ক আল্লাহর প্রতি বিশ্বস্ততার দাবীর তুলনায় অনেক বেশী মূল্যবান। আল্লাহ ও তার দ্বীনের প্রতি আমাদের ভালবাসা নির্ভেজাল ও শর্তহীন নয়। আল্লাহ দ্রোহীদের সাথে আমরা যে সম্পর্কে জুড়ে রেখেছি তার ফলে আমরা চাচ্ছি, আল্লাহ নিজেও যেন এ সম্পর্ক গ্রহণ করেন এবং আমাদের আত্মীয়কে যেন অবশ্যই ক্ষমা করে দেন, যদিও এ একই অপরাধ করার কারণে অন্যান্য অপরাধীদেরকে তিনি জাহান্নামের শাস্তি দিয়ে থাকেন। বস্তুত এ সমস্ত কথাই ভুল আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততার বিরোধী এবং সেই একনিষ্ঠ ঈমানের পরিপন্থী যার দাবী হচ্ছে, আল্লাহ ও তার দ্বীনের প্রতি আমাদের ভালবাসা নির্ভেজাল হতে হবে, আল্লাহর বন্ধু হবে আমাদের বন্ধু এবং তার শত্রু হবে আমাদের শত্রু। এ কারণে মহান আল্লাহ এ কথা বলেননি যে, তোমরা মুশরিকদের জন্য মগফিরাতের দোয়া করো না। বরং তিনি বলেছেন তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা তোমাদের পক্ষে শোভা পায় না। অর্থাৎ আমার মানা করায় যদি তোমরা বিরত থাকো তাহলে তো এর তেমন কোন গুরুত্ব থাকে না। মূলত তোমাদের মধ্যে আনুগত্যও বিশ্বস্ততার অনুভূতি এত বেশী তীব্র হওয়া উচিত যার ফলে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণাকারীদের সাথে সহানুভূতির সম্পর্ক রাখা এবং তাদের অপরাধকে ক্ষমা যোগ্য মনে করা তোমাদের নিজেদের কাছেই অশোভন ঠেকে।
এখানে আরো এতটুকু বুঝে নিতে হবে যে, আল্লাহ দ্রোহীদের প্রতি যে সহানুভূতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে তা কেবলমাত্র এমন পর্যায়ের সহানুভূতি যা দ্বীনের ব্যাপারে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে মানবিক সহানুভূতি এবং পার্থিব সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আত্মীয়তা ও রক্ত সম্পর্ক এবং স্নেহ-সম্প্রীতি পূর্ণ ব্যবহার এসব নিষিদ্ধ নয় বরং প্রশংসনীয়। আত্মীয় কাফের হোক বা মু’মিন, তার সামাজিক অধিকার অবশ্যই প্রদান করতে হবে। বিপদগ্রস্ত মানুষকে সকল অবস্থায় সাহায্য দিতে হবে। অভাবীকে যে কোন সময় সহায়তা দন করতে হবে। রুগ্ন ও আহতের সেবা ও তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের ব্যাপারে কোন ত্রুটি দেখানো যাবে না। ইয়াতীমের মাথায় অবশ্যই স্নেহের হত বুলাতে হবে। এসব ব্যাপারে কখনো মুসলিম ও অমুসলিমের বাচবিচার করা চলবে না।