فَلَا تُعْجِبْكَ أَمْوَٰلُهُمْ وَلَآ أَوْلَـٰدُهُمْ ۚ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُعَذِّبَهُم بِهَا فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا وَتَزْهَقَ أَنفُسُهُمْ وَهُمْ كَـٰفِرُونَ
তাদের ধন-দৌলত ও সন্তানের আধিক্য দেখে তোমরা প্রতারিত হয়ো না। আল্লাহ চান, এ জিনিসগুলোর মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনে তাদের শাস্তি দিতে। ৫৪ আর তারা যদি প্রাণও দিয়ে দেয়, তাহলে তখন তারা থাকবে সত্য অস্বীকার করার অবস্থায়। ৫৫
৫৪
অর্থাৎ এ ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্তুতির মায়ার ডোরে আবদ্ধ হয়ে তারা সে মুনাফিকী নীতি অবলম্বন করেছে, সেজন্য মুসলিম সমাজে তারা চরমভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে। এতদিনকার আরবীয় সমাজে তাদের যে প্রভাব-প্রতিপত্তি, মান-মর্যাদা, নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব ছিল নব্য ইসলামী সামাজ ব্যবস্থায় তা সম্পূর্ণ মাটিতে মিশে যাবে। যেসব নগণ্য দাস ও দাস পুত্ররা এবং মামুলী কৃষক ও রাখালরা ঈমানী নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার প্রমাণ পেশ করেছে, এ নতুন সমাজে তারা হবে মর্যাদাশীল অন্যদিকে বংশানুক্রমিক সমাজনেতা ও সমাজপতিরা নিজেদের দুনিয়া প্রীতির কারণে মর্যাদাহীন হয়ে পড়বে।
হযরত উমরের (রা.) মজলিসে একবার একটি ঘটনা ঘটেছিল। সেটি ছিল এ অবস্থার একটি চমকপ্রদ চিত্র। সুহাইল ইবনে আমর ও হারেস ইবনে হিশামের মতো বড় বড় কুরাইশী সরদাররা হযরত উমরের (রা.) সাথে সাক্ষাত করতে গিয়েছিলেন। সেখানে আনসার ও মহাজিরদের মধ্যে থেকে মামুলী পর্যায়ের কোন লোক হলেও হযরত উমর (রা.) তাকে ডেকে নিজের কাছে বসাচ্ছিলেন এবং এ সমাজপতিদের সরে তার জন্য জায়গা করে দিতে বলেছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে সমাজপতিরা সরতে সরতে একেবারে মজলিসের কিনারে গিয়ে পৌঁছলেন। বাইরে বের হয়ে এসে হারেস ইবনে হিশাম নিজের সাথীদের বললেন, তোমরা দেখলে তো আজ আমাদের সাথে কি ব্যবহার করা হলো? সুহাইল ইবনে আমর বললেন, এতে উমরের কোন দোষ নেই। দোষ আমাদের। কারণ আমাদের যখন এ দ্বীনের দিকে ডাকা হয়েছিল তখন আমরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম এবং এ লোকেরা দৌড়ে এসেছিল। তারপর এ দু সমাজপতি দ্বিতীয়বার হযরত উমরের কাছে হাযির হলেন। এবার তারা বললেন, আজ আমরা আপনার আচরণ দেখলাম। আমরা জানি, আমাদের ত্রুটির কারণেই এ অবস্থা হয়েছে। কিন্তু এখন এর প্রতিবিধানের কোন উপায় আছে কি? হযরত উমর (রা.) মুখে কোন জবাব দিলেন না। তিনি শুধু রোম সীমান্তের দিকে ইশারা করলেন। মানে, তিনি বলতে চাচ্ছিলেন, এখন জিহাদের ময়দানে জান-মাল উৎসর্গ করো, তাহলে হয়তো তোমরা নিজেদের হারানো মর্যাদা আবার ফিরে পাবে।
৫৫
অর্থাৎ এতসব লাঞ্ছনা-গাঞ্জনার মধ্যেও তাদের জন্য আরো বড় বিপদ হবে এই যে, তারা নিজেদের মধ্যে যে মুনাফিকী চরিত্র বৈশিষ্ট্য লালন করছে তার বদৌলতে মরার আগ পর্যন্ত তারা সত্যিকার ঈমান লাভের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত থাকবে এবং নিজেদের পার্থিব সুখ-সুবিধা ধ্বংস করার পর দুনিয়া থেকে এমন অবস্থায় বিদায় নেবে যে, তাদের আখেরাত হবে এর চাইতেও অনেক বেশী খারাপ।