لَوْ يَجِدُونَ مَلْجَـًٔا أَوْ مَغَـٰرَٰتٍ أَوْ مُدَّخَلًۭا لَّوَلَّوْا۟ إِلَيْهِ وَهُمْ يَجْمَحُونَ
যদি তারা কোন আশ্রয় পেয়ে যায় অথবা কোন গিরি-গুহা কিংবা ভিতরে প্রবেশ করার মত কোন জায়গা, তাহলে দৌড়ে গিয়ে সেখানে লুকিয়ে থাকবে। ৫৬
৫৬
মদীনার এ মুনাফিকদের বেশীরভাগই ধনী ও বয়স্ক। ইবনে কাসির তার আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া গ্রন্থে তাদের যে তালিকা দিয়েছেন তাতে শুধুমাত্র একজন যুবকের নাম পাওয়া যায়। তাদের একজনও গরীব নয়। এরা মদীনায় বিপুল-ভূ-সম্পত্তি ও চারদিকে ছড়িয়ে থাকা বিরাট কারবারের মালিক ছিল। সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও বহুদর্শিতা এদের সুযোগ-সন্ধানী ও সুবিধাবাদী বানিয়ে দিয়েছিল। ইসলাম যখন মদীনায় পৌঁছলো এবং জনবসতির একটি বড় অংশপূর্ণ আন্তরিকতা ও ঈমানী জোশের সাথে ইসলাম গ্রহণ করলো তখন এ শ্রেণীটি পড়লো উভয় সংকটে। তারা দেখলো এ নতুন দ্বীন একদিকে তাদের নিজেদের গোত্রের অধিকাংশ বরং তাদের ছেলেমেয়েদের পর্যন্ত ঈমানের নেশায় মাতিয়ে তুলেছে। তাদের বিপরীত সারিতে দাঁড়িয়ে তারা যদি এখন কুফরী ও অস্বীকারের ঝাণ্ডা উত্তোলিত করে রাখে, তাহলে তাদের নেতৃত্ব-সরদারী, প্রভাব-প্রতিপত্তি, মান-সম্মান, সুনাম-সুখ্যাতি, সবকিছুই হারিয়ে যাবে। এমনকি তাদের নিজেদের পারিবারিক পরিমণ্ডলেই তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণারআশঙ্কা দেখা দেবে। অন্যদিকে এ দ্বীনের সাথে সহযোগিতা করার অর্থ হবে, তাদেরকে সমগ্র আরবের এমনকি চারপাশের সমস্ত জাতি-গোত্র ও রাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকা। সত্য ও ন্যায় যে আসলেই একটি মূল্যবান জিনিস তার প্রেম সুধা পান করে যে মানুষ সব রকমের বিপদ আপদ মাথা পেতে নিতে পারে, এমনকি প্রয়োজনে নিজের জান-মালও পর্যন্ত কুরবানী করতে পারে। পার্থিব স্বার্থে মোহ ও প্রবৃত্তির গোলামীতে আকণ্ঠ ডুবে থাকার কারণে সে কথা উপলব্ধি করার যোগ্যতা তারা হারিয়ে ফেলেছিল। তারা দুনিয়ার যাবতীয় বিষয়কে শুধুমাত্র স্বার্থ ও সুবিধাবাদের দৃষ্টিতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। তাই ঈমানের দাবী করার মধ্যই তারা নিজেদের বৈষয়িক স্বার্থ সংরক্ষণের সবচেয়ে অনুকূল ও উপযোগী পথ খুঁজে পেয়েছিল। কারণ তারা এভাবে একদিকে নিজেদের জাতি-সম্প্রদায়ের মধ্যে নিজেদের বাহ্যিক মান-সম্ভ্রম, সহায়-সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্য যথাযথ ভাবে টিকিয়ে রাখতে পারবে। অন্যদিকে মু’মিন হওয়াটাও তাদের এড়িয়ে যাওয়া দরকার, যাতে আন্তরিকতার পথ অবলম্বন করার ফলে অনিবার্যভাবে যেসব বিপদ আপদ ও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, তার হাত থেকে রেহাই পেতে পারে। তাদের এ মানসিক অবস্থাকে এখানে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আসলে তারা তোমাদের সাথে নেই। বরং ক্ষতির ভয় তাদেরকে জবরদস্তি তোমাদের সাথে বেধে দিয়েছে। যে জিনিসটি তাদের নিজেদের কে মুসলমানদের মধ্যে গণ করাতে বাধ্য করেছে তা হচ্ছে এই ভীতি যে, মদীনায় থাকা অবস্থায় যদি তারা প্রকাশ্যে অমুসলিম হয়ে বাস করতে থাকে তাহলে তাদের সমস্ত মর্যাদা ও প্রতিপত্তি খতম হয়ে যাবে এমনকি স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের সাথেও তাদের সম্পর্কে ছেদ ঘটবে। আর যদি তারা মদীনা ত্যাগ করে তাহলে নিজেদের সম্পদ-সম্পত্তি ও ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করতে হবে। আবার কুফরীর প্রতিও তাদের এতটা আন্তরিকতা ছিল না যে, তার জন্য তারা এসব ক্ষতি বরদাশত করতে পারতো। এ উভয় সংকটে পড়ে তারা বাধ্য হয়ে মদীনায় থেকে গিয়েছে। মন না চাইলেও অনিচ্ছা সত্ত্বেও নামায পড়তো এবং যাকাতকে জরিমানা ভেবে হলেও অগত্যা আদায় করতো। নয়তো প্রতিদান জিহাদ, প্রতিদান কোন না কোন ভয়াবহ দুশমনের সাথে পাঞ্জা কষাকষি এবং প্রতিদান জান-ও মাল কুরবানীর যে বিপদ ঘাড়ে চেপে আছে তার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তারা এত বেশী অস্থির যে, যদি তারা সাধারণ কোন সুড়ঙ্গ তথা কোন গর্তও দেখতে পেতো এবং সেখানে গেলে নিরাপদ আশ্রয় লাভের সম্ভাবনা থাকতো তাহলে দৌড়ে গিয়ে তার মধ্যে ঢুকে পড়তো।