يَحْلِفُونَ بِٱللَّهِ مَا قَالُوا۟ وَلَقَدْ قَالُوا۟ كَلِمَةَ ٱلْكُفْرِ وَكَفَرُوا۟ بَعْدَ إِسْلَـٰمِهِمْ وَهَمُّوا۟ بِمَا لَمْ يَنَالُوا۟ ۚ وَمَا نَقَمُوٓا۟ إِلَّآ أَنْ أَغْنَىٰهُمُ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ مِن فَضْلِهِۦ ۚ فَإِن يَتُوبُوا۟ يَكُ خَيْرًۭا لَّهُمْ ۖ وَإِن يَتَوَلَّوْا۟ يُعَذِّبْهُمُ ٱللَّهُ عَذَابًا أَلِيمًۭا فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْـَٔاخِرَةِ ۚ وَمَا لَهُمْ فِى ٱلْأَرْضِ مِن وَلِىٍّۢ وَلَا نَصِيرٍۢ
তারা আল্লাহর নামে কসম খেয়ে খেয়ে বলে, আমরা ও কথা বলিনি। অথচ তারা নিশ্চয়ই সেই কুফরীর কথাটা বলেছে। ৮৩ তারা ইসলাম গ্রহণের পর কুফরী অবলম্বন করেছে। তারা এমনসব কিছু করার সংকল্প করেছিল যা করতে পারেনি। ৮৪ আল্লাহ ও তাঁর রসূল নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাব মুক্ত করে দিয়েছেন বলেই তাদের এত ক্রোধ ও আক্রোশ! ৮৫ এখন যদি তারা নিজেদের এহন আচরণ থেকে বিরত হয়, তাহলে তাদের জন্যই ভাল। আর যদি বিরত না হয়, তাহলে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন এবং পৃথিবীতে তাদের পক্ষ অবলম্বনকারী ও সাহায্যকারী কেউ থাকবে না।
৮৩
এখানে যে কথার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে সেটি কি ছিল? সে সম্পর্কে কোন নিশ্চিত তথ্য আমাদের কাছে পৌঁছেনি। তবে হাদীসে বেশ কিছু কুফরী কথাবার্তার উল্লেখ করা হয়েছে যা মুনাফিকরা বলাবলি করতো। যেমন এক মুনাফিকের ব্যাপারে বলা হয়েছেঃ
সে তার আত্মীয়দের মধ্য থেকে একজন মুসলিম যুবকের সাথে কথা বলার সময় বললোঃ যদি এ ব্যক্তি (অর্থাৎ নবী (সা.)) যা বলেছেন তা সব সত্য হয় তাহলে আমরা সবাই গাধার চেয়ে ও অধম। আর এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ তাবুকের সফরে এক জায়গায় নবী (সা.) এর উটনী হারিয়ে যায়। মুসলমানরা সেটি খুঁজে বেড়াতে থাকে। মুনাফিকদের একটি দল এ ব্যাপারটি নিয়ে নিজেদের মজলিসে খুব হাসাহাসি করতে থাকে। তারা বলতে থাকে, “ইনি তো আকাশের খবর খুব শুনিয়ে থাকেন কিন্তু নিজের উটনীর এখন কোথায় সে খবর তো তার জানা নেই।”
৮৪
তাবুক যুদ্ধের সময় মুনাফিকরা যেসব ষড়যন্ত্র করেছিল এখানে সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ষড়যন্ত্রটির মুহাদ্দিসগণ নিম্নোক্ত ভাবে বর্ণনা করেছেন। তাবুক থেকে ফেরার পথে মুসলিম সেনাদল যখন এমন একটি পাহাড়ী রাস্তার কাছে পৌঁছুল তখন কয়েক জন মুনাফিক নিজেদের মধ্যে ঠিক করে নিল যে, রাতে উঁচু গিরিপথ দিয়ে চলার সময় নবী (সা.) কে তারা পার্শ্ববর্তী গভীর খাদের মধ্যে ঠেলে ফেলে দেবে। নবী (সা.) একথা জানতে পারলেন। তিনি সমগ্র সেনাদলকে গিরিপথ এড়িয়ে উপত্যকার সমতল ভূমির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার হুকুম দিলেন এবং নিজে শুধুমাত্র আম্মার ইবনে ইয়াসার (রা.) ও হুযাইফা ইবনে ইয়ামনকে ﷺ নিয়ে গিরিপথের মধ্যে দিয়ে চলতে থাকলেন। পথিমধ্যে জানতে পারলেন, দশ বারোজন মুনাফিক মুখোশ পরে পিছনে পিছনে আসছে। এ অবস্থা দেখে হযরত হুযাইফা (রা.) তাদের দিকে ছুটলেন, যাতে তিনি যাতে তিনি তাদের উটগুলোকে আঘাত করে ফিরিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু তারা, দূর থেকেই হযরত হুযাইফাকে আসতে দেকে ভয় পেয়ে গেলো এবং ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে সঙ্গে সঙ্গেই পালিয়ে গেলো।
এ প্রসঙ্গে দ্বিতীয় যে ষড়যন্ত্রের কথা বর্ণিত হয়েছে সেটি হচ্ছেঃ নবী (সা.) ও তার বিশ্বস্ত সাথীরা রোমানদের সাথে লড়াই করে নিরাপদে ফিরে আসবেন, এটা মুনাফিকরা আশা করেনি। তাই তারা ঠিক করে নিয়েছিল যে যখনই ওদিকে কোন দুর্ঘটনা ঘটে যাবে তখনই তারা মদীনায় আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এর মাথায় রাজমুকুট পরিয়ে দেবে।
৮৫
রসূলুল্লাহ ﷺ এর হিজরতের পূর্বে মদীনা ছিল আরবের মফস্বল এলাকার ছোট শহরগুলোর মত একটি মামুলী শহর। আওস ও খাযরাজ গোত্র দু’টিও অর্থ সম্পদ ও মর্যাদা-প্রতিপত্তির দিক দিয়ে কোন উঁচু পর্যায়ের ছিল না। কিন্তু রসূলুল্লাহর ﷺ সেখানে আগমনের পর আনসাররা যখন তার সাথে সহযোগিতা করে নিজেদের বিপদের মুখে ঠেলে দিল। তখন মাত্র আট নয় বছরের মধ্যে এ মাঝারী ধরনের মফস্বল শহরটি সারা আরবের রাজধানীতে পরিণত হলো। আর সেই আওস ও খাযরাজের কৃষকরাই হয়ে গেলেন রাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও পরিচালক। চতুর্দিক ে থেকে বিজয়, গনীমতের মাল ও ব্যবসায় বাণিজ্যের মুনাফা লব্ধ সম্পদ এ কেন্দ্রিয় শহরটির ওপর বৃষ্টি ধারার মতো বর্ষিত হতে থাকলো। এ অবস্থাটিকে সামনে রেখে আল্লাহ তাদেরকে এ বলে লজ্জা দিচ্ছেন যে, আমার এ নবীর বদৌলতে তোমাদের ওপর এসব নিয়ামত বর্ষণ করা হচ্ছে, এটাই কি তার দোষ এবং এ জন্যই কি তার প্রতি তোমাদের এ ক্রোধ?