আত তওবা

১২৯ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
৯১ ) দুর্বল ও রুগ্ন লোকেরা এবং যেসব লোক জিহাদে শরীক হবার জন্য পাথেয় পায় না, তারা যদি পিছনে থেকে যায় তাহলে তাতে কোন ক্ষতি নেই, যখন তারা আন্তরিকভাবে আল্লাহ‌ ও রসূলের প্রতি বিশ্বস্ত। ৯২ এ ধরনের সৎকর্মশীলদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন অবকাশই নেই। আল্লাহ‌ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
لَّيْسَ عَلَى ٱلضُّعَفَآءِ وَلَا عَلَى ٱلْمَرْضَىٰ وَلَا عَلَى ٱلَّذِينَ لَا يَجِدُونَ مَا يُنفِقُونَ حَرَجٌ إِذَا نَصَحُوا۟ لِلَّهِ وَرَسُولِهِۦ مَا عَلَى ٱلْمُحْسِنِينَ مِن سَبِيلٍ وَٱللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ٩١
৯২ ) অনুরূপভাবে তাদের বিরুদ্ধে ও অভিযোগের কোন সুযোগ নেই যারা নিজেরা এসে তোমার কাছে আবেদন করেছিল, তাদের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করতে কিন্তু তুমি বলেছিলে আমি তোমাদের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করতে পারছি না। তখন তারা বাধ্য হয়ে ফিরে গিয়েছিল। তখন তাদের অবস্থা এ ছিল যে, তাদের চোখে দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল এবং নিজেদের অর্থ ব্যয়ে জিহাদে শরীক হতে অসমর্থ হবার দরুন তাদের মনে বড়ই কষ্ট ছিল। ৯৩
وَلَا عَلَى ٱلَّذِينَ إِذَا مَآ أَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَآ أَجِدُ مَآ أَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ تَوَلَّوا۟ وَّأَعْيُنُهُمْ تَفِيضُ مِنَ ٱلدَّمْعِ حَزَنًا أَلَّا يَجِدُوا۟ مَا يُنفِقُونَ ٩٢
৯৩ ) অবশ্যই অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে যারা বিত্তশালী হবার পরও জিহাদে অংশগ্রহণ করা থেকে তোমার কাছে অব্যাহতি চাচ্ছে। তারা পুরবাসিনীদের সাথে থাকাই পছন্দ করেছে। আল্লাহ‌ তাদের দিলে মোহর মেরে দিয়েছেন, তাই তারা এখন কিছুই জানে না। (যে, আল্লাহর কাজে তাদের এহেন কর্মনীতি গ্রহণের ফল কী দাঁড়াবে।)
إِنَّمَا ٱلسَّبِيلُ عَلَى ٱلَّذِينَ يَسْتَـْٔذِنُونَكَ وَهُمْ أَغْنِيَآءُ رَضُوا۟ بِأَن يَكُونُوا۟ مَعَ ٱلْخَوَالِفِ وَطَبَعَ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ ٩٣
৯৪ ) তোমরা যখন ফিরে তাদের কাছে পৌঁছবে তখন তারা নানা ধরনের ওযর পেশ করতে থাকবে। কিন্তু তুমি পরিষ্কার বলে দেবে, “বাহানাবাজী করো না, আমরা তোমাদের কোন কথাই বিশ্বাস করবো না। তোমাদের অবস্থা আল্লাহ‌ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। এখন আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূল তোমাদের কার্যকলাপ লক্ষ করবেন। তারপর তোমাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে, যিনি প্রকাশ্য ও গোপন সবকিছুই জানেন এবং তোমরা কি কাজ করছিলে তা তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন।”
يَعْتَذِرُونَ إِلَيْكُمْ إِذَا رَجَعْتُمْ إِلَيْهِمْ قُل لَّا تَعْتَذِرُوا۟ لَن نُّؤْمِنَ لَكُمْ قَدْ نَبَّأَنَا ٱللَّهُ مِنْ أَخْبَارِكُمْ وَسَيَرَى ٱللَّهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهُۥ ثُمَّ تُرَدُّونَ إِلَىٰ عَٰلِمِ ٱلْغَيْبِ وَٱلشَّهَٰدَةِ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ٩٤
৯৫ ) তোমরা ফিরে এলে তারা তোমাদের সামনে কসম খাবে, যাতে তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা করো। ঠিক আছে, তোমরা অবশ্যই তাদেরকে উপেক্ষা করো ৯৪ কারণ তারা অপবিত্র এবং তাদের আসল আবাস জাহান্নাম। তাদের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ এটি তাদের ভাগ্যে জুটবে।
سَيَحْلِفُونَ بِٱللَّهِ لَكُمْ إِذَا ٱنقَلَبْتُمْ إِلَيْهِمْ لِتُعْرِضُوا۟ عَنْهُمْ فَأَعْرِضُوا۟ عَنْهُمْ إِنَّهُمْ رِجْسٌ وَمَأْوَىٰهُمْ جَهَنَّمُ جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوا۟ يَكْسِبُونَ ٩٥
৯৬ ) তারা তোমাদের সামনে কসম খাবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হও। অথচ তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হলেও আল্লাহ‌ কখনো এহেন ফাসেকদের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন না।
يَحْلِفُونَ لَكُمْ لِتَرْضَوْا۟ عَنْهُمْ فَإِن تَرْضَوْا۟ عَنْهُمْ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يَرْضَىٰ عَنِ ٱلْقَوْمِ ٱلْفَٰسِقِينَ ٩٦
৯৭ ) এ বেদুইন আরবরা কুফরী ও মুনাফিকীতে বেশী কঠোর এবং আল্লাহ‌ তাঁর রসূলের প্রতি যে দ্বীন নাযিল করেছেন তার সীমারেখা সম্পর্কে তাদের অজ্ঞ হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। ৯৫ আল্লাহ সবকিছু জানেন, তিনি জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়।
ٱلْأَعْرَابُ أَشَدُّ كُفْرًا وَنِفَاقًا وَأَجْدَرُ أَلَّا يَعْلَمُوا۟ حُدُودَ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ عَلَىٰ رَسُولِهِۦ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ ٩٧
৯৮ ) এ গ্রামীণদের মধ্যে এমন এমন লোকও রয়েছে যারা আল্লাহর পথে কিছু ব্যয় করলে তাকে নিজেদের ওপর জোরপূর্বক চাপানো অর্থদণ্ড মনে করে ৯৬ এবং তোমাদের ব্যাপারে কালের আবর্তনের প্রতীক্ষা করছে (অর্থাৎ তোমরা কোন বিপদের মুখে পড়লে যে শাসন ব্যবস্থার আনুগত্যের শৃংখল তোমরা তাদের গলায় বেঁধে দিয়েছ তা তারা গলা থেকে নামিয়ে ফেলবে। ) অথচ মন্দের আবর্তন তাদের ওপরই চেপে বসেছে। আল্লাহ‌ সবকিছু শুনেন ও জানেন।
وَمِنَ ٱلْأَعْرَابِ مَن يَتَّخِذُ مَا يُنفِقُ مَغْرَمًا وَيَتَرَبَّصُ بِكُمُ ٱلدَّوَآئِرَ عَلَيْهِمْ دَآئِرَةُ ٱلسَّوْءِ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٩٨
৯৯ ) আবার এ গ্রামীণদের মধ্য থেকে কিছু লোক এমনও আছে যারা আল্লাহ‌ ও কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে এবং যা কিছু খরচ করে তাকে আল্লাহর দরবারে নৈকট্য লাভের এবং রসূলের কাছ থেকে রহমতের দোয়া লাভের উপায় হিসেবে গ্রহণ করে। হ্যাঁ,, অবশ্যি তা তাদের জন্য নৈকট্য লাভের উপায় এবং আল্লাহ‌ নিশ্চয়ই তাদেরকে রহমতের মধ্যে প্রবেশ করাবেন। অবশ্যি আল্লাহ‌ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
وَمِنَ ٱلْأَعْرَابِ مَن يُؤْمِنُ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ وَيَتَّخِذُ مَا يُنفِقُ قُرُبَٰتٍ عِندَ ٱللَّهِ وَصَلَوَٰتِ ٱلرَّسُولِ أَلَآ إِنَّهَا قُرْبَةٌ لَّهُمْ سَيُدْخِلُهُمُ ٱللَّهُ فِى رَحْمَتِهِۦٓ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ٩٩
১০০ ) মুহাজির ও আনসারদের মধ্য থেকে যারা সবার আগে ঈমানের দাওয়াত গ্রহণ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে এবং যারা পরে নিষ্ঠা সহকারে তাদের অনুসরণ করছে, আল্লাহ‌ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আল্লাহ‌ তাদের জন্য এমন বাগান তৈরী করে রেখেছেন যার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত হবে এবং তারা তার মধ্যে থাকবে চিরকাল। এটাই মহা সাফল্য।
وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلْأَوَّلُونَ مِنَ ٱلْمُهَٰجِرِينَ وَٱلْأَنصَارِ وَٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُم بِإِحْسَٰنٍ رَّضِىَ ٱللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا۟ عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّٰتٍ تَجْرِى تَحْتَهَا ٱلْأَنْهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًا ذَٰلِكَ ٱلْفَوْزُ ٱلْعَظِيمُ ١٠٠
৯২.
এ থেকে জানা যায় যারা বাহ্যত অক্ষম, তাদের জন্য ও নিছক শারীরিক দুর্বলতা, রুগ্নতা, বা নিছক অপরাগতা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভের জন্য নয়। বরং তাদের অক্ষমতা গুলো কেবলমাত্র তখনই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভের কারণ হতে পারে যখন তারা হবে আল্লাহ‌ ও তার রসূলের সত্যিকার বিশ্বস্ত ও অনুগত। অন্যথায় কোন ব্যক্তির মধ্যে যদি বিশ্বস্ততা না থাকে তাহলে তাকে শুধুমাত্র এ জন্য মাফ করা যেতে পারে না যে, কর্তব্য পালনের সময় সে রোগগ্রস্ত বা অপরাগ ছিল। আল্লাহ‌ শুধু বাইরের অবস্থাই দেখন না। তাই যেসব লোক অসুস্থতার ডাক্তারি সার্টিফিকেট অথবা বার্ধক্য ও শারীরিক ত্রুটির ওযর পেশ করবে তাদেরকে আল্লাহর দরবারেও তদ্রূপ অক্ষম গণ্য করা হবে এবং তাদেরকে আর কোন প্রকার জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে হবে না, একথা ঠিক নয়। তিনি তো তাদের প্রত্যেক ব্যক্তির মন-মানসিকতা বিশ্লেষণ করবেন, তার সমগ্র গোপন ও আপাতদৃষ্ট আচরণ নিরীক্ষণ করবেন এবং তাদের অক্ষমতা কোন বিশ্বস্ত বান্দার অক্ষমতার পর্যায়ভুক্ত ছিল না, বিদ্রোহীর পর্যায়ভুক্ত তা যাচাই করবেন কেউ কেউ এমন আছে যে, কর্তব্যের ডাক শুনে লাখো লাখো, শুকরিয়া আদায় করে এবং মনে মনে বলে, বড় ভালো সময়ে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। নয়তো কোনক্রমেই এ বিপদের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেতো না এবং অনর্থক আমাকে গঞ্জনা ভুগতে হতো। আবার অন্য একজন এ একই ডাক শুনে অস্থির না হয়ে উঠে বলে হায় কেমন এক সময় আমি অসুখে পড়লাম। যখন মাঠে ময়দানে নেমে কাজ করার সময় তখন কিনা আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে অযথা সময় নষ্ট করছি। একজন নিজের রোগকে কর্তব্যের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বাহানা হিসেবে ব্যবহার তো করছিলই এ সঙ্গে সে অন্যদেরকে ও এ কর্তব্য পালনে বাধা দেবার চেষ্টা করলো। অন্যজন বাধ্য হয়ে রোগা শয্যায় পড়ে থাকলেও বারবার নিজের ভাই-বেরাদার, আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জিহাদ করতে উদ্বুদ্ধ করে চলছিল এবং নিজের সেবা ও শুশ্রূষাকারীদেরকেও বলে চলছিল, আমাকে আল্লাহর হাতে সোর্পদ করে দিয়ে যাও। ওষুধ ও পথ্যের ব্যবস্থা কোন না কোনভাবে হয়ে যাবেই। আমার একজনের জন্য আল্লাহর সত্য দ্বীনের সেবায় নিবেদিত মূল্যবান সময়টি তোমরা নষ্ট করো না। একজন অসুস্থতার অজুহাতে ঘরে বসে থেকে যুদ্ধের সারাটা সময় মানুষের মন ভাঙ্গাবার, দুঃসংবাদ ছড়াবার, যুদ্ধের প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার এবং মুজাহিদের অনুপস্থিতিতে তাদের পারিবারিক কাজ করে। অন্যজন নিজেকে যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত হবার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হতে দেখে জেহাদের ঘরোয়া অঙ্গনকে (Home front) মজবুত রাখার জন্য নিজের সাধ্যমতো প্রচেষ্টা চালায়। বাহ্যত এরা দুজনই অক্ষম। কিন্তু আল্লাহর দৃষ্টিতে এ দুই ধরনের অক্ষমরা কখনো সমান হতে পারে না। আল্লাহ‌ যদি ক্ষমা করেন তাহলে কেবল এ দ্বিমত জনকেই ক্ষমা করবেন। আর প্রথমে ব্যক্তি নিজের অক্ষমতা সত্ত্বেও বিশ্বাসঘাতকতা ও নাফরমানীর অপরাধে অভিযুক্ত হবে।
৯৩.
যারা দ্বীনের খেদমত করার জন্য সর্বক্ষণ উদগ্রীব থাকে তারা যদি কোন সত্যিকার অক্ষমতার কারণে অথবা উপায়-উপকরণ বা মাধ্যম যোগাড় না হওয়ার দরুন কার্যত খেদমত করতে না পারে তাহলে মনে ঠিক তেমনি কষ্ট পায় যেমন কোন বৈষয়িক স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেলে অথবা কোন বড় আকারের লাভের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলে মনে কষ্ট হয়, তারা বাস্তবে কোন খেদমত না করলেও আল্লাহর কাছে খেদমাতকারী হিসেবেই গণ্য হবে। কারণ তারা হাত পা চালিয়ে কোন কাজ করতে পারিনি ঠিকই কিন্তু মানসিক দিক দিয়ে তারা সর্বক্ষণ কাজের মধ্যেই থাকে। এ কারণে তাবুক যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে এক জায়গায় নবী (সা.) তার সঙ্গী-সাথীদেরকে সম্বোধন করে বলেন,

إِنَّ بِالْمَدِينَةِ اقَوْامًا مَا سِرْتُمْ مَسِيرٍا وَلاَ قَطَعْتُمْ وَادِيًا إِلاَّ كَانُوا مَعَكُمْ

মদীনায় কিছু লোক আছে যারা প্রতিটি উপত্যকা অতিক্রম কালে এবং প্রতিটি যাত্রার সময় তোমাদের সাথে থেকেছে।

সাহবীগণ আবাক হয়ে বলেন, মদীনায় অবস্থান করেই, বলেন, হ্যাঁ মদীনায় অবস্থান করেই। কারণ অক্ষমতা তাদেরকে আটকে রেখেছিল নয়তো, তারা নিজেরা থেকে যাবার লোক ছিল না।

৯৪.
প্রথম বাক্যে উপেক্ষা করার অর্থ হচ্ছে, এড়িয়ে যাওয়া আর দ্বিতীয় বাক্যে এর অর্থ হচ্ছে সম্পর্ক ছিন্ন করা। অর্থাৎ তারা চায় যেন তাদের ব্যাপারে বেশী মাথা না ঘামাও এবং অনুসন্ধান না চালাও। কিন্তু তোমাদের পক্ষেও এটাই উত্তম যে, তাদের সাথে কোন সম্পর্ক রাখবে না এবং মনে করে নেবে যে, তোমরা তাদের থেকে আলাদা হয়ে গেছো এবং তারাও তোমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
৯৫.
আমরা আগেই বলে এসেছি, বেদুঈন আরব বলতে এখানে গ্রামীণ ও মরুবাসীদের কথা বলা হয়েছে। এরা মদীনার আশপাশে বসবাস করতো। মদীনায় একটি মজবুত ও সংগঠিত শক্তির উত্থান ঘটতে দেখে এরা প্রথমে শংকিত হয়। তারপর ইসলাম ও কুফরের সংঘাতকালে বেশ কিছুকাল তারা সুযোগ সন্ধানী নীতি অবলম্বন করতে থাকে। এরপর ইসলামী রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব হেজায ও নজদের একটি বড় অংশ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে এবং তার মোকাবিলায় বিরোধী গোত্রগুলোর শক্তি ভেঙ্গে পড়তে থাকলে তারা ইসলামের গণ্ডির মধ্যে প্রবেশ করাকেই সে সময় নিজেদের জন্য সুবিধাজনক ও নিরাপদ মনে করে। কিন্তু তাদের মধ্যে খুব কম লোকই ইসলামকে যথার্থ আল্লাহর সত্য দ্বীন মনে করে সাচ্চা দিলে ঈমান আনে এবং আন্তরিকতার সাথে তার দাবীসমূহ পূর্ণ করতে উদ্যোগী হয়। অধিকাংশ বেদুঈনের জন্য ইসলাম গ্রহণ করা ঈমান ও আকিদার ব্যাপার নয় বরং নিছক স্বার্থ, সুবিধা ও কৌশলের ব্যাপার ছিল। তারা চাচ্ছিল, ক্ষমতাসীন দলের সদস্যপদ লাভ করার ফলে যেসব সুবিধা ভোগ করা যায় শুধু সেগুলোই তাদের ভাগে এসে যাক। কিন্তু ইসলাম তাদের ওপর যেসব নৈতিক বিধি-নিষেধ আরোপ করেছিল ইসলাম গ্রহণ করার পরপরই তাদের ওপর নামায পড়ার ও রোযা করার যে বিধান আরোপিত হতো, যথারীতি তহশীলদার নিযুক্ত করে তাদের খেজুর বাগান ও শস্যগুলো থেকে যে যাকাত উসূল করা হতো, তাদের জাতীয় ইতিহাসে এ প্রথম বারের মতো তাদেরকে যে আইন-শৃংখলার রশিতে শক্তভাবে বাঁধা হয়েছিল এবং লুটতরাজের যুদ্ধের জন্য নয় বরং খালেস আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য দিনের পর দিন তাদের কাছে থেকে যে জানমালের কুরবানী চাওয়া হচ্ছিল-এসব জিনিস তাদের কাছে ছিল অতিশয় অপ্রীতিকর, বিরক্তিকর এবং এগুলোর হাত থেকে বাঁচার জন্য তারা নানা ধরনের চালবাজী ও টালবাহানার আশ্রয় নিতো। সত্য কি এবং তাদের ও সমস্ত মানুষের যথার্থ কল্যাণ কিসে, তা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা ছিল না। তারা শুধুমাত্র নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থ, নিজেদের আয়েশ-আরাম, নিজেদের জমি, উট, ছাগল-ভেড়া এবং নিজেদের তাঁবুর চারপাশের জগত নিয়ে মাথা ঘামাতো। এ ঊর্ধ্বের কোন জিনিসের প্রতি তাদের কোন আকর্ষণ ছিল না। অবশ্য পীর-ফকীরদের কাছে যেমন নযরানা পেশ করা হয় এবং তার বিনিময়ে তারা আয় বৃদ্ধি, বিপদ থেকে নিষ্কৃতি এবং এ ধরনের আরো বিভিন্ন উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য ঝাড়ফূঁক করেন, তাবীজ দেন ও তাদের জন্য দোয়া করেন ঠিক তেমনি ধরনের কোন কাল্পনিক জিনিসের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা পোষণের প্রবণতা হয়তো তাদের ছিল। কিন্তু এমন কোন ঈমান ও আকীদার জন্য তারা তৈরী ছিলো না, যা তাদের সমগ্র তামাদ্দুনিক ও সামাজিক জীবনকে একটি নৈতিক ও আইনগত বাঁধনে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলবে এবং এ সঙ্গে একটি বিশ্বজনীন সংস্কার কার্যক্রমের জন্য তাদের কাছে জান-মালের কুরবানীরও দাবী জানাবে।

তাদের এ অবস্থাটিকেই এখানে এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, নগরবাসীদের তুলনায় এ গ্রামীন ও মরুবাসী লোকেরাই বেশী মুনাফিকী ও ভণ্ডালীর আচরণ অবলম্বন করে থাকে এবং সত্যকে অস্বীকার করার প্রবণতা এদের মধ্যে বেশী দেখা যায়। আবার এর কারণও বলে দেয়া হয়েছে যে, নগরবাসীরা তো জ্ঞানীগুণী ও সত্যানুসারী লোকদের সাহচর্যে এসে দ্বীন ও তার বিধি-বিধান সম্পর্কে কিছু না কিছু জ্ঞান লাভ করতেও পারে কিন্তু এ বেদুইনরা যেহেতু সারাটা জীবন নিরেট খাদ্যন্বেষী জীব-জানোয়ারের মতো দিন রাত কেবল রুজী রোজগারের ধান্দায় লেগে থাকে এবং পশু জীবনের প্রয়োজনের চাইতে উন্নত পর্যায়ের কোন জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দেবার সময়ই তাদের থাকে না, তাই ইসলাম ও তার বিধি-বিধান সম্পর্কে তাদের অজ্ঞ থাকার সম্ভাবনাই বেশী।

এখানে এ বাস্তব সত্যটির প্রতি ইঙ্গিত করাও অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, এ আয়াতগুলো নাযিলের প্রায় দু'বছর পর হযরত আবু বকরের (রা.) খিলাফতের প্রাথমিক যুগে মুরতাদ হওয়ার ও যাকাত বর্জনের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল আলোচ্য আয়াতগুলোতে বর্ণিত ও কারণটি তার অন্যতম ছিল।

৯৬ .
এর অর্থ হচ্ছে তাদের থেকে যে যাকাত আদায় করা হয় তারা তাকে একটা জরিমান মনে করে। মুসাফিরদের আহার করাবার ও মেহমানদারীর যে দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত হয়েছে, তা তাদের কাছে অসহনীয় বোঝা মনে হয়। আর যদি কোন যুদ্ধ উপলক্ষে তারা কোন চাঁদা দেয় তাহলে আন্তরিকভাবে আবেগ আপ্লুত হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে দেয় না। বরং নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও শুধুমাত্র নিজেদের বিশ্বস্ততা প্রমাণ করার জন্য দিয়ে থাকে।
অনুবাদ: