আত তওবা

১২৯ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
৪১ ) ---বের হও, হালকা কিংবা ভারী যাই হওনা কেন, এবং জিহাদ করো আল্লাহর পথে নিজের ধন-প্রাণ দিয়ে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে। ৪৩
ٱنفِرُوا۟ خِفَافًا وَثِقَالًا وَجَٰهِدُوا۟ بِأَمْوَٰلِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ٤١
৪২ ) হে নবী! যদি সহজ লাভের সম্ভাবনা থাকতো এবং সফর হালকা হতো, তাহলে তারা নিশ্চয়ই তোমার পেছনে চলতে উদ্যত হতো। কিন্তু তাদের জন্য তো এ পথ বড়ই কঠিন হয়ে গেছে। ৪৪ এখন তারা আল্লাহর কসম খেয়ে খেয়ে বলবে, যদি আমরা চলতে পারতাম তাহলে অবশ্যই তোমাদের সাথে চলতাম। তারা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আল্লাহ‌ ভালো করেই জানেন তারা মিথ্যাবাদী।
لَوْ كَانَ عَرَضًا قَرِيبًا وَسَفَرًا قَاصِدًا لَّٱتَّبَعُوكَ وَلَٰكِنۢ بَعُدَتْ عَلَيْهِمُ ٱلشُّقَّةُ وَسَيَحْلِفُونَ بِٱللَّهِ لَوِ ٱسْتَطَعْنَا لَخَرَجْنَا مَعَكُمْ يُهْلِكُونَ أَنفُسَهُمْ وَٱللَّهُ يَعْلَمُ إِنَّهُمْ لَكَٰذِبُونَ ٤٢
৪৩ ) হে নবী! আল্লাহ‌ তোমাকে মাফ করুন, তুমি তাদের অব্যাহতি দিলে কেন? (তোমরা নিজের তাদের অব্যাহতি না দেয়া উচিত ছিল) এভাবে তুমি জানতে পারতে কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যুক। ৪৫
عَفَا ٱللَّهُ عَنكَ لِمَ أَذِنتَ لَهُمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكَ ٱلَّذِينَ صَدَقُوا۟ وَتَعْلَمَ ٱلْكَٰذِبِينَ ٤٣
৪৪ ) যারা আল্লাহ‌ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, তারা কখনো তোমার কাছে তাদের ধন ও প্রাণ দিয়ে জিহাদ করা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য আবেদন জানাবে না। আল্লাহ‌ মুত্তাকীদের খুব ভাল করেই জানেন।
لَا يَسْتَـْٔذِنُكَ ٱلَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ أَن يُجَٰهِدُوا۟ بِأَمْوَٰلِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ وَٱللَّهُ عَلِيمٌۢ بِٱلْمُتَّقِينَ ٤٤
৪৫ ) এমন আবেদন তো একমাত্র তারাই করে; যারা আল্লাহ‌ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে না, যাদের মনে রয়েছে সন্দেহ এবং এ সন্দেহের দোলায় তারা দোদুল্যমান। ৪৬
إِنَّمَا يَسْتَـْٔذِنُكَ ٱلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ وَٱرْتَابَتْ قُلُوبُهُمْ فَهُمْ فِى رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ ٤٥
৪৬ ) যদি সত্যি সত্যিই তাদের বের হবার ইচ্ছা থাকতো তাহলে তারা সেজন্য কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করতো। কিন্তু তাদের অংশগ্রহণ আল্লাহ‌ কাছে পছন্দনীয় ছিল না। ৪৭ তাই তিনি তাদের শিথিল করে দিলেন এবং বলে দেয়া হলোঃ বসে থাকো, যারা বসে আছে তাদের সাথে।
وَلَوْ أَرَادُوا۟ ٱلْخُرُوجَ لَأَعَدُّوا۟ لَهُۥ عُدَّةً وَلَٰكِن كَرِهَ ٱللَّهُ ٱنۢبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيلَ ٱقْعُدُوا۟ مَعَ ٱلْقَٰعِدِينَ ٤٦
৪৭ ) যদি তারা তোমাদের সাথে বের হতো তাহলে তোমাদের মধ্যে অনিষ্ট ছাড়া আর কিছুই বাড়াতো না। তারা ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের মধ্যে প্রচেষ্টা চালাতো। আর তোমাদের লোকদের অবস্থা হচ্ছে, তাদের মধ্যে এখনো এমন লোক আছে যারা তাদের কথা আড়ি পেতে শোনে। আল্লাহ‌ এ জালেমদের খুব ভাল করেই চেনেন।
لَوْ خَرَجُوا۟ فِيكُم مَّا زَادُوكُمْ إِلَّا خَبَالًا وَلَأَوْضَعُوا۟ خِلَٰلَكُمْ يَبْغُونَكُمُ ٱلْفِتْنَةَ وَفِيكُمْ سَمَّٰعُونَ لَهُمْ وَٱللَّهُ عَلِيمٌۢ بِٱلظَّٰلِمِينَ ٤٧
৪৮ ) এর আগেও এরা ফিতনা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে এবং তোমাদের ব্যর্থ করার জন্য ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন ধরনের কৌশল খাটিয়েছে। এ সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সত্য এসে গেছে এবং আল্লাহ‌ উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।
لَقَدِ ٱبْتَغَوُا۟ ٱلْفِتْنَةَ مِن قَبْلُ وَقَلَّبُوا۟ لَكَ ٱلْأُمُورَ حَتَّىٰ جَآءَ ٱلْحَقُّ وَظَهَرَ أَمْرُ ٱللَّهِ وَهُمْ كَٰرِهُونَ ٤٨
৪৯ ) তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে বলে আমাকে অব্যাহতি দিন এবং আমাকে পাপের ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না। ৪৮ শুনে রাখো, এরা তো ঝুঁকির মধ্যেই পড়ে আছে ৪৯ এবং জাহান্নাম এ কাফেরদের ঘিরে রেখেছে। ৫০
وَمِنْهُم مَّن يَقُولُ ٱئْذَن لِّى وَلَا تَفْتِنِّىٓ أَلَا فِى ٱلْفِتْنَةِ سَقَطُوا۟ وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيطَةٌۢ بِٱلْكَٰفِرِينَ ٤٩
৫০ ) তোমরা ভাল কিছু হলে তাতাদের কষ্ট দেয় এবং তোমার ওপর কোন বিপদ এলে তারা খুশী মনে সরে পড়ে এবং বলতে থাকে, “ভালই হয়েছে, আমরা আগে ভাগেই আমাদের ব্যাপার সেরে নিয়েছি।”
إِن تُصِبْكَ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِن تُصِبْكَ مُصِيبَةٌ يَقُولُوا۟ قَدْ أَخَذْنَآ أَمْرَنَا مِن قَبْلُ وَيَتَوَلَّوا۟ وَّهُمْ فَرِحُونَ ٥٠
৪৩.
এখানে হালকা ও ভারী শব্দ দু’টি ব্যাপক অর্থবোধক। এর অর্থ হচ্ছে, বের হবার হুকুম যখন হয়ে গেছে তখন তোমাদের বের হয়ে পড়তে হবে। স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে হোক বা অনিচ্ছায়-অনাগ্রহে, সচ্ছলতায় ও সমৃদ্ধির মধ্যে হোক বা দারিদ্রের মধ্যে, বিপুল পরিমাণ সাজসরঞ্জাম থাক বা একেবারে নিঃসম্বল অবস্থায় হোক, অনুকূল অবস্থা হোক বা প্রতিকূল অবস্থা, যৌবন ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হও বা বৃদ্ধ দুর্বল হও, সর্বাবস্থায় বের হতে হবে।
৪৪.
অর্থাৎ মোকাবিলা রোমের মতো বড় শক্তির সাথে। একদিকে প্রচণ্ড গ্রীষ্মের মওসুম এসে গেছে এবং দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। তার ওপর নতুন বছরের বহু প্রত্যাশিত ফসল কাটার সময় এসে গেছে। এসব কারণে তাবুকের সফর তাদের কাছে বড়ই কঠিন ও চড়ামূল্যের বলে মনে হচ্ছিল।
৪৫.
কোন কোন মুনাফিক বানোয়াট ওযর পেশ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যুদ্ধে যাওয়া থেকে অব্যাহতি চেয়েছিল। তিনিও নিজের স্বভাবগত কোমলতা ও উদারতার ভিত্তিতে তারা যে নিছক ভাওতাবাজী করেছে, তা জানা সত্ত্বেও তাদের অব্যাহতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহ‌ এটা পছন্দ করেননি। এ ধরনের উদার নীতি সঙ্গত নয় বলে তাঁকে সতর্ক করে দিয়েছেন। অব্যাহতি দেবার কারণে এ মুনাফিকরা নিজেদের মুনাফিকী ও প্রতারণামূলক কার্যকলাপ গোপন করার সুযোগ পেয়ে গেলো। যদি তাদের অব্যাহতি না দেয়া হতো এবং তারপর তারা ঘরে বসে থাকতো তাহলে তখন তাদের মিথ্যা ঈমানের দাবী সর্বসম্মুখে প্রকাশ হয়ে পড়তো।
৪৬.
এ থেকে জানা যায়, ইসলাম ও কুফরীর দ্বন্দ্ব একটি মাপকাঠি স্বরূপ। এর মাধ্যমে খাঁটি মুমিন ও নকল ঈমানের দাবীদারের পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। এ দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে যে ব্যক্তি মনপ্রাণ দিয়ে ইসলামকে সমর্থন করে এবং নিজের সমস্ত শক্তি সামর্থ্য ও উপায় উপকরণ তাকে বিজয়ী করার সংগ্রামে নিয়োজিত করে এবং এ পথে কোন প্রকার ত্যাগ স্বীকারে কুণ্ঠিত হয় না, সেই সাচ্চা মুমিন। পক্ষান্তরে এ দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে যে ব্যক্তি ইসলামের সাথে সহযোগিতা করতে ইতস্তত করে এবং কুফরের শির উঁচু হবার বিপদ সামনে দেখেও ইসলামের বিজয়ের জন্য জান-মালের কুরবানী করতে কুণ্ঠিত হয়, তার এ মনোভাব ও কার্যকলাপ এ সত্যটিকে সুস্পষ্ট করে দেয় যে, তার অন্তরে ঈমান নেই।
৪৭.
অর্থাৎ মনের তাগিদ ছাড়া অনিচ্ছায় যুদ্ধযাত্রা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় ছিল না। কারণ তাদের মধ্যে যখন জিহাদে অংশগ্রহণ করার প্রেরণা ও সংকল্প অনুপস্থিত ছিল এবং ইসলামের বিজয়ের জন্য প্রাণপাত করার কোন ইচ্ছাই তাদের ছিল না তখন শুধুমাত্র মুসলমানদের সামনে লজ্জিত হবার ভয়ে অসন্তুষ্ট মনে অথবা কোন অনিষ্ট করার উদ্দেশ্যে তারা জোরেশোরে এগিয়ে আসতো এবং এটা সমূহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতো। পরবর্তী আয়াতে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা হয়েছে।
৪৮.
যেসব মুনাফিক মিথ্যা বানিয়ে পিছনে থেকে যাবার অনুমতি চাচ্ছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ এতই বেপরোয়া ছিল যে, আল্লাহর পথ থেকে পেছনে সরে যাবার জন্য ধর্মীয় ও নৈতিক ধরনের বাহানাবাজীর আশ্রয় নিতো। জাদ্দ ইবনে কায়েস নামক তাদের একজনের সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছেঃ সে নবী (সা.) এর খেদমতে হাযির হয়ে আরয করলো, আমি একজন সৌন্দর্য পিপাসু লোক আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা আমার এ দুর্বলতা জানে যে, মেয়েদের ব্যাপারে আমি সবর করতে পারি না। আমার ভয় হয়, রোমান মেয়েদের দেখে আমার পদস্খলন না হয়ে যায়। কাজেই আপনি আমাকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেবেন না এবং এ অক্ষমতার কারণে আমাকে এ জিহাদে অংশগ্রহণ করা থেকে রেহাই দিন।
৪৯.
অর্থাৎ তারা তো ফিতনা বা পাপের ঝুঁকি থেকে রেহাই পাওয়ার দুহাই দিচ্ছে কিন্তু আসলে তারা আকণ্ঠ ডুবে আছে মুনাফিকী, মিথ্যাচার ও রিয়াকারীর মত জঘন্য পাপের মধ্যে। নিজেদের ধারণা মতে তারা মনে করেছে, ছোট ছোট ফিতনার সম্ভাবনার ব্যাপারে ভয় ও পেরেশানি প্রকাশ করে তারা নিজেদের বড় ধরনের মুত্তাকী হবার প্রমাণ পেশ করে যাচ্ছে। অথচ কুফর ও ইসলামের চূড়ান্ত ও সিদ্ধান্তকর সংঘর্ষকালে ইসলামের পক্ষ সমর্থনে ইতস্তত করে তারা আরো বড় পাপ এবং আরো বড় ফিতনার মধ্যে নিজেদের ফেলে দিচ্ছে যার চাইতে বড় কোন ফিতনার কথা কল্পনাই করা যায় না।
৫০.
অর্থাৎ তাকওয়ার এ প্রদর্শনী তাদের জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখেনি। বরং মুনাফিকী লানতই তাদেরকে জাহান্নামের করাল গ্রাসে নিক্ষেপ করেছে।
অনুবাদ: