আল লাইল

২১ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
১১ ) আর তার ধন-সম্পদ তার কোন কাজে লাগবে যখন সে ধ্বংস হয়ে যাবে?
وَمَا يُغْنِى عَنْهُ مَالُهُۥٓ إِذَا تَرَدَّىٰٓ ١١
১২ ) নিঃসন্দেহে পথনির্দেশ দেয়া তো আমার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।
إِنَّ عَلَيْنَا لَلْهُدَىٰ ١٢
১৩ ) আর আসলে আমি তো আখেরাত ও দুনিয়া উভয়েরই মালিক।
وَإِنَّ لَنَا لَلْءَاخِرَةَ وَٱلْأُولَىٰ ١٣
১৪ ) তাই আমি তোমাদের সাবধান করে দিয়েছি জ্বলন্ত আগুন থেকে।
فَأَنذَرْتُكُمْ نَارًا تَلَظَّىٰ ١٤
১৫ ) যে চরম হতভাগ্য ব্যক্তি মিথ্যা আরোপ করেছে ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে
لَا يَصْلَىٰهَآ إِلَّا ٱلْأَشْقَى ١٥
১৬ ) সে ছাড়া আর কেউ তাতে ঝলসে যাবে না।
ٱلَّذِى كَذَّبَ وَتَوَلَّىٰ ١٦
১৭ ) আর যে পরম মুত্তাকী ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জনের জন্য নিজের ধন- সম্পদ দান করে
وَسَيُجَنَّبُهَا ٱلْأَتْقَى ١٧
১৮ ) তাকে তা থেকে দূরে রাখা হবে।
ٱلَّذِى يُؤْتِى مَالَهُۥ يَتَزَكَّىٰ ١٨
১৯ ) তার প্রতি কারো কোন অনুগ্রহ নেই যার প্রতিদান তাকে দিতে হবে।
وَمَا لِأَحَدٍ عِندَهُۥ مِن نِّعْمَةٍ تُجْزَىٰٓ ١٩
২০ ) সেতো কেবলমাত্র নিজের রবের সন্তুষ্টি লাভের জন্য এ কাজ করে। ১০
إِلَّا ٱبْتِغَآءَ وَجْهِ رَبِّهِ ٱلْأَعْلَىٰ ٢٠
৬.
অন্য কথায় বলা যায়, একদিন তাকে অবশ্যি মরতে হবে। তখন এখানে আয়েশ আরামের জন্য সে যা কিছু সংগ্রহ করেছিল সব এই দুনিয়াতেই রেখে যেতে হবে। যদি নিজের আখেরাতের জন্য এখান থেকে কিছু কামাই করে না নিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে দুনিয়ার এ ধন-সম্পদ তার কোন্ কাজে লাগবে? সে তো কোন দালান কোঠা, মোটরগাড়ী, সম্পত্তি বা জমানো অর্থ সঙ্গে করে কবরে যাবে না।
৭.
অর্থাৎ মানুষের স্রষ্টা হবার কারণে মহান আল্লাহ‌ নিজের জ্ঞানপূর্ণ কর্মনীতি, ন্যায়নিষ্ঠা ও রহমতের ভিত্তিতে নিজেই মানুষকে এ দুনিয়ায় এমনভাবে ছেড়ে দেননি যে, সে কিছুই জানে না। বরং সঠিক পথ কোনটি ও ভুল পথ কোনটি, নেকী, গোনাহ, হালাল ও হারাম কি, কোন কর্মনীতি তাকে নাফরমান বান্দার ভূমিকায় এনে বসাবে------এসব কথা জানিয়ে দেবার দায়িত্ব তিনি নিজেই গ্রহণ করেছেন।

এ কথাটিকেই সূরা আন নাহলে এভাবে বলা হয়েছেঃ

وَعَلَى اللّٰهِ قَصۡدُ السَّبِيۡلِ وَمِنۡهَا جَآٮِٕرٌ‌ؕ

“আর সোজা পথ দেখাবার দায়িত্ব আল্লাহরই ওপর বার্তায় যখন বাঁকা পথও রয়েছে।” (৯ আয়াত) ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, আন নাহল, ৯ টীকা।

৮.
এ বক্তব্যটির কয়েকটি অর্থ হয়। সবগুলো অর্থই সঠিক। এক, দুনিয়া থেকে আখেরাত পর্যন্ত কোথাও তোমরা আমার নিয়ন্ত্রণ ও পাকড়াও এর বাইরে অবস্থান করছো না। কারণ আমিই উভয় জাহানের মালিক। দুই, তোমরা আমার দেখানো পথে চলো বা না চলো আসলে দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ের ওপর আমার মালিকানা প্রতিষ্ঠিত। তোমরা ভুল পথে চললে তাতে আমার কোন ক্ষতি হবে না, তোমাদের ক্ষতি হবে। আর তোমরা সঠিক পথে চললে আমার কোন লাভ হবে না, তোমরাই লাভবান হবে। তোমাদের নাফরমানির কারণে আমার মালিকানায় কোন কমতি দেখা দেবে না এবং তোমাদের আনুগত্য তার মধ্যে কোন বৃদ্ধিও ঘটাতে পারবে না। তিন, আমিই উভয় জাহানের মালিক। দুনিয়া তথা বৈষয়িক স্বার্থ চাইলে তা আমার কাছ থেকেই তোমরা পাবে। আবার আখেরাতের কল্যাণ চাইলে তাও দেবার ক্ষমতা একমাত্র আমারই আছে। একথাটিই সূরা আলে ইমরানের ১৪৫ আয়াতে এভাবে বলা হয়েছেঃ

وَمَنۡ يُّرِدۡ ثَوَابَ الدُّنۡيَا نُؤۡتِهٖ مِنۡهَا‌ۚ وَمَنۡ يُّرِدۡ ثَوَابَ الۡاٰخِرَةِ نُؤۡتِهٖ مِنۡهَا‌ؕ

“যে ব্যক্তি দুনিয়ায় সওয়াব হাসিলের সংকল্পে কাজ করবে আমি তাকে দুনিয়া থেকেই দেবো আর যে ব্যক্তি আখেরাতের সওয়াব হাসিলের সংকল্পে কাজ করবে আমি তাকে আখেরাত থেকে দেবো।”

সূরা শুরা ২০ আয়াতে একথাটি নিম্নোক্তভাবে বলা হয়েছেঃ

مَنۡ كَانَ يُرِيۡدُ حَرۡثَ الۡاٰخِرَةِ نَزِدۡ لَهٗ فِىۡ حَرۡثِهٖ‌ۚ وَمَنۡ كَانَ يُرِيۡدُ حَرۡثَ الدُّنۡيَا نُؤۡتِهٖ مِنۡهَا وَمَا لَهٗ فِىۡ الۡاٰخِرَةِ مِنۡ نَّصِيۡبٍ‏

“যে ব্যক্তি আখেরাতের কৃষি চায় তার কৃষিকে আমি বাড়িয়ে দেই আর যে দুনিয়ার কৃষি চায় তাকে দুনিয়া থেকেই দান করি, কিন্তু আখেরাতে তার কোন অংশ নেই।”

আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, আলে ইমরান ১০৫ টীকা এবং আশ শূরা ৩৫ টীকা।

৯.
এর অর্থ এই নয় যে, চরম হতভাগ্য ছাড়া আর কেউ জাহান্নামে যাবে না এবং পরম মুত্তাকী ছাড়া আর কেউ তার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবে না। বরং দু’টি চরম পরস্পর বিরোধী চরিত্রকে পরস্পরের বিরুদ্ধে পেশ করে তাদের পরস্পর বিরোধী চরম পরিণাম বর্ণনা করাই এখানে উদ্দেশ্য। এক ব্যক্তি আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলের শিক্ষাকে মিথ্যা বলে এবং আনুগত্যের পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি কেবল ঈমান এনেই ক্ষান্ত হয় না বরং পরম আন্তরিকতা সহকারে কোনো প্রকার লোক দেখানো প্রবণতা, নাম যশ ও খ্যাতির মোহ ছাড়াই শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে পাক-পবিত্র মানুষ হিসেবে গণ্য হবার আকাংখায় আল্লাহর পথে নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। এই দু’ধরনের চরিত্র সম্পন্ন লোক সে সময় মক্কার সমাজে সবার সামনে বর্তমান ছিল। তাই কারো নাম না নিয়ে লোকদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে, জাহান্নামের আগুনে দ্বিতীয় ধরনের চরিত্র সম্পন্ন লোক নয় বরং প্রথম ধরনের চরিত্র সম্পন্ন লোকই পুড়বে। আর এই আগুন থেকে প্রথম ধরনের লোক নয় বরং দ্বিতীয় ধরনের লোককেই দূরে রাখা হবে।
১০.
এখানে সেই মুত্তাকী ও আল্লাহভীরু ব্যক্তির আন্তরিকতার আরো বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। সে নিজের অর্থ যাদের জন্য ব্যয় করে, আগে থেকেই তার কোন অনুগ্রহ তার ওপর ছিল না, যার বদলা সে এখন চুকাচ্ছে অথবা ভবিষ্যতে তাদের থেকে আরো স্বার্থ উদ্ধারের জন্য তাদেরকে উপহার উপঢৌকন ইত্যাদি দিচ্ছে এবং তাদেরকে দাওয়াত খাওয়াচ্ছে। বরং সে নিজের মহান ও সর্বশক্তিমান রবের সন্তুষ্টি লাভের জন্য এমন সব লোককে সাহায্য করছে, যারা ইতিপূর্বে তার কোন উপকার করেনি এবং ভবিষ্যতেও তাদের উপকার করার কোন আশা নেই। এর সর্বোৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হচ্ছে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহুর গোলাম ও বাঁদীদের আযাদ করার কাজটি। মক্কা মু’আযযমার সে অসহায় গোলাম ও বাঁদীরা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং এই অপরাধে তাদের মালিকরা তাদের ওপর চরম অকথ্য নির্যাতন ও নিপীড়ন চালাচ্ছিল হযরত আবু বকর (রা.) তাদেরকে মালিকদের জুলুম থেকে বাঁচাবার জন্য কিনে নিয়ে আযাদ করে দিচ্ছিলেন। ইবনে জারীর ও ইবনে আসাকির হযরত আমের ইবনে আবদুল্লাহ যুবাইরের এই রেওয়ায়াতটি উদ্ধৃত করেছেনঃ হযরত আবু বকরকে এভাবে গরীব গোলাম ও বাঁদীদেরকে গোলামী মুক্ত করার জন্য অর্থ ব্যয় করতে দেখে তাঁর পিতা তাকে বলেন, হে পুত্র! আমি দেখছি তুমি দুর্বল লোকদের মুক্ত করে দিচ্ছো, যদি এ টাকাটা তুমি শক্তিশালী জোয়ানদের মুক্ত করার জন্য খরচ করতে তাহলে তারা তোমার হাতকে শক্তিশালী করতো। একথায় হযরত আবু বকর (রা.) তাঁকে বলেনঃ اى اباه انما اريد ما عند اللّه “আব্বাজান! আমি তো আল্লাহর কাছে এর প্রতিদান চাই।”
অনুবাদ: