আয়াত
১১ ) তুমি কি মনে করো, যদি (সেই বান্দা) সঠিক পথে থাকে
أَرَءَيْتَ إِن كَانَ عَلَى ٱلْهُدَىٰٓ ١١
১২ ) অথবা তাকওয়ার নির্দেশ দেয়?
أَوْ أَمَرَ بِٱلتَّقْوَىٰٓ ١٢
১৩ ) তুমি কি মনে করো, যদি (এই নিষেধকারী সত্যের প্রতি) মিথ্যা আরোপ করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়?
أَرَءَيْتَ إِن كَذَّبَ وَتَوَلَّىٰٓ ١٣
১৪ ) সে কি জানে না, আল্লাহ দেখছেন? ১১
أَلَمْ يَعْلَم بِأَنَّ ٱللَّهَ يَرَىٰ ١٤
১৫ ) কখনই নয়, ১২ যদি সে বিরত না হয় তাহলে আমি তার কপালের দিকে চুল ধরে তাকে টানবো,
كَلَّا لَئِن لَّمْ يَنتَهِ لَنَسْفَعًۢا بِٱلنَّاصِيَةِ ١٥
১৬ ) সেই কপালের চুল (ওয়ালা) যে মিথ্যুক ও কঠিন অপরাধকারী। ১৩
نَاصِيَةٍ كَٰذِبَةٍ خَاطِئَةٍ ١٦
১৭ ) সে তার সমর্থক দলকে ডেকে নিক ১৪
فَلْيَدْعُ نَادِيَهُۥ ١٧
১৮ ) আমি ডেকে নিই আযাবের ফেরেশতাদেরকে। ১৫
سَنَدْعُ ٱلزَّبَانِيَةَ ١٨
১৯ ) কখনই নয়, তার কথা মেনে নিয়ো না, তুমি সিজদা করো এবং (তোমার রবের) নৈকট্য অর্জন করো। ১৬
كَلَّا لَا تُطِعْهُ وَٱسْجُدْ وَٱقْتَرِب ١٩
১১.
বাহ্যত মনে হয়, এখানে প্রত্যেকটি ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিকে সম্বোধন করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, তুমি কি সেই ব্যক্তির কার্যকলাপ দেখেছো যে আল্লাহর এক বান্দাকে ইবাদাত করা থেকে বিরত রাখছে? যদি সেই বান্দা সঠিক পথে থাকে অথবা মানুষকে আল্লাহর ভয় দেখায় এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে, আর এই ইবাদাতে বাধা প্রদানকারী সত্যের প্রতি মিথ্যা আরোপ করে এবং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তার এই তৎপরতা সম্পর্কে তুমি কি মনে করো। যে ব্যক্তি এই কর্মনীতি অবলম্বন করেছে সে যদি জানতো, যে বান্দা নেকীর কাজ করে আল্লাহ তাকেও দেখেন আবার যে সত্যের প্রতি মিথ্যা আরোপ করে এবং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে সচেষ্ট তাকেও দেখেন তাহলে সে কি এই কর্মনীতি অবলম্বন করতে পারতো? আল্লাহ জালেমের জুলুম দেখছেন এবং মজলুমের মজলুমীও দেখছেন। তাঁর এই দেখা এ বিষয়টিকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছে যে, তিনি জালেমের শাস্তি দেবেন এবং মজলুমের ফরিয়াদ শুনবেন।
১২.
অর্থাৎ মুহাম্মাদ ﷺ যদি নামায পড়েন তাহলে এই ব্যক্তি নিজের পায়ের চাপে তার ঘাড় পিষে ফেলবে বলে যে হুমকি দিচ্ছে তা কখনো সম্ভবপর হবে না। সে কখনো এমনটি করতে পারবে না।
১৩.
কপালের দিক বলে এখানে যার কপাল তাকে বুঝানো হয়েছে।
১৪.
যেমন ভূমিকায় আমরা বলেছি, আবু জেহেলের হুমকির জবাবে যখন রসূলুল্লাহ ﷺ তাকে ধমক দিয়েছিলেন তখন সে বলেছিল, হে মুহাম্মাদ! তুমি কিসের জোরে আমাকে ভয় দেখাচ্ছো? আল্লাহর কসম, এই উপত্যকায় আমার সমর্থকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। তার এই কথায় এখানে বলা হচ্ছেঃ নাও, এখন তাহলে তোমার সেই সমর্থকদের ডেকে নাও।
১৫.
মূলে ‘যাবানীয়াহ’ ( رَبانيت) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কাতাদাহর ব্যাখ্যা অনুযায়ী এটি আরবী ভাষায় পুলিশের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর “যাবান” (زبن) শব্দের আসল মানে হচ্ছে, ধাক্কা দেয়া। রাজা বাদশাহদের দরবারে লাঠিধারী চোবদার থাকতো। তাদের কাজ হতো যার প্রতি বাদশাহ নারাজ হতেন তাকে ধাক্কা দিয়ে দরবার থেকে বের করে দেয়া। কাজেই এখানে আল্লাহর বাণীর অর্থ হচ্ছে, সে তার সমর্থকদেরকে ডেকে আনুক, আর আমি আমার পুলিশ বাহিনী তথা আযাবের ফেরেশতাদেরকে ডেকে আনি। এই আযাবের ফেরেশতারা তার সমর্থকদেরকে ঠাণ্ডা করে দিক।
১৬.
সিজদা করা মানে নামায পড়া। অর্থাৎ হে নবী! তুমি নির্ভয়ে আগের মতো নামায পড়তে থাকো। এর মাধ্যমে নিজের রবের নৈকট্য লাভ করো। সহীহ মুসলিম ইত্যাদি গ্রন্থে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছেঃ “বান্দা সিজদায় থাকা অবস্থায় তার রবের সবচেয়ে বেশী নিকটবর্তী হয়।” আবার মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরার (রা.) এ রেওয়ায়াতটিও উদ্ধৃত হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এ আয়াতটি পড়তেন তখন তেলাওয়াতে সিজদা করতেন।