পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

৩৩৯ আয়াত

১০৪ ) আর প্রকৃতপক্ষে তোমার রব পরাক্রমশালীও এবং করুণাময়ও।
وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلرَّحِيمُ ١٠٤
১০৫ ) নূহের ৭৪ সম্প্রদায় রসূলদেরকে মিথ্যুক বললো। ৭৫
كَذَّبَتْ قَوْمُ نُوحٍ ٱلْمُرْسَلِينَ ١٠٥
১০৬ ) স্মরণ কর যখন তাদের ভাই নূহ তাদেরকে বলেছিল, “তোমরা কি ভয় কর না? ৭৬
إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ نُوحٌ أَلَا تَتَّقُونَ ١٠٦
১০৭ ) আমি তোমাদের জন্য একজন আমানতদার রসূল। ৭৭
إِنِّى لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌۭ ١٠٧
১০৮ ) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। ৭৮
فَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَأَطِيعُونِ ١٠٨
১০৯ ) এ কাজে আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদানের প্রত্যাশী নই। আমাকে প্রতিদান দেবার দায়িত্ব তো রব্বুল আলামীনের। ৭৯
وَمَآ أَسْـَٔلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ ۖ إِنْ أَجْرِىَ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ ١٠٩
১১০ ) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং (নির্দ্বিধায়) আমার আনুগত্য করো।” ৮০
فَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَأَطِيعُونِ ١١٠
১১১ ) তারা জবাব দিল, “আমরা কি তোমাকে মেনে নেবো, অথচ নিকৃষ্টতম লোকেরা তোমার অনুসরণ করছে?” ৮১
۞ قَالُوٓا۟ أَنُؤْمِنُ لَكَ وَٱتَّبَعَكَ ٱلْأَرْذَلُونَ ١١١
১১২ ) নূহ বললো, “তাদের কাজ কেমন, আমি কেমন করে জানবো।
قَالَ وَمَا عِلْمِى بِمَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ ١١٢
১১৩ ) তাদের হিসেব গ্রহণ করা তো আমার প্রতিপালকের কাজ।
إِنْ حِسَابُهُمْ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّى ۖ لَوْ تَشْعُرُونَ ١١٣
.
৭৪.
তুলনামূলক অধ্যয়নের জন্য দেখুন আল আ’রাফ ৫৯-৬৪, ইউনুস ৭১-৭৩, হূদ ২৫-৪৮, বনী ইসরাঈল ৩, আল আম্বিয়া ৭৬-৭৭, আল মু’মিনুন ২৩-৩০, আল ফুরকান ৩৭ আয়াত এবং এছাড়া নূহ আলাইহিস সালামের ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য নিম্নোক্ত স্থানগুলো সামনে রাখুনঃ আল আনকাবুত ১৪-১৫, আস সাফফাত ৭৫-৮২, আল কামার ৯-১৫ আয়াত এবং সূরা নূহ সম্পূর্ণ।
৭৫.
যদিও তারা একজন মাত্র রসূলকে অস্বীকার করেছিল কিন্তু যেহেতু রসূলকে অস্বীকার করা আসলে তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যে পয়গাম নিয়ে এসেছেন তাকে অস্বীকার করা হয়, তাই যে ব্যক্তি বা দল কোন একজন রসূলকেও অস্বীকার করে সে আল্লাহর দৃষ্টিতে সকল রসূলকে অস্বীকারকারীতে পরিণত হয়। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সত্য। কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পদ্ধতিতে একথা বর্ণনা করা হয়েছে। এমনকি তাদেরকেও কাফের গণ্য করা হয়েছে যারা কেবলমাত্র একজন নবীকে অস্বীকার করতো এবং অন্যান্য সকল নবীকে মানতো। এর কারণ হচ্ছে, যে ব্যক্তি রিসালাতের মূল পয়গাম মেনে নেয় সে অনিবার্যভাবে প্রত্যেক রসূলকে মেনে নেবে। কিন্তু যে ব্যক্তি কোন একজন রসূলকে অস্বীকার করে সে যদি অন্য সকল রসূলকে মানেও তাহলে কোন গোত্র, দল বা সংকীর্ণ স্বার্থপ্রীতি অথবা পূর্ব পুরুষদের অনুসৃতির কারণেই মানে, রিসালাতের মূল পয়গামকে মানে না। অন্যথায় একই সত্য একজন পেশ করলে মেনে নেবে এবং অন্যজন পেশ করলে অস্বীকার করবে, এটা কখনো সম্ভব ছিল না।
৭৬.
অন্যান্য স্থানে হযরত নূহ তাঁর নিজের জাতিকে যে প্রাথমিক সম্বোধন করেছিলেন তার শব্দাবলী নিম্নরূপঃ

اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ أَفَلَا تَتَّقُونَ

“আল্লাহর বন্দেগী করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই, তাহলে তোমরা কি ভয় করো? ”(আল মু‘মিনুন ২৩ আয়াত)

اعْبُدُوا اللَّهَ وَاتَّقُوهُ وَأَطِيعُونِ

“আল্লাহর বন্দেগী করো, তাঁকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।” (নূহ ৩ আয়াত)

তাই এখানে হযরত নূহের এ উক্তির অর্থ নিছক ভীতি নয় বরং আল্লাহ‌ ভীতি। অর্থাৎ তোমাদেরও কি আল্লাহর ভয় নেই? তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যের বন্দেগী করার সময় তোমরা একটুও ভেবে দেখো না, এ বিদ্রোহাত্মক নীতির পরিণাম কি হবে? দাওয়াতের সূচনায় ভয় দেখাবার কারণ হচ্ছে এই যে, যতক্ষণ নাকোন ব্যক্তি বা দলকে তার ভুল নীতির অশুভ পরিণামের ভীতি অনুভব করানো যায় ততক্ষণ সে সঠিক কথা ও তার যুক্তির প্রতি ভ্রুক্ষেপ করতে উদ্যোগী হয় না, মানুষের মনে সঠিক পথের অনুসন্ধিৎসা তখনই জন্ম নেয় যখন তার মনে এ চিন্তা জাগে যে, সে কোন বাঁকা পথে যাচ্ছে না তো, যেখানে ধ্বংসের কোন আশঙ্কা আছে।

৭৭.
এর দু’টি অর্থ হয়। এক, আমি নিজের পক্ষ থেকে কোন কথা বানিয়ে বা কমবেশী করে বলি না বরং যা কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার উপর নাযিল হয় তাই হুবহু বর্ণনা করি। দুই, আমি এমন একজন রসূল যাকে তোমরা আগে থেকেই একজন সত্যবাদী ও আমানতদার হিসেবে জানো। মানুষের ব্যাপারে যখন আমি আমানতের খেয়ানত করি না তখন আল্লাহর ব্যাপারে কেমন করে আমানতের খেয়ানত করতে পারি। কাজেই তোমাদের জানা উচিত, আমি যা কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে পেশ করছি সে ব্যাপারে আমি ঠিক তেমনিই আমানতদার যেমন দুনিয়ার ব্যাপারে আজ পর্যন্ত তোমরা আমাকে পেয়েছো।
৭৮.
অর্থাৎ আমার আমানতদার রসূল হবার অনিবার্য দাবী হচ্ছে এই যে, তোমরা অন্য সবার আনুগত্য পরিত্যাগ করে একমাত্র আমার আনুগত্য করবে এবং আমি তোমাদের যে বিধান দেবো তা সর্বান্তঃকরণে মেনে নেবে। কারণ আমি বিশ্ব-জাহানের প্রভুর ইচ্ছার প্রতিনিধি। আমার আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যের সমান। আর আমার নাফরমানী করা নিছক আমার সত্তার নাফরমানী করা নয় বরং সরাসরি আল্লাহর নাফরমানীর নামান্তর। অন্য কথায় এর অর্থ দাঁড়ায়, রসূলের অধিকার শুধুমাত্র এতটুকুন নয় যে, যাদের কাছে তাঁকে রসূল বানিয়ে পাঠানো হয়েছে তারা তাঁর সত্যবাদিতা মেনে নেবে এবং তাঁকে সত্য রসূল হবার স্বীকৃতি দেবে। বরং তাঁকে আল্লাহর সত্য রসূল বলে মেনে নেবার সাথে সাথেই তাঁর আনুগত্য করা এবং অন্য সমস্ত আইন পরিহার করে একমাত্র তিনি যে আইন এনেছেন তার আনুগত্য করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। রসূলকে রসূল বলে স্বীকার না করা অথবা রসূল বলে স্বীকার করার পর তাঁর আনুগত্য না করা উভয় অবস্থায়ই আসলে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নামান্তর এবং উভয়েরই ফল হয় আল্লাহর গযবের আওতায় চলে আসে। তাই ঈমান ও আনুগত্যের দাবীর আগে “আল্লাহকে ভয় করো” এর সতর্কতামূলক বাক্য উচ্চারণ করা হয়েছে, যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি ভালোভাবে কান খুলে রসূলের রিসালাত স্বীকার না করা অথবা তাঁর আনুগত্য গ্রহণ না করার ফল কি হবে তা শুনে নিতে পারে।
৭৯.
এটি হচ্ছে হযরত নূহের সত্যতার সপক্ষে দ্বিতীয় যুক্তি। প্রথম যুক্তি ছিল, নবুওয়াত দাবীর পূর্বে আমার সমগ্র জীবন তোমাদের মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে। আজ পর্যন্ত তোমরা আমাকে একজন আমানতদার হিসেবেই জানো। আর দ্বিতীয় যুক্তিটি হচ্ছে, আমি একজন নিস্বার্থপর ব্যক্তি। একাজের মাধ্যমে আমার ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার হচ্ছে অথবা নিজের কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ লাভ করার জন্য আমি প্রচেষ্টা চালাচ্ছি, এমন কোন ব্যক্তিগত লাভ বা স্বার্থ তোমরা চিহ্নিত করতে পারবে না। এহেন নিস্বার্থভাবে কোন ব্যক্তিগত লাভ ছাড়াই যখন আমি এ সত্যের দাওয়াতের কাজে দিনরাত প্রাণপাত করে যাচ্ছি, নিজের সময় ও শ্রম নিয়োগ করছি এবং সকল প্রকার কষ্ট বরদাশত করছি তখন তোমাদের জানা উচিত, আমি আন্তরিকতা সহকারে এ কাজ করে যাচ্ছি। ঈমানদারীর সাথে যে জিনিসকে সত্য মনে করি এবং যার আনুগত্যের মধ্যে আল্লাহর বান্দাদের কল্যাণ ও সাফল্য দেখি তাই পেশ করছি। আমার এ কাজের পেছনে কোন ব্যক্তিগত স্বার্থোদ্যোগ নেই। এ স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য মিথ্যা বলে লোকদের ধোঁকা দেবার কোন প্রয়োজন আমার নেই।

আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের সত্যতার প্রমাণ স্বরূপ কুরআন মজীদ বারবার এ যুক্তি দু’টি পেশ করেছে এবং এ দু’টিকে নবুওয়াত যাচাই করার মানদণ্ড গণ্য করেছে। নবুওয়াত লাভ করার আগে যে ব্যক্তি একটি সমাজে বছরের পর বছর জীবন যাপন করেছেন এবং লোকেরা সব সময় সব ব্যাপারে তাঁকে সত্যবাদী, নিখাদ ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পেয়েছে তাঁর সম্পর্কে কোন নিরপেক্ষ মানুষ এরূপ সন্দেহ পোষণ করতে পারে না যে, তাকে নবী না করা সত্ত্বেও তিনি বলবেন, আল্লাহ‌ আমাকে নবী করে পাঠিয়েছেন। সারা জীবনে একটিবারও যে ব্যক্তি মিথ্যা বলেনি। সে হঠাৎ আল্লাহর নামে এত বড় একটি মিথ্যা বলতে উদ্যত হবে, তা কোন নিরাসক্ত ব্যক্তির পক্ষে ধারণা করা বড়ই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তারপর দ্বিতীয় কথাটা আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ সে কথাটি হচ্ছে, কোন ব্যক্তি সদুদ্দেশ্যে এত বড় ডাহা মিথ্যা তৈরী করে না। নিশ্চিতভাবে কোন সংকীর্ণ স্বার্থই এরূপ শঠতা ও প্রতারণার প্ররোচনা দিয়ে থাকে। কোন ব্যক্তি যখন নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এহেন প্রতারণামূলক কাজ করে তখন গোপন করার যাবতীয় প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তার চিহ্ন সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। নিজের কাজ কারবার বাড়াবার ও সম্প্রসারিত করার জন্য তাকে নানা ধরণের উপায় অবলম্বন করতে হয়। এসবের কুৎসিত দিকগুলো হাজার চেষ্টা করলেও আশপাশের সমাজে লুকিয়ে রাখা যায় না। তাছাড়া নিজের আধ্যাত্মবাদের ব্যবসায় ফেঁদে তার নিজের কিছু না কিছু লাভ হতে দেখা যায়। ভক্তদের থেকে নজরানা নেয়া হয়। লংগরখানা খোলা হয়। জমিজমা কেনা হয়। অলংকারাদি তৈরী করা হয়। ফকিরির আস্তানা দেখতে দেখতে বাদশাহের দরবারে পরিণত হয়। কিন্তু যেখানে এর বিপরীত নবুওয়াত দাবীকারীর ব্যক্তিগত জীবন এমন সব নৈতিক গুণাবলীতে পরিপূর্ণ দেখা যায়, যার মধ্যে প্রতারণামূলক উপায়ের নাম নিশানাও খুঁজে পাওয়া যায় না এবং এ কাজের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ লাভ তো দূরের কথা বরং এ সেবামূলক কাজের জন্য সে নিজের সব কিছু বিলিয়ে দেয়, সেখানে মিথ্যাচারের সন্দেহ করার কোন সুস্থ বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব হয় না। কোন বুদ্ধিমান ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি একথাও কল্পনা করতে পারে না যে, একজন নিশ্চিত জীবন যাপনকারী ভালো লোক কেন বিনা কারণে একটি মিথ্যা দাবী নিয়ে দাঁড়াবেন, যখন এ দাবীর মাধ্যমে তার কোন স্বার্থোদ্ধার হচ্ছে না বরং উল্টো নিজের ধন-দৌলত, সময় ও শক্তিসামর্থ্য-শ্রম সবকিছু একাজে নিয়োগ করে এর বদলে সে সারা দুনিয়ার লোকদের শত্রুতা মাথা পেতে নিয়েছে। ব্যক্তিগত স্বার্থ জলাঞ্জলী দেয়া মানুষের আন্তরিক হবার সবচেয়ে বেশী সুস্পষ্ট প্রমাণ। বছরের পর বছর ধরে যখন কোন ব্যক্তি এ ধরণের ত্যাগ স্বীকার করে যেতে থাকে তখন যে ব্যক্তি নিজেই অসৎ সংকল্পকারী একমাত্র সে-ই তার প্রতি অসৎ সংকল্পকারী বা স্বার্থপর হবার দোষারোপ করতে পারে। (আরো বেশী জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আল মু’মিনুন ৭০ নং টীকা)

৮০.
অকারণে এ বাক্যের পুনরাবৃত্তি করা হয়নি। আগে এটি বলা হয়েছিল এক প্রেক্ষিতে, এখানে পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে ভিন্ন প্রেক্ষিতে। উপরে إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ এর সাথে فَاتَّقُوا اللَّهَ বাক্যাংশের সম্পর্ক এ ছিল যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে যে ব্যক্তি হচ্ছেন একজন আমানতদার রসূল, যার আমানতদারীর গুণ সম্পর্কে তোমরা নিজেরাই অবগত, তাঁর প্রতি মিথ্যা আরোপ করতে গিয়ে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আর এখানে مَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ এর সাথে এ বাক্যের সম্পর্ক হচ্ছে এই যে, নিজের কোন ব্যক্তিগত লাভ ছাড়াই যে ব্যক্তি নিছক মানুষের সংস্কার সাধনের জন্য পূর্ণ আন্তরিকতা সহকারে কাজ করছে তার উদ্দেশ্যকে অসৎ আখ্যায়িত করতে গিয়ে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। এ কথাটির ওপর এত বেশী জোর দেবার কারণ ছিল এই যে, জাতির সরদাররা হযরত নূহের আন্তরিকতাপূর্ণ সত্যের দাওয়াতের মধ্যে খুঁত বের করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে এ মর্মে অভিযোগ আনছিল যে, তিনি নিজের বড়াই করার জন্য এতসব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেনঃ

يُرِيدُ أَنْ يَتَفَضَّلَ عَلَيْكُمْ (المؤمنون: 24)

“সে তোমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে চায়।”

৮১.
হযরত নূহের দাওয়াতের এ জবাব যারা দিয়েছিল তারা ছিল সম্প্রদায়ের সরদার, মাতব্বর ও গণ্য মান্য ব্যক্তি। যেমন অন্যান্য জায়গায় এ কাহিনী বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছেঃ

فَقَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ قَوْمِهِ مَا نَرَاكَ إِلَّا بَشَرًا مِثْلَنَا وَمَا نَرَاكَ اتَّبَعَكَ إِلَّا الَّذِينَ هُمْ أَرَاذِلُنَا بَادِيَ الرَّأْيِ وَمَا نَرَى لَكُمْ عَلَيْنَا مِنْ فَضْلٍ

“সে জাতির কাফের সরদাররা বললো, আমরা তো তোমাকে ছাড়া আর কিছুই দেখছি না যে, তুমি নিছক একজন আমাদেরই মত মানুষ এবং আমরা দেখছি একমাত্র এমন সব লোকেরা না বুঝেই তোমার অনুসারী হয়েছে যারা এখানে নিম্ন শ্রেণীর লোক। আর আমরা এমন কোন জিনিসই দেখি না যার বলে তোমরা আমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ।” (হুদঃ ২৭ আয়াত)

এ থেকে জানা যায়, হযরত নূহের প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তাদের অধিকাংশ ছিল গরীব ও ক্ষুদ্র পেশাদার অথবা এমন পর্যায়ের যুবক জাতির মধ্যে যাদের কোন মর্যাদা ছিল না। অন্যদিকে ছিল উচ্চ শ্রেণীর বিত্তশালী ও প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী লোকেরা। তারা আদাপানি খেয়ে তাঁর বিরোধিতায় নেমেছিল এবং তারাই জাতির সাধারণ লোকদেরকে নানাভাবে প্রতারিত করে নিজেদের দলভূক্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। এ প্রসঙ্গে তারা হযরত নূহের বিরুদ্ধে যেসব যুক্তি প্রমাণ পেশ করেছিল তার মধ্যে একটি যুক্তি ছিল নিম্নরূপঃ যদি নূহের দাওয়াতের কোন গুরুত্ব থাকতো, তাহলে জাতির প্রধানগণ, উলামায়ে কেরাম, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, সম্ভ্রান্ত ও বুদ্ধিমান ব্যক্তিবর্গ তা গ্রহণ করতো। কিন্তু তাদের কেউ তাঁর প্রতি ঈমান আনেনি। জাতির হীনবল ও নিম্ন শ্রেণীর কিছু অবুঝ লোক তাঁর দলে ভিড়েছে। এ অবস্থায় আমাদের মতো উন্নত মর্যাদাসম্পন্ন লোকেরা কি এসব অজ্ঞ ও নিম্নশ্রেণীর লোকদের দলে শামিল হয়ে যাবে?

এ একই কথা কুরাইশ বংশীয় কাফেররা নবী ﷺ সম্পর্কে বলতো। তারা বলতো, দাস ও দরিদ্র লোকেরা অথবা কয়েকজন অবুঝ ছোকরাই তো এঁর অনুসারী। জাতির প্রধান ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের কেউ এঁর সাথে নেই। আবু সুফিয়ান হিরাকলের প্রশ্নের জবাবেও একথাই বলেছিলেনঃ تبعه منا الضُّعَفَاءُ وَالْمَسَاكِينُ (আমাদের গরীব ও দুর্বল লোকেরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারী হয়েছে।) তাদের চিন্তাধারা যেন এ ধরণের ছিলঃ জাতির প্রধানরা যাকে সত্য বলে মনে করে তা-ই একমাত্র সত্য। কারণ একমাত্র তারাই বুদ্ধি-জ্ঞানের অধিকারী। আর ছোট লোকদের ব্যাপারে বলা যায়, তাদের ছোট হওয়াই একথা প্রমাণ করে যে, তারা বুদ্ধিহীন ও দুর্বল সিদ্ধান্তের অধিকারী। তাই তাদের কোন কথা মেনে নেয়া এবং বড় লোকদের কথা প্রত্যাখ্যান করার পরিষ্কার অর্থ হচ্ছে এই যে, সেটি একটি গুরুত্বহীন কথা। বরং মক্কার কাফেররা তো এর চাইতেও অগ্রসর হয়ে এ মর্মে যুক্তি পেশ করতো যে, কোন মামুলী ও সাধারণ লোক নবী হতে পারে না। আল্লাহ‌ যদি সত্যিই কোন নবী পাঠাতে চাইতেন তাহলে কোন বড় সমাজপতিকে নবী করে পাঠাতেনঃ

وَقَالُوا لَوْلَا نُزِّلَ هَذَا الْقُرْآنُ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيمٍ

“তারা বলে, এ কুরআন আমাদের দু‘টি বড় নগরীর (মক্কা ও তায়েফ) কোন প্রভাবশালী লোকের প্রতি নাযিল করা হলো না কেন? (আয্ যুখরুফঃ ৩১ আয়াত)

.
.
অনুবাদ: