قُلْ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِن كُنتُمْ فِى شَكٍّۢ مِّن دِينِى فَلَآ أَعْبُدُ ٱلَّذِينَ تَعْبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلَـٰكِنْ أَعْبُدُ ٱللَّهَ ٱلَّذِى يَتَوَفَّىٰكُمْ ۖ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ ٱلْمُؤْمِنِينَ
হে নবী! বলে দাও, ১০৬ "হে লোকেরা! যদি তোমরা এখনো পর্যন্ত আমার দ্বীনের ব্যাপারে কোন সন্দেহের মধ্যে থাকো তাহলে শুনে রাখো, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের বন্দেগী করো আমি তাদের বন্দেগী করি না বরং আমি কেবলমাত্র এমন আল্লাহর বন্দেগী করি যার করতলে রয়েছে তোমাদের মৃত্যু। ১০৭
১০৬
যে বক্তব্য দিয়ে ভাষণ শুরু করা হয়েছিল। এখন আবার তারই মাধ্যমে ভাষণ শেষ করা হচ্ছে। তুলনামূলক পাঠের জন্য প্রথম রুকুর আলোচনার ওপর আর একবার নজর বুলিয়ে নিন।
১০৭
মূল আয়াতে يَتَوَفَّاكُمْ(ইয়াতাওয়াফ্ফাকুম) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর শাব্দিক অনুবাদ হচ্ছে "যিনি তোমাদের মৃত্যু দান করেন।" কিন্তু এ শাব্দিক অনুবাদ থেকে আসল মর্মবাণীর প্রকাশ হয় না। এ উক্তির মর্মবাণী হচ্ছে এই যে, "তোমাদের প্রাণ যে সত্তার করতলগত, যিনি তোমাদের ওপর এমনই পূর্ণাঙ্গ শাসন কর্তৃত্বের অধিকারী যে, যতক্ষণ তিনি ইচ্ছা করেন ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা জীবনী শক্তি লাভ করতে পারো এবং তার ইশারা হবার সাথে সাথেই তোমাদের নিজেদের প্রাণ সেই প্রাণ স্রষ্টার হাতে সোর্পদ করে দিতে হয়, আমি কেবলমাত্র সেই সত্তারই উপাসনা, বন্দেগী ও দাসত্ব এবং আনুগত্য করার ও হুকুম মেনে চলার কথা বলি।" এখানে আরো একটি কথা বুঝে নিতে হবে। মক্কার মুশরিকরা একথা মানতো এবং আজো সকল শ্রেণীর মুশরিকরা একথা স্বীকার করে যে, মৃত্যু একমাত্র আল্লাহ রব্বুল আলামীনের ইখতিয়ারাধীন। এর ওপর অন্য কারো নিয়ন্ত্রণ নেই। এমনকি এ মুশরিকরা যেসব মনীষীকে আল্লাহর গুণাবলী ও ক্ষমতায় শরীক করে তাদের কেউই যে তাদের মৃত্যুর সময় পিছিয়ে দিতে পারেনি, তাদের ব্যাপারে একথাও তারা স্বীকার করে। কাজেই বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আল্লাহর অসংখ্য গুণাবলির মধ্য থেকে অন্য কোন গুণের কথা বর্ণনা করার পরিবর্তে এ বিশেষ গুণটি যে, "যিনি তোমাদের মৃত্যু দান করেন" এখানে বর্ণনা করার জন্য এ উদ্দেশ্যে নির্বাচন করা হয়েছে যে, নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করার সাথে সাথে তার সঠিক হওয়ার যুক্তিও এর মাধ্যমে এসে যাবে। অর্থাৎ সবাইকে বাদ দিয়ে আমি একমাত্র তার বন্দেগী করি এ জন্য যে, জীবন ও মৃত্যুর ওপর একমাত্র তারই কর্তৃত্ব রয়েছে। আর তার ছাড়া অন্যের বন্দেগী করবোই বা কেন, তারা তো অন্য কারোর জীবন-মৃত্যু তো দূরের কথা খোদ তাদের নিজেদেরই জীবন-মৃত্যুর ওপর কোন কর্তৃত্ব রাখে না। তাছাড়া আলঙ্কারিক মাধুর্যকে ও এখানে এভাবে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়েছে যে, "তিনি আমাকে মৃত্যু দান করবেন" না বলে বলা হয়েছে, "তিনি তোমাদের মৃত্যু দান করেন।" এভাবে একটি বাক্যের সাহায্যে মূল বক্তব্য বিষয়, বক্তব্যের স্বপক্ষের যুক্তি এবং বক্তব্যের প্রতি আহবান তিনটিই সম্পন্ন করা হয়েছে। যদি বলা হতো, "আমি এমন সত্তার বন্দেগী করি যিনি আমাকে মৃত্যু দান করবেন" তাহলে এর অর্থ কেবল এতটুকুই হতো যে, "আমার তার বন্দেগী করা উচিত"। তবে এখন যে কথা বলা হয়েছে যে, "আমি এমন এক সত্তার বন্দেগী করি যিনি তোমাদের মৃত্যু দান করেন",- এর অর্থ হবে, শুধু আমারই নয় তোমাদেরও তার বন্দেগী করা উচিত আর তোমরা তাকে বাদ দিয়ে অন্যদের বন্দেগী করে ভুল করে যাচ্ছো।