এখানে أَقِمْ وَجْهَكَ(আকিম ওয়াজহাকা) এর শাব্দিক মানে হচ্ছে, “নিজের চেহরাকে স্থির করে দাও।” এর অর্থ, তুমি একই দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকো। নড়াচড়া করো না এবং এদিক ওদিক ফিরো না। সামনে, পেছনে, ডাইনে, বাঁয়ে মুড়ে যেয়ো না। একেবারে নাক বরাবর সোজা পথে দৃষ্টি রেখে চলো, যে পথ তোমাকে দেখানো হয়েছে। এটি বড়ই শক্ত বাঁধন ছিল। কিন্তু এখানেই ক্ষান্ত থাকা হয়নি। এর ওপর আরো একটু বাড়তি বাধন দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে حَنِيفًا(হানিফা) অর্থাৎ সবদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে শুধুমাত্র একদিকে মুখ করে থাকো। কাজেই দাবী হচ্ছে, এ দ্বীন, আল্লাহর বন্দেগীর এ পদ্ধতি এবং জীবন যাপন প্রণালীর ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহ রব্বুল আলামীনের উপসনা আরাধনা, ইবাদত-বন্দেগী, দাসত্ব আনুগত্য করতে ও হুকুম মেনে চলতে হবে। এমন একনিষ্ঠভাবে করতে হবে যে, অন্য কোন পদ্ধতির দিকে সামান্যতম ঝুঁকে পড়াও যাবে না। যেসব পথ তুমি ইতিপূর্বে পরিত্যাগ করে এসেছো এ পথে এসে সেই ভুল পথগুলোর সাথে সামান্যতম সম্পর্কও রাখবে না এবং দুনিয়ার মানুষ যেসব বাঁকা পথে চলেছে সেসব পথের দিকে একবার ভুল করেও তাকাবে না।
তারপর শুধুমাত্র সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন শিরক (শিরকে জলী) থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়নি বরং অস্পষ্ট শিরক (শিরকে খফী) থেকেও পুরোপুরি ও কঠোরভাবে দূরে থাকারও আদেশ দেয়া হয়েছে। বরং অস্পষ্ট শিরক আরো বেশী বিপজ্জনক এবং তার ব্যাপারে সতর্ক থাকার প্রয়োজন আরো অনেক বেশী। কোন কোন অজ্ঞ ব্যক্তি অস্পষ্ট শিরককে হালকা শিরক মনে করে থাকেন। তারা ধারণা করেন, এ ধরনের শিরকের ব্যাপারটা সুস্পষ্ট শিরকের মত অতোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। অথচ অস্পষ্ট (খফী) মানে হালকা নয় বরং গুপ্ত ও গোপনে লুকিয়ে থাকা। এখন চিন্তা করার ব্যাপার হচ্ছে, যে শত্রু দিন-দুপুরে চেহারা উন্মুক্ত করে সামনে এসে যায় সেই বেশী বিপজ্জনক, না যে কাপড়ের মধ্যে লুকিয়ে বা বন্ধু ছদ্মাবরণে এসে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করছে সেই বেশী বিপজ্জনক? যে রোগের আলামত একেবারে পরিষ্কার দেখা যায় সেটি বেশী ধ্বংসকারক, না যেটি দীর্ঘকাল সুস্থতার ছদ্মাবরণে ভেতরে ভেতরে স্বাস্থ্যকে কুরে কুরে খেয়ে ফেলে সেই বেশী ধ্বংসকর? যে শিরককে প্রত্যেক ব্যক্তি এক নজর দেখেই বলে দেয় এটি শিরক তার সাথে তাওহীদ দ্বীনের সংঘাত একেবারে মুখোমুখি। কিন্তু যে শিরককে বুঝাতে হলে গভীর দৃষ্টি ও তাওহীদের দাবীসমূহের নিবিড় ও অতলস্পর্শী উপলব্ধি প্রয়োজন, সে তার অদৃশ্য শিকড়গুলো দ্বীনের ব্যবস্থার মধ্যে এমনভাবে ছড়িয়ে দেয় যে, সাধারণ তাওহীদবাদীরা তা ঘুণাক্ষরেও টের পায় না তারপর ধীরে ধীরে অবচেতন পদ্ধতিতে সে দ্বীনের সার পদার্থসমূহ এমনভাবে খেয়ে ফেলে যে, কোথাও কোন বিপদ-ঘন্টা বাজাবার সুযোগই আসে না।