কে এই যুলকিফ্ল? কি তাঁর পরিচয়? কেন দেশ ও জাতির সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল? তিনি কোন যুগের লোক ছিলেন? এ সম্পর্কে মুফাসসিরগণের উক্তিগুলো বড় বেশী বিক্ষিপ্ত। কেউ বলেন, এটি হযরত যাকারিয়ার (আ) দ্বিতীয় নাম (অথচ এটি একটি সুস্পষ্ট ভুল কথা। কারণ, তাঁর আলোচনা এর পরই সামনের দিকে আসছে)। কেউ বলেন, তিনি হচ্ছেন হযরত ইলিয়াস (আ)। কেউ ইউশা’ ইবনে নূনের নাম নেন। কেউ বলেন, তিনি আল ইয়াসা’ (অথচ এটিও ভুল। কারণ, সূরা সা’দ-এ তাঁর কথা ও “যুলকিফল”-এর কথা আলাদা আলাদা করে বলা হয়েছে।) কেউ তাঁকে হযরত আল ইয়াসার (আ) খলীফা বলেন। আবার কারো বক্তব্য হচ্ছে, তিনি ছিলেন হযরত আইয়ুবের ছেলে। হযরত আইয়ুবের (আ) পরে তিনি নবী হন এবং তাঁর আসল নাম ছিল বিশর। আল্লাম আলূসী তাঁর রূহুল মা’আনী গ্রন্থে লিখেছেনঃ “ইহুদীদের দাবী হচ্ছে, তিনি হিযকিইল (যিহিস্কেল) নবী। বনী ইসরাঈলদের পরাধীনতার (৫৯৭ খৃঃ পূঃ) যুগে তিনি নবুওয়াতের মর্যাদায় অভিসিক্ত হন এবং খাবুর (কবার) নদীর তীরে একটি জনপদে নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।”
এ বিভিন্ন উক্তি ও মতামতের ভিত্তিতে তিনি যথার্থই কোন নবী ছিলেন নিশ্চিত নির্ভরতার সাথে বলা যেতে পারে না। বর্তমান যুগের মুফাসসিরগণ হিযকিইল নবীর দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। কিন্তু এ মত গ্রহণের পক্ষে আমি কোন ন্যায় সঙ্গত যুক্তি-প্রমাণ পেলাম না। তবুও এর সপক্ষে কোন যথাযথ প্রমাণ পেলে এ মতটিকে অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে। কারণ, বাইবেলের হিযকিইল সহীফাটি দেখলে মনে হয় যথার্থই এ আয়াতে তাঁর যে প্রশংসা করা হয়েছে তিনি তার হকদার অর্থাৎ ধৈর্যশীল ও সৎকর্মপরায়ণ। জেরুসালেম শেষ বার ধ্বংস হবার আগে বখতে নসরের হাতে যারা গ্রেফতার হয়েছিল তিনি ছিলেন তাদের একজন। বখতে নসর ইরাকে ইসরাঈলী কয়েদীদের একটি উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল খাবুর (কবার) নদীর তীরে। এর নাম ছিল তেলআবীব। এ স্থানেই ৫৯৪ খৃস্টপূর্বাব্দে হযরত হিযকিইল নবুওয়াতের মর্যাদায় অভিসিক্ত হন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩০ বছর। অবিশ্রান্তভাবে ২২ বছর ধরে তিনি একদিকে বিপদগ্রস্ত ইসরাঈলীদেরকে এবং অন্যদিকে জেরুসালেমের গাফেল ও অস্থির-বিহবল অধিবাসী ও শাসকদেরকে সজাগ করার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। এ মহান দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাঁর নিষ্ঠা ও আত্মনিমগ্নতা অবশ্যি প্রণিধানযোগ্য। একটি ঘটনা থেকে এ বিষয়টি অনুমান করা যেতে পারে। নবুওয়াতের নবম বছরে তাঁর স্ত্রী, যাতে তিনি নিজেই বলেন, “নয়নের প্রীতি পাত্র” ইন্তিকাল করেন। লোকেরা শোক প্রকাশের জন্য তাঁর বাড়িতে জমায়েত হয়। এদিকে তিনি নিজের মানসিক যন্ত্রণা ও শোকের কথা বাদ দিয়ে নিজের সম্প্রদায়কে আল্লাহর আযাবের ভয় দেখাতে থাকেন। এ আযাব সে সময় তাদের মাথার ওপর ঝুলছিল। (২৪: ১৫-২৭) বাইবেলের যিহিস্কেল পুস্তক এমন একটি পুস্তক যা পড়ে মনে হয় সত্যি এটি আল্লাহর কালাম।