إِنَّ اللَّهَ لاَ يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَلاَ الى الْوَانِكُمْ وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ-
“আল্লাহ তোমাদের চেহারা-সুরাত ও তোমাদের রঙ দেখেন না বরং তিনি দেখন তোমাদের মন ও কার্যকলাপ।”
এক্ষেত্রে একথা জেনে নেয়া উচিত যে, এ প্যারায় কুরবানীর যে হুকুম দেয়া হয়েছে তা কেবলমাত্র হাজীদের জন্য নয় এবং শুধুমাত্র মক্কায় হজ্জের সময় কুরবানী করার জন্য নয় বরং প্রত্যেক সমর্থ মুসলমান যেখানেই সে থাকুক না কেন তার জন্য ব্যাপকভাবে এ হুকুম দেয়া হয়েছে, যাতে সে পশুদের ওপর কর্তৃত্ব লাভ করার নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করার দায়িত্ব পালন করতে এবং এই সঙ্গে নিজের স্থানে হাজীদের অবস্থার সাথে শরীক হয়ে যেতেও পারে। হজ্জ সম্পাদন করার সৌভাগ্য না হলেও কমপক্ষে হজ্জের দিনগুলোতে আল্লাহর ঘরের সাথে জড়িত হয়ে হাজীগণ যেসব কাজ করতে থাকেন সারা দুনিয়ার মুসলমানরা সেসব কাজ করতে থাকবে। বিভিন্ন সহীহ হাদীসে এ বিষয়টির বিস্তারিত আলোচনা এসেছে।
এছাড়াও অসংখ্য নির্ভরযোগ্য হাদীস থেকেও একথা প্রমাণিত হয়েছে যে, নবী ﷺ মদীনা তাইয়্যেবায় অবস্থানের সমগ্র সময়ে নিজেই প্রত্যেক বছর বকরা ঈদের সময় কুরবানী করতেন এবং তাঁরই সুন্নাত থেকে মুসলমানদের মধ্যে এ পদ্ধতির প্রচলন হয়। মুসনাদে আহমাদ ও ইবনে মাজায় হযরত আবু হুরাইরার (রা.) এ বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছেঃ
مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلاَ يَقْرَبَنَّ مُصَلاَّنَا
“যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখার পরও কুরবানী করে না তার আমাদের ঈদগাহের ধারে কাছে না আসা উচিত।”
এ হাদীসটির সকল রাবীই সিকাহ তথা নির্ভরযোগ্য। মুহাদ্দিসগণ শুধুমাত্র রেওয়ায়াতটির মারফূ’ (অর্থাৎ যার বর্ণনার ধারাবাহিকতা সরাসরি নবী ﷺ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে) অথবা মওকূফ (যার বর্ণনার ধারাবাহিকতা সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছে শেষ হয়ে গেছে) হবার ব্যাপারে দ্বিমত ব্যক্ত করেছেন। (হাদীসটির বিশুদ্ধতা নিয়ে কোন মতভেদ হয়নি) তিরমিযীতে ইবনে উমর (রা.) বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছেঃ
أَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ عَشْرَ سِنِينَ يُضَحِّى
“নবী ﷺ মদীনায় দশ বছর থাকেন এবং প্রত্যেক বছর কুরবানী করতে থাকেন।” বুখারীতে হযরত আনাস (রা.) বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছেঃ
مَنْ كَانَ ذَبَحَ قَبْلَ الصَّلاَةِ فَلْيُعِدْ وَمَنْ ذَبَحَ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَقَدْ تَمَّ نُسُكُهُ ، وَأَصَابَ سُنَّةَ الْمُسْلِمِينَ
“যে ব্যক্তি নামাযের আগে যবেহ করলো তার আবার কুরবানী করা উচিত। আর যে ব্যক্তি নামাযের পরে কুরবানী করে তার কুরবানী পূর্ণ হয়েছে এবং সে মুসলমানদের পথ পেয়ে গেছে।”
আর একথা সবার জানা যে, কুরবানীর দিন মক্কায় এমন কোন নামায হতো না যার পূর্বে কুরবানী করা মুসলমানদের সুন্নাতের বিরোধী হতো এবং পরে করা হতো তার অনুকূল। কাজেই নিশ্চিতরূপেই এ উক্তি হজ্জের সময় মক্কায় নয় বরং মদীনায় করা হয়।
মুসলিমে জাবের ইবনে আবদুল্লাহর (রা.) রেওয়ায়াত উদ্ধৃত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, নবী ﷺ মদীনায় বকরা ঈদের নামায পড়ান এবং কোন কোন লোক তিনি কুরবানী করে ফেলেছেন মনে করে নিজেদের কুরবানী করে বসে। এ অবস্থা দেখে তিনি হুকুম দেন, যারা আমার পূর্বে কুরবানী করেছে তাদের আবার কুরবানী করতে হবে।
কাজেই একথা সকল প্রকার সংশয়-সন্দেহের ঊর্ধ্বে যে, বকরা ঈদের দিন সাধারণ মুসলমানরা সারা দুনিয়ায় যে কুরবানী করে এটা নবী ﷺ প্রবর্তিত সুন্নাত। তবে এখানে এ কুরবানী ওয়াজিব অথবা শুধুমাত্র সুন্নাত নিছক এ বিষয়েই মতবিরোধ দেখা যায়। ইবরাহীম নাখঈ, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম মুহাম্মাদ এবং এক বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম আবু ইউসুফও একে ওয়াজিব মনে করতেন। কিন্তু শাফেঈ ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের মতে এটা শুধুমাত্র মুসলমানদের সুন্নাত। সুফিয়ান সাওরীও বলতেন, কেউ কুরবানী না দিলে কোন ক্ষতি নেই। তবুও উম্মতে মুসলিমার কোন একজন আলেমও একথা বলেন না যে, মুসলমানরা একমত হয়ে যদি তা পরিহার করে তবুও কোন ক্ষতি নেই। এ নতুন কথা শুধু আমাদের যুগের কোন কোন লোকের উর্বর মস্তিষ্কের উদ্ভাবন যাদের জন্য নিজের প্রবৃত্তিই কুরআন এবং প্রবৃত্তিই সুন্নাত।