۞ إِنَّ ٱللَّهَ يُدَٰفِعُ عَنِ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ خَوَّانٍۢ كَفُورٍ
নিশ্চয়ই ৭৫ আল্লাহ ঈমানদারদের সংরক্ষণ করেন, ৭৬ নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো বিশ্বাসঘাতক কৃতঘ্নকে পছন্দ করেন না। ৭৭
৭৫
এখান থেকে অন্য একটি বিষয়বস্তুর দিকে ভাষণটির মোড় ফিরে গেছে। প্রাসঙ্গিক বক্তব্য অনুধাবন করার জন্য একথা স্মরণ করা দরকার যে, এটি এমন এক সময়ের ভাষণ যখন হিজরাতের পর প্রথমবার হজ্জের মওসুম এসেছিল। সে সময় একদিকে মুহাজির ও মদীনার আনসারদের কাছে এ বিষয়টি বড়ই কঠিন মনে হচ্ছিল যে, তাদেরকে হজ্জের নিয়ামত থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং হারাম শরীফের যিয়ারতের পথ জোরপূর্বক তাদের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে মক্কায় মুসলমানদের ওপর যেসব জুলুম করা হয়েছিল শুধুমাত্র সেগুলোর আঘাতই তাদের মনে দগদগ করছিল তাই নয় বরং এ ব্যাপারেও তারা অত্যন্ত শোকাহত ছিল যে, ঘরবাড়ী ছেড়ে তারা মক্কা থেকে বের হয়ে এসেছে এরপর এখন মদীনাতেও তাদেরকে নিশ্চিন্তে বাস করতে দেয়া হচ্ছে না। এ সময় যে ভাষণ দেয়া হয় তার প্রথম অংশে কাবাগৃহ নির্মাণ, হজ্জ পালন ও কুরবানীর পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে একথা বলা হয় যে, এসব বিষয়ের আসল উদ্দেশ্য কি ছিল এবং জাহেলীয়াত এগুলোকে বিকৃত করে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে গেছে। এভাবে মুসলমানদের মধ্যে প্রতিশোধ নেবার সংকল্প নিয়ে নয় বরং সংস্কারের সংকল্প নিয়ে এ অবস্থা পরিবর্তন করার জন্য এগিয়ে আসার প্রেরণা সৃষ্টি করা হয়। তাছাড়া এ সঙ্গে মদীনায় কুরবানীর পদ্ধতি জারি করে মুসলমানদেরকে এ সুযোগ দেয়া হয় যে, হজ্জের সময় নিজ নিজ গৃহেই কুরবানী করে শত্রুরা তাদেরকে যে সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করেছে তাতে তারা অংশ গ্রহণ করতে পারবে। আবার হজ্জ থেকে আলাদাভাবে কুরবানীকে একটি স্বতন্ত্র সুন্নাত হিসেবে জারী করে। এর ফলে যারা হজ্জ করার সুযোগ পাবে না তারাও আল্লাহর এ নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তাঁর শেষ্ঠত্ব ঘোষণার হক আদায় করতে পারবে। এরপর এখন দ্বিতীয় অংশে মুসলমানদেরকে তাদের ওপর যে জুলুম করা হয়েছিল এবং যে জুলুমের ধারা অব্যাহত ছিল তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে।
৭৬
মূলে مدَافِعَت শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর উৎপত্তি হয়েছে دفع থেকে। এ শব্দটির আসল মানে হচ্ছে, কোন জিনিসকে হটিয়ে দেয়া ও সরিয়ে দেয়া। কিন্তু যখন “দফা” করার পরিবর্তে “মুদাফা’আত” করার কথা বলা হবে তখন এর মধ্যে আরো দু’টি অর্থ শামিল হয়ে যাবে। এক কোন শত্রুশক্তি আক্রমণ চালাচ্ছে এবং প্রতিরক্ষাকারী তার মোকাবিলা করছে। দুই, এ মোকাবিলা শুধুমাত্র একবারেই শেষ হয়ে যায়নি বরং যখনই আক্রমণকারী আক্রমণ করে তখনই এ প্রতিরক্ষাকারী তার মোকাবিলা করে। এ দু’টি অর্থ সামনে রেখে বিচার করলে মু’মিনদের পক্ষ থেকে আল্লাহর ‘মুদাফা’আত’ করার অর্থ এই বুঝা যায় যে, কুফর ও ঈমানের সংঘাতে মু’মিনরা একা ও নিসঙ্গ হয় না বরং আল্লাহ নিজেই তাদের সাথে এক পক্ষ হয়ে দাঁড়ান। তিনি তাদেরকে সমর্থন দান করেন। তাদের বিরুদ্ধে শত্রুদের কৌশল ব্যর্থ করে দেন। অনিষ্টকারকদের অনিষ্টকে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে দিতে থাকেন। কাজেই এ আয়াতটি আসলে হক পন্থীদের জন্য একটি বড় রকমের সুসংবাদ। তাদের মনকে সুদৃঢ় ও শক্তিশালী করার জন্য এর চেয়ে বড় আর কোন জিনিস হতে পারে না।
৭৭
এ সংঘাতে আল্লাহ কেন হকপন্থীদের সাথে একটি পক্ষ হন এটি হচ্ছে তার কারণ। এর কারণ হচ্ছে, হকের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত দ্বিতীয় পক্ষটি বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞ এবং নিয়ামত অস্বীকারকারী। আল্লাহ তার কাছে যেসব আমানত সোপর্দ করেছেন তার প্রত্যেকটিতে সে খেয়ানত করেছে এবং তাকে যেসব নিয়ামত দান করেছেন অকৃতজ্ঞতা, অস্বীকৃতি ও নেমকহারামির মাধ্যমে তার প্রত্যেকটির জবাব দিয়ে চলছে। কাজেই আল্লাহ তাকে অপছন্দ করেন এবং তার বিরুদ্ধে সংগ্রামরত হকপন্থীদেরকে সাহায্য-সহায়তা দান করেন।