وَجَعَلْنَا ٱبْنَ مَرْيَمَ وَأُمَّهُۥٓ ءَايَةًۭ وَءَاوَيْنَـٰهُمَآ إِلَىٰ رَبْوَةٍۢ ذَاتِ قَرَارٍۢ وَمَعِينٍۢ
আর মারয়ামপুত্রও তার মাকে আমি একটি নিদর্শনে পরিণত করেছিলাম ৪৩ এবং তাদেরকে রেখেছিলাম একটি সুউচ্চ ভূমিতে, সে স্থানটি ছিল নিরাপদ এবং সেখানে স্রোতম্বিনী প্রবহমান ছিল। ৪৪
৪৩
একথা বলা হয়নি যে, মারয়াম পুত্র একটি নিদর্শন ছিল এবং স্বয়ং মারয়াম একটি নিদর্শন ছিল। আবার একথাও বলা হয়নি যে, মারয়াম পুত্র ও তার মাকে দু’টি নিদর্শনে পরিণত করেছিলাম। বরং বলা হয়েছে, তাদের দু’জনকে মিলিয়ে একটি নিদর্শনে পরিণত করা হয়েছিল। এর অর্থ এছাড়া আর কি হতে পারে যে, পিতা ছাড়া ইবনে মারয়ামের জন্ম হওয়া এবং স্বামীর সাহচর্য ছাড়া মারয়ামের গর্ভধারণ করাই এমন একটি জিনিস যা তাদের দু’জনকে একটি নিদর্শনে পরিণত করে দেয়। যারা পিতা ছাড়া হযরত ঈসার জন্ম অস্বীকার করে তারা মাতা ও পুত্রের একটি নিদর্শন হবার কি ব্যাখ্যা দেবেন? (আরো বিস্তারিত জানার জন্য তাফহীমুল কুরআন, সূরা আলে ইমরান, ৪৪-৫৩, আন নিসা, ১৯০, ২১২, ২১৩, মারয়াম ১৫ থেকে ২২ এবং আল আম্বিয়া, ৮৯-৯০ টীকা দেখুন) এখানে দু’টি কথা আরো ব্যাখ্যা যোগ্য। এক, হযরত ঈসা ও তাঁর মাতার ব্যাপারটি মূর্খ লোকদের আর একটি দুর্বলতা চিহ্নিত করছে। ও পরে যে সকল নবীর কথা আলোচনা করা হয়েছে তাদের প্রতি ঈমান আনার ব্যাপারটি তো এ বলে অস্বীকার হয়েছে যে, তোমরা তো মানুষ আর মানুষ কি কখনো নবী হতে পারে? কিন্তু লোকেরা যখন হযরত ঈসার ও তাঁর মায়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলো এবং তাদের ভক্ত হয়ে গেলো তখন তাদেরকেমানুষেরমর্যাদা থেকে উঠিয়ে নিয়ে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দিল। দুই, যারা হযরত ঈসার অলৌকিক জন্ম এবং দোলনায় শায়িত অবস্থায় তাঁর ভাষণ শুনে তাঁর মুজিযা হবার সুস্পষ্ট প্রমাণ দেখে নেয়া সত্ত্বেও ঈমান আনতে অস্বীকার করেছিল এবং হযরত মারয়ামকে অপবাদ দিয়েছিল তাদেরকে এমন শাস্তি দেয়া হয়েছিল যা সমগ্র দুনিয়াবাসীর জন্য চিরকালীন শিক্ষণীয় হয়ে রয়েছে।
৪৪
বিভিন্ন জন এ থেকেবিভিন্ন স্থানের কথা মনে করেছেন। কেউ বলেন, এ স্থানটি ছিল দামেশ্ক। কেউ বলেন, আর্রম্লাহ। কেউ বলেন, বাইতুল মাক্দিস আবার কেউ বলেন মিসর। খৃষ্টীয় বর্ণনা অনুযায়ী হযরত মার্য়াম ঈসার জন্মের পর তাঁরহেফাজতের জন্য দু’বার স্বদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। প্রথমবার বাদশাহ হিরোডিয়াসের আমলে তিনি তাকে মিসরে নিয়ে যান এবং বাদশাহর মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই থাকেন। তারপর আয্খিলাউসের শাসনামলে তাঁকে গালীলের নাসেরাহ শহরে আশ্রয় নিতে হয়। (মথি ২: ১৩ থেকে ২৩) এখন কুরআন কোন্ স্থানটির প্রতি ইঙ্গিত করছে তা নিশ্চয়তা সহকারে বলা কঠিন। আভিধানিক অর্থে “রাবওয়াহ” এমন সুউচ্চ ভূমিকে বলা হয় যা সমতল এবং আশপাশের এলাকা থেকে উঁচু। অন্যদিক “যা-তি কারার” ذَاتِ قَرَارٍ মানে হচ্ছে এমন জায়গা যেখানে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদী পাওয়া যায় এবং অবস্থানকারী সেখানে স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন যাপন করতে পারে। আর “মাঈন” مَعِينٍ মানে হচ্ছে বহমান পানি বা নির্ঝারিণী।