يَـٰٓأَيُّهَا ٱلرُّسُلُ كُلُوا۟ مِنَ ٱلطَّيِّبَـٰتِ وَٱعْمَلُوا۟ صَـٰلِحًا ۖ إِنِّى بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌۭ
হে রসূল! ৪৫ পাক-পবিত্র জিনিস খাও এবং সৎকাজ করো। ৪৬ তোমারা যা কিছুই করো না কেন আমি তা ভালোভাবেই জানি।
৪৫
আগের ২টি রুকূ’তে বিভিন্ন নবীর কথা বলার পর এখন يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ বলা সকল নবীকে সম্বোধন করার অর্থ এই নয় যে, সকল নবী এক সঙ্গে এক জায়গায় ছিলেন এবং তাঁদেরকে সম্বোধন করে একথা বলা হয়েছে। বরং এ থেকে একথা বলাই উদ্দেশ্য যে, প্রতি যুগে বিভিন্ন দেশে ও জাতির মধ্যে আগমণকারী নবীদেরকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং স্থান-কালের বিভিন্নতা সত্ত্বেও তাঁদের সবাইকে একই হুকুম দেয়া হয়েছিল। পরের আয়াতে যেহেতু সকল নবীকে এক উম্মত, এক জামায়াত ও এক দলভুক্ত গণ্য করা হয়েছে তাই এখানে এমন বর্ণনা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে যার ফলে চোখের সামনে তাদের সবার এক দলভুক্ত হবার ছবি ভেসে ওঠে। তারা যেন সবাই এক জায়গায় সমবেত আছেন এবং সবাইকে একই নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এ যুগের একদল স্থুল বুদ্ধি সম্পন্ন লোক এ বর্ণনা রীতির সূক্ষ্মতা ও সৌন্দর্য অনুধাবন করতে পারেননি এবং তারা এ থেকে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, এ সম্বোধনটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেরপরে আগমনকারী নবীদেরকে করা হয়েছে এবং এ থেকে তাঁর পরে নবুওয়াতের ধারা পরম্পরা জারী হবার প্রমাণ পাওয়া যায়। ভাবতে অবাক লাগে যে, যারা ভাষা ও সাহিত্যের সূক্ষ্ম রসবোধ থেকে এত বেশী বঞ্চিত তারা আবার কুরআনের ব্যাখ্যা করার দুঃ সাহস করেন।
৪৬
পাক-পবিত্র জিনিস বলে এমন জিনিস বুঝানো হয়েছে যা নিজেও পাক-পবিত্র এবং হালাল পথে অর্জিতও হয়। পবিত্র জিনিস খাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বৈরাগ্যবাদ ও ভোগবাদের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ মধ্যপন্থার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। মুসলমান বৈরাগী ও যোগীর মতো পবিত্র জীবিকা থেকে যেমননিজেকে বঞ্চিত করতে পারে না, তেমনি দুনিয়া পূজারী ও ভোগবাদীর মতো হালাল-হারামের পার্থক্য না করে সব জিনিসে মুখও লাগাতে পারে না।
সৎকাজ করার আগে পবিত্র ও হালাল জিনিস খাওয়ার নির্দেশের মধ্যে এদিকে পরিষ্কার ইঙ্গিত রয়েছে যে, হারাম খেয়ে সৎকাজ করার কোন মানে হয় না। সৎকাজের জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে হালাল রিযিক খাওয়া। হাদীসে বলা হয়েছে, নবী ﷺ বলেছেনঃ “হে লোকেরা! আল্লাহ নিজে পবিত্র, তাই তিনি পবিত্র জিনিসই পছন্দ করেন।” তারপর তিনি এ আয়াতটি তেলাওয়াত করেন এবং তারপর বলেনঃ
الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِىَ بِالْحَرَامِ يَمُدُّ يَدَيهُ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ-
“এক ব্যক্তি আসে সুদীর্ঘ পথ সফল করে। দেহ ধূলি ধূসরিত। মাথার চুল এলোমেলো। আকাশের দিকে হাত তুলে প্রার্থনা করেঃ হে প্রভু! হে প্রভু! কিন্তু অবস্থা হচ্ছে এই যে, তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, কাপড় চোপড় হারাম এবং হারাম খাদ্যে তার দেহ প্রতিপালিত হয়েছে। এখন কিভাবে এমন ব্যক্তির দোয়া কবুল হবে।” (মুসলিম, তিরমিযী ও আহমাদ, আবু হুরাইরা (রাঃ ) থেকে)