يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لِيَسْتَـْٔذِنكُمُ ٱلَّذِينَ مَلَكَتْ أَيْمَـٰنُكُمْ وَٱلَّذِينَ لَمْ يَبْلُغُوا۟ ٱلْحُلُمَ مِنكُمْ ثَلَـٰثَ مَرَّٰتٍۢ ۚ مِّن قَبْلِ صَلَوٰةِ ٱلْفَجْرِ وَحِينَ تَضَعُونَ ثِيَابَكُم مِّنَ ٱلظَّهِيرَةِ وَمِنۢ بَعْدِ صَلَوٰةِ ٱلْعِشَآءِ ۚ ثَلَـٰثُ عَوْرَٰتٍۢ لَّكُمْ ۚ لَيْسَ عَلَيْكُمْ وَلَا عَلَيْهِمْ جُنَاحٌۢ بَعْدَهُنَّ ۚ طَوَّٰفُونَ عَلَيْكُم بَعْضُكُمْ عَلَىٰ بَعْضٍۢ ۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمُ ٱلْـَٔايَـٰتِ ۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌۭ
হে ঈমানদারগণ! ৮৫ তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসী ৮৬ এবং তোমাদের এমন সব সন্তান যারা এখনো বুদ্ধির সীমানায় পৌঁছেনি, ৮৭ তাদের অবশ্যি তিনটি সময়ে অনুমতি নিয়ে তোমাদের কাছে আসা উচিতঃ ফজরের নামাযের আগে, দুপুরে যখন তোমরা পোশাক ছেড়ে রেখে দাও এবং এশার নামাযের পর। এ তিনটি তোমাদের গোপনীয়তার সময়। ৮৮ এরপরে তারা বিনা অনুমতিতে এলে তোমাদের কোন গুনাহ নেই এবং তাদেরও না। ৮৯ তোমাদের পরস্পরের কাছে বারবার আসতেই হয়। ৯০ এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য নিজের বাণী সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন এবং তিনি সবকিছু জানেন ও বিজ্ঞ।
৮৫
এখান থেকে আবার সামাজিক বিধানের ধারাবাহিক বর্ণনা শুরু হচ্ছে। সূরা নূরের এ অংশটি ওপরের ভাষণের কিছুকাল পরে নাযিল হওয়া মোটেই বিচিত্র নয়।
৮৬
অধিকাংশ মুফাস্সির ও ফকীহের মতে “মালিকানাধীন” বলতে দাস-দাসী উভয়কে বুঝানো হয়েছে। কারণ এখানে ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ইবনে উমর ও মুজাহিদ এ আয়াতে মামলুক তথা মালিকানাধীন শব্দটি কেবলমাত্র দাস অর্থে নিয়েছেন। তাঁরা দাসীকে এর বাইরে রেখেছেন। অথচ সামনের দিকে যে হুকুম বর্ণনা করা হয়েছে সেদিকে দৃষ্টি দিলে এ বিশেষ অর্থের কোন কারণ দেখা যায় না। একান্তে অবস্থান করার সময় যেমন নিজের ছেলেমেয়েদের অকস্মাৎ এসে যাওয়া সঙ্গত নয় তেমনি দাসী-চাকরানীর এসে যাওয়াও অসঙ্গত।
এ আয়াতের আদেশ প্রাপ্ত বয়স্ক-অপ্রাপ্ত বয়স্ক উভয় ধরনের দাস-দাসীর জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য, এ ব্যাপারে সবাই একমত।
৮৭
দ্বিতীয় অনুবাদ হতে পারে, “প্রাপ্ত বয়স্কদের মতো স্বপ্ন দেখার বয়সে পৌঁছেনি।” এ থেকেই ফকীহগণ স্বপ্নদোষকে ছেলেদের বয়ঃপ্রাপ্ত হবার সূচনা বলে মেনে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে সবাই একমত। কিন্তু আমি নিজে মূল অনুবাদে যে অর্থ করেছি তা অগ্রগণ্য হবার কারণ হচ্ছে এই যে, এ হুকুমটি ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য। অন্যদিকে স্বপ্নদোষকে বয়ঃপ্রাপ্ত হবার আলামত হিসেবে গণ্য করার পর হুকুমটি শুধুমাত্র ছেলেদের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায়। কারণ মেয়েদের প্রাপ্ত বয়স্ক হবার সূচনা হচ্ছে মাসিক ঋতুস্রাব, স্বপ্নদোষ নয়। কাজেই আমার মতে হুকুমের উদ্দেশ্য হচ্ছে, যতদিন ঘরের ছেলে মেয়েরা যৌন চেতনা জাগ্রত হবার বয়সে পৌঁছে না ততদিন তারা এ নিয়ম মেনে চলবে। এরপর যখনই তারা এ নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছে যাবে তখনই তাদের যে হুকুম মেনে চলতে হবে তা সামনে আসছে।
৮৮
মূলে عَوْرَاتٍ (আওরাত) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, “এ তিনটি সময় তোমাদের জন্য আওরাত।” আওরাত বলতে আমাদের ভাষায় মেয়েলোক বা নারী জাতি বুঝায়। কিন্তু আরবী ভাষায় এর মানে হয় বাধা ও বিপদের জায়গা এবং যে জিনিসের খুলে যাওয়া মানুষের জন্য লজ্জার ব্যাপার এবং যার প্রকাশ হয়ে পড়া তার জন্য বিরক্তিকর হয় এমন জিনিসের জন্যও এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া কোন জিনিসের অসংরক্ষিত হওয়া অর্থেও এর ব্যবহার হয়। এ অর্থগুলো সবই পরস্পর নিকট সম্পর্কযুক্ত এবং আয়াতের অর্থের সাথে কোন না কোন পর্যায়ে সংযুক্ত। এর অর্থ হচ্ছে এ সময়গুলোতে তোমরা একাকী বা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে এমন অবস্থায় থাকো যে অবস্থায় গৃহের ছেলেমেয়ে বা চাকর বাকরদের হঠাৎ তোমাদের কাছে চলে যাওয়া সংগত নয়। কাজেই এ তিন সময়ে তারা যখন তোমাদের নির্জন স্থানে আসতে চায় তখন তাদের পূর্বাহ্ণে অনুমতি নেবার নির্দেশ দাও।
৮৯
অর্থাৎ এ তিন সময় ছাড়া অন্য সময় নাবালক ছেলেমেয়েরা এবং গৃহস্বামীর ও গৃহকর্ত্রীর মালিকানাধীন গোলাম ও বাঁদীরা সবসময় নারীর ও পুরুষদের কাছে তাদের কামরায় বা নির্জন স্থানে বিনা অনুমতিতে যেতে পারে। এ সময় যদি তোমরা কোন অসতর্ক অবস্থায় থাকো এবং তারা অনুমতি ছাড়াই এসে যায় তাহলে তাদের হুমকি-ধামকি দেবার অধিকার তোমাদের নেই। কারণ কাজের সময় নিজেদেরকে এ ধরনের অসতর্ক অবস্থায় রাখা তোমাদের নিজেদেরই বোকামী ছাড়া তো আর কিছুই নয়। তবে যদি তোমাদের শিক্ষা-দীক্ষা সত্ত্বেও নির্জনবাসের এ তিন সময় তারা অনুমতি ছাড়াই আসে তাহলে তারা দোষী হবে। অন্যথায় তোমরা নিজেরাই যদি তোমাদের সন্তান ও গোলামী-বাঁদীদের এ আদব-কায়দা ও আচার-আচরণ শিক্ষা না দিয়ে থাকো, তাহলে তোমরা নিজেরাই গোনাহগার হবে।
৯০
উপরোক্ত তিনটি সময় ছাড়া অন্য সবসময় ছোট ছেলেমেয়ে ও গোলাম-বাঁদীদের বিনা হুকুমে আসার সাধারণ অনুমতি দেবার এটিই হচ্ছে কারণ। এ থেকে উসূলে ফিকাহর এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, শরীয়াতের বিধানসমূহ কোন না কোন প্রয়োজন ও উপযোগিতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত এবং প্রত্যেক হুকুমের পেছনে নিশ্চিতভাবেই কোন না কোন কার্যকারণ আছেই, তা বিবৃত হোক বা না হোক।