وَإِذَا بَلَغَ ٱلْأَطْفَـٰلُ مِنكُمُ ٱلْحُلُمَ فَلْيَسْتَـْٔذِنُوا۟ كَمَا ٱسْتَـْٔذَنَ ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمْ ءَايَـٰتِهِۦ ۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌۭ
আর যখন তোমাদের সন্তানরা বুদ্ধির সীমানায় পৌঁছে যায় ৯১ তখন তাদের তেমনি অনুমতি নিয়ে আসা উচিত যেমন তাদের বড়রা অনুমতি নিয়ে থাকে। এভাবে আল্লাহ তাঁর আয়াত তোমাদের সামনে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন এবং তিনি সবকিছু জানেন ও বিজ্ঞ।
৯১
অর্থাৎ সাবালক হয়ে যায়, যেমন ৮৭ টীকায় বলা হয়েছে ছেলেদের ক্ষেত্রে স্বপ্নদোষ ও মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিক ঋতুস্রাব থেকেই তাদের সাবালকত্ব শুরু হয়। কিন্তু যেসব ছেলেমেয়ে কোন কারণে বেশী বয়স পর্যন্ত এসব পরিবর্তন মুক্ত থাকে তাদের ব্যাপারে ফকীহগণ বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন। ইমাম শাফেঈ, ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ ও ইমাম আহমাদের মতে এ অবস্থায় ১৫ বছরের ছেলেমেয়েকে সাবালক মনে করা হবে। ইমাম আবু হানীফার একটি উক্তি এর সমর্থন করে। কিন্তু ইমামের বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে এ অবস্থায় ১৭ বছরের মেয়ে ও ১৮ বছের ছেলেকে সাবালক গণ্য করা হবে। কুরআন ও হাদীসের কোন বক্তব্য এ দু’টি উক্তির ভিত্তি নয় বরং এর ভিত্তি গড়ে উঠেছে ফিকাহভিত্তিক ইজতিহাদের ওপর কাজেই সারা দুনিয়ায় চিরকালই যেসব ছেলের স্বপ্নদোষ হয়নি ও যেসব মেয়ের ঋতুস্রাব দেখা দেয়নি তাদের সাবালকত্বের জন্য ১৫ বা ১৮ বছর বয়সকেই যে সীমানা হিসেবে মেনে নেয়া হবে এমন কোন কথা নেই। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন যুগে শারীরিক বৃদ্ধি ও বিকাশের অবস্থা বিভিন্ন হয়। আসলে, সাধারণত কোন দেশে যেসব বয়সের ছেলেমেয়েদের স্বপ্নদোষ ও মাসিক ঋতুস্রাব হওয়া শুরু হয় তাদের গড়পড়তা পার্থক্য বের করে নিতে হবে, তারপর যেসব ছেলেমেয়ের মধ্যে কোন অস্বাভাবিক কারণে এ চিহ্নগুলো যথাযথ উপযোগী সময়ে প্রকাশিত না হয় তাদের জন্য সর্বাধিক পরিমাণ বয়সের ওপর এ গড়পড়তার বৃদ্ধি ধরে তাকে সাবালকত্বের বয়স গণ্য করতে হবে। যেমন কোন দেশে সাধারণত কমপক্ষে ১২ এবং বেশীরপক্ষে ১৫ বছর বয়সের ছেলের স্বপ্নদোষ হয়। এক্ষেত্রে গড়পড়তা পার্থক্য হবে দেড় বছর। আর অস্বাভাবিক ধরনের ছেলেদের জন্য আমরা সাড়ে ষোল বছর বয়ঃসীমাকে সাবালকত্বের বয়স গণ্য করতে পারবো। এ নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের আইনবিদগণ নিজেদের এলাকার অবস্থার প্রেক্ষিতে একটি সীমা নির্ধারণ করতে পারেন।
১৫ বছরের সীমার পক্ষে একটি হাদীস পেশ করা হয়। এটি ইবনে উমর (রা.) বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেন, “আমার বয়স ছিল চৌদ্দ, সে সময় ওহোদ যুদ্ধে অংশ নেবার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে আমাকে পেশ করার হয়। তিনি আমাকে যুদ্ধে অংশ নেবার অনুমতি দেননি। তারপর খন্দকের যুদ্ধের সময় আমাকে আবার পেশ করা হয়। তখন আমার বয়স হয় ১৫ বছর। এ সময় তিনি আমাকে অনুমতি দেন।” (সিহাহে সিত্তা ও মুসনাদে আহাদ) কিন্তু দু’টি কারণে এ হাদীসটি থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করা যেতে পারে না। এক ওহোদ যুদ্ধ ৩ হিজরীর শওয়াল মাসের ঘটনা এবং খন্দকের যুদ্ধ মুহাম্মাদ ইবনে সা’দের বক্তব্য মতে ৫ হিজরীর যিলকদ মাসে সংঘটিত হয়। দুটো যুদ্ধের মধ্যে পুরো দু’বছর বা তার চেয়ে বেশী দিনের ব্যবধান রয়েছে। এখন যদি ওহোদ যুদ্ধের সময় ইবনে উমরের বয়স হয় ১৪ বছর তাহলে কেমন করে খন্দকের যুদ্ধের সময় তা শুধুমাত্র ১৫ বছর হয়?” হতে পারে তিনি ১৩ বছর ১১ মাস বয়সে ১৪ বছর এবং ১৫ বছর ১১ মাসকে ১৫ বছর বলেছেন। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, যুদ্ধের জন্য সাবালক হওয়া এক জিনিস এবং সামাজিক ব্যাপারের জন্য আইনগতভাবে সাবালক হওয়া অন্য জিনিস। এ দু’য়ের মধ্যে কোন অনিবার্যতার সম্পর্ক নেই। কাজেই এদের একটিকে অন্যটির জন্য প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করানো যেতে পারে না। তাই যেসব ছেলের স্বপ্নদোষ হয়নি তাদের সাবালকত্বের জন্য ১৫ বছর বয়ঃসীমা নির্ধারণ করা একটি আনুমানিক ও ইজতিহাদী সিদ্ধান্ত, কুরআন ও হাদীসের হুকুম নয়, এ ব্যাপারে এটিই সঠিক কথা।