قَالَتْ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِى وَلَدٌۭ وَلَمْ يَمْسَسْنِى بَشَرٌۭ ۖ قَالَ كَذَٰلِكِ ٱللَّهُ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ ۚ إِذَا قَضَىٰٓ أَمْرًۭا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ
একথা শুনে মারয়াম বললোঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমার সন্তান কেমন করে হবে? আমাকে তো কোন পুরুষ স্পর্শও করেনি।” জবাব এলোঃ “এমনটিই হবে। ৪৪ আল্লাহ্ যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোন কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন তখন কেবল এতটুকুই বলেন, হয়ে যাও, তাহলেই তা হয়ে যায়।”
৪৪
অর্থাৎ কোন পুরুষ তোমাকে স্পর্শ না করলেও তোমার সন্তান হবে। এখানে যে ‘এমনটি হবে’ (كذلك) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালামের জবাবেও এই একই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল। সেখানে এর যে অর্থ ছিল এখানেও সেই একই অর্থ হওয়াই উচিত। তা ছাড়া পরবর্তী বাক্য বরং পূর্বাপর সমস্ত বর্ণনাই এই অর্থ সমর্থন করে যে, কোনো প্রকার যৌন সংযোগ ছাড়াই হযরত মারয়ামকে সন্তান জন্মের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল। আর আসলে এভাবেই হযরত ঈসার (আঃ) জন্ম হয়েছিল। নয়তো দুনিয়ার আর দশটি স্ত্রীলোক যেভাবে সন্তান জন্ম দেয় সেভাবে পরিচিত স্বাভাবিক পদ্ধতিতে যদি হযরত মারয়ামের গর্ভে সন্তান জন্ম নেবার ব্যাপারটি ঘটে থাকতো এবং যদি প্রকৃতপক্ষে হযরত ঈসা (আঃ) ঐভাবেই জন্মগ্রহণ করে থাকতেন, তাহলে ৪ রুকূ’ থেকে ৬ রুকূ’ পর্যন্ত যে বর্ণনা চলে আসছে তা পুরোপুরি অর্থহীন হয়ে যায় এবং ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম সংক্রান্ত আর যে সমস্ত বর্ণনা আমরা কুরআনের আরো বিভিন্ন স্থানে পাই তাও নিরর্থক হয়ে পড়ে। পিতার ঔরস ছাড়াই অস্বাভাবিক পদ্ধতিতে হযরত ঈসার (আঃ) জন্ম হয়েছিল বলেই না খৃস্টানরা তাঁকে ‘আল্লাহ্র পুত্র’ ও ইলাহ মনে করেছিল। আর একজন কুমারী মেয়ে সন্তান প্রসব করেছে, এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেই তো ইহুদীরা তাঁর প্রতি দোষারোপ করেছিল। যদি এটা আদতে কোন সত্য ঘটনাই না হয়ে থাকে, তাহলে ঐ দু’টি দলের চিন্তার প্রতিবাদ প্রসঙ্গে কেবল এতটুকু বলে দেয়াই যথেষ্ট হতো যে, তোমরা ভুল বলছো, সে মেয়েটি ছিল বিবাহিতা, অমুক ব্যক্তি ছিল তার স্বামী এবং তারই ঔরসে ঈসার জন্ম হয়েছিল। এই সংক্ষিপ্ত চুম্বক কথা ক’টি বলার পরিবর্তে এতো দীর্ঘ ভূমিকা ফাঁদার, পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলার এবং সোজাসুজি উমুক ব্যক্তির পুত্র ঈসা বলার পরিবর্তে মারয়ামের পুত্র ঈসা বলার কি প্রয়োজন ছিল? এর ফলে তো বিষয়টি সহজে মীমাংসা হওয়ার পরিবর্তে আরো জটিল হয়ে পড়েছে। কাজেই যারা কুরআনকে আল্লাহর কালাম বলে মানে এবং এরপর ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে একথা প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে, স্বাভাবিকভাবে মাতা পিতার মিলনের ফলে তাঁর জন্ম হয়েছিল, তারা আসলে একথা প্রমাণ করেন যে, মনের কথা প্রকাশ করা ও নিজের বক্তব্য সুস্পষ্ট করে তুলে ধরার যতটুকু ক্ষমতা তাদের আছে, আল্লাহর ততটুকু নেই (মা’আযাল্লাহ)।