لَن تَنَالُوا۟ ٱلْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا۟ مِمَّا تُحِبُّونَ ۚ وَمَا تُنفِقُوا۟ مِن شَىْءٍۢ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِهِۦ عَلِيمٌۭ
তোমরা নেকী অর্জন করতে পারো না যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় বস্তুগুলো (আল্লাহ্র পথে) ব্যয় করো। ৭৫ আর তোমরা যা ব্যয় করবে আল্লাহ তা থেকে বেখবর থাকবেন না।
৭৫
নেকী, সওয়াব ও পুণ্যের ব্যাপারে তারা যে ভুল ধারণা পোষণ করতো, তা দূর করাই এ বক্তব্যের উদ্দেশ্য। নেকী ও পূণ্য সম্পর্কে তাদের মনে যে ধারণা ছিল তার মধ্যে সবচেয়ে উন্নত ধারণাটির চেহারা ছিল নিম্নরূপঃ শত শত বছরের ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের পথ বেয়ে শরীয়াতের যে একটি বিশেষ আনুষ্ঠানিক চেহারা তাদের সমাজে তৈরি হয়ে গিয়েছিল মানুষ নিজের জীবনে পুরোপুরি তার নকলনবিশী করবে। আর তাদের আলেম সমাজ আইনের চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে যে একটি বড় রকমের আইন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল জীবনের ছোটখাটো ও খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলোকে দিনরাত বসে বসে তার মানদণ্ডে বিচার করতে থাকবে। ধার্মিকতার এই আবরণের নীচে সাধারণত ইহুদীদের বড় বড় ‘ধার্মিকেরা’ সংকীর্ণতা, লোভ, লালসা, কার্পণ্য, সত্য গোপন করা ও সত্যকে বিক্রি করার দোষগুলো সঙ্গোপনে লুকিয়ে রেখেছিল। ফলে সাধারণ মানুষ তাদেরকে সৎ ও পুণ্যবান মনে করতো। এ বিভ্রান্তি দূর করার জন্য তাদেরকে বলা হচ্ছেঃ তোমরা যে জিনিসকে কল্যাণ, সততা ও সৎকর্মশীলতা মনে করছো ‘সৎলোক’ হওয়া তার চেয়ে অনেক বড় ব্যাপার। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসাই হচ্ছে নেকীর মূল প্রাণসত্তা। এই ভালোবাসা এমন পর্যায়ে পৌঁছতে হবে, যার ফলে আল্লাহর সন্তুষ্টির মোকাবিলায় মানুষ দুনিয়ার কোন জিনিসকেই প্রিয়তর মনে করবে না। যে জিনিসের প্রতি ভালোবাসা মানুষের মনে এমনভাবে প্রাধান্য বিস্তার করে যে, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার জন্য সে তাকে ত্যাগ করতে পারে না, সেটিই হচ্ছে একটি দেবতা। এই দেবতাকে বিসর্জন দিতে ও বিনষ্ট করতে না পারলে নেকীর দুয়ার তার জন্য বন্ধ থাকবে। এই প্রাণসত্তা শূণ্য হবার পর নেকী নিছক বাহ্যিক আচার অনুষ্ঠান ভিত্তিক ধার্মিকতায় পরিণত হয় এবং তাকে তখন এমন একটি চকচকে তেলের সাথে তুলনা করা যায়, যা একটি ঘুণে ধরা কাঠের গায়ে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের তেল চকচকে কাঠ দেখে মানুষ বিভ্রান্ত হতে পারে, আল্লাহ নয়।