আলে ইমরান

২০০ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
১১১ ) এরা তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারে না। বড় জোর কিছু কষ্ট দিতে পারে। এরা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করলে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে তারপর এমনি অসহায় হয়ে পড়বে যে কোথাও থেকে কোন সাহায্য পাবে না।
لَن يَضُرُّوكُمْ إِلَّآ أَذًى وَإِن يُقَٰتِلُوكُمْ يُوَلُّوكُمُ ٱلْأَدْبَارَ ثُمَّ لَا يُنصَرُونَ ١١١
১১২ ) এদের যেখানেই পাওয়া গেছে সেখানেই এদের ওপর লাঞ্ছনার মার পড়েছে। তবে কোথাও আল্লাহর দায়িত্বে বা মানুষের দায়িত্বে কিছু আশ্রয় মিলে গেলে তা অবশ্যি ভিন্ন কথা, ৯০ আল্লাহর গযব এদেরকে ঘিরে ফেলেছে। এদের ওপর মুখাপেক্ষিতা ও পরাজয় চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এসব কিছুর কারণ হচ্ছে এই যে, এরা আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করতে থেকেছে এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। এসব হচ্ছে এদের নাফরমানি ও বাড়াবাড়ির পরিণাম।
ضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ ٱلذِّلَّةُ أَيْنَ مَا ثُقِفُوٓا۟ إِلَّا بِحَبْلٍ مِّنَ ٱللَّهِ وَحَبْلٍ مِّنَ ٱلنَّاسِ وَبَآءُو بِغَضَبٍ مِّنَ ٱللَّهِ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ ٱلْمَسْكَنَةُ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا۟ يَكْفُرُونَ بِـَٔايَٰتِ ٱللَّهِ وَيَقْتُلُونَ ٱلْأَنۢبِيَآءَ بِغَيْرِ حَقٍّ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا۟ وَّكَانُوا۟ يَعْتَدُونَ ١١٢
১১৩ ) কিন্তু সমস্ত আহলি কিতাব এক ধরনের নয়। এদের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে সত্য পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তারা রাতে আল্লাহর আয়াত পাঠ করে এবং তাঁর সামনে সিজদাবনত হয়।
لَيْسُوا۟ سَوَآءً مِّنْ أَهْلِ ٱلْكِتَٰبِ أُمَّةٌ قَآئِمَةٌ يَتْلُونَ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ ءَانَآءَ ٱلَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُونَ ١١٣
১১৪ ) আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে। সৎকাজের নির্দেশ দেয়, অসৎকাজ থেকে বিরত রাখে এবং কল্যাণ ও নেকীর কাজে তৎপর থাকে। এরা সৎলোক।
يُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ وَيَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَيُسَٰرِعُونَ فِى ٱلْخَيْرَٰتِ وَأُو۟لَٰٓئِكَ مِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١١٤
১১৫ ) এরা যে সৎকাজই করবে তার অমর্যাদা করা হবে না। আল্লাহ‌ মুত্তাকীদেরকে খুব ভালোভাবেই জানেন।
وَمَا يَفْعَلُوا۟ مِنْ خَيْرٍ فَلَن يُكْفَرُوهُ وَٱللَّهُ عَلِيمٌۢ بِٱلْمُتَّقِينَ ١١٥
১১৬ ) আর যারা কুফরীনীতি অবলম্বন করেছে, আল্লাহর মোকাবিলায় তাদের ধন-সম্পদ কোন কাজে লাগবে না এবং তাদের সন্তান–সন্ততিও। তারা তো আগুনের মধ্যে প্রবেশ করবে এবং সেখানেই তারা থাকবে চিরকাল।
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لَن تُغْنِىَ عَنْهُمْ أَمْوَٰلُهُمْ وَلَآ أَوْلَٰدُهُم مِّنَ ٱللَّهِ شَيْـًٔا وَأُو۟لَٰٓئِكَ أَصْحَٰبُ ٱلنَّارِ هُمْ فِيهَا خَٰلِدُونَ ١١٦
১১৭ ) তারা তাদের এই দুনিয়ার জীবনে যা কিছু ব্যয় করছে তার উপমা হচ্ছে এমন বাতাস যার মধ্যে আছে তুষার কণা। যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে তাদের শস্যক্ষেতের ওপর দিয়ে এই বাতাস প্রবাহিত হয় এবং তাকে ধ্বংস করে দেয়। ৯১ আল্লাহ তাদের ওপর জুলুম করেননি। বরং প্রকৃতপক্ষে এরা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করেছে।
مَثَلُ مَا يُنفِقُونَ فِى هَٰذِهِ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا كَمَثَلِ رِيحٍ فِيهَا صِرٌّ أَصَابَتْ حَرْثَ قَوْمٍ ظَلَمُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ فَأَهْلَكَتْهُ وَمَا ظَلَمَهُمُ ٱللَّهُ وَلَٰكِنْ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ ١١٧
১১৮ ) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের নিজেদের জামায়াতের লোকদের ছাড়া অন্য কাউকে তোমাদের গোপন কথার সাক্ষী করো না। তারা তোমাদের দুঃসময়ের সুযোগ গ্রহণ করতে কুন্ঠিত হয় না। ৯২ যা তোমাদের ক্ষতি করে তাই তাদের কাছে প্রিয়। তাদের মনের হিংসা ও বিদ্বেষ তাদের মুখ থেকে ঝরে পড়ে এবং যা কিছু তারা নিজেদের বুকের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে তা এর চাইতেও মারাত্মক। আমি তোমাদের পরিষ্কার হিদায়াত দান করেছি। তবে যদি তোমরা বুদ্ধিমান হও (তাহলে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখার সতর্কতা অবলম্বন করবে) ।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَتَّخِذُوا۟ بِطَانَةً مِّن دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا۟ مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ ٱلْبَغْضَآءُ مِنْ أَفْوَٰهِهِمْ وَمَا تُخْفِى صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ ٱلْءَايَٰتِ إِن كُنتُمْ تَعْقِلُونَ ١١٨
১১৯ ) তোমরা তাদেরকে ভালোবাসো কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না অথচ তোমরা সমস্ত আসমানী কিতাবকে মানো। ৯৩ তারা তোমাদের সাথে মিলিত হলে বলে, আমরাও(তোমাদের রসূল ও কিতাবকে) মেনে নিয়েছি। কিন্তু তোমাদের থেকে আলাদা হয়ে যাবার পর তোমাদের বিরুদ্ধে তাদের ক্রোধ ও আক্রোশ এতবেশী বেড়ে যায় যে, তারা নিজেদের আঙুল কামড়াতে থাকে। তাদেরকে বলে দাও, নিজেদের ক্রোধ ও আক্রোশে তোমরা নিজেরাই জ্বলে পুড়ে মরো। আল্লাহ‌ মনের গোপন কথাও জানেন।
هَٰٓأَنتُمْ أُو۟لَآءِ تُحِبُّونَهُمْ وَلَا يُحِبُّونَكُمْ وَتُؤْمِنُونَ بِٱلْكِتَٰبِ كُلِّهِۦ وَإِذَا لَقُوكُمْ قَالُوٓا۟ ءَامَنَّا وَإِذَا خَلَوْا۟ عَضُّوا۟ عَلَيْكُمُ ٱلْأَنَامِلَ مِنَ ٱلْغَيْظِ قُلْ مُوتُوا۟ بِغَيْظِكُمْ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ ١١٩
১২০ ) তোমাদের ভালো হলে তাদের খারাপ লাগে এবং তোমাদের ওপর কোন বিপদ এলে তারা খুশী হয়। তোমরা যদি সবর করো এবং আল্লাহকে ভয় করে কাজ করতে থাকো, তাহলে তোমাদের বিরুদ্ধে তাদের কোন কৌশল কার্যকর হতে পারে না। তারা যা কিছু করছে আল্লাহ‌ তা চতুর্দিক থেকে বেষ্টন করে আছেন।
إِن تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِن تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُوا۟ بِهَا وَإِن تَصْبِرُوا۟ وَتَتَّقُوا۟ لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْـًٔا إِنَّ ٱللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ ١٢٠
৯০.
অর্থাৎ দুনিয়ার কোথাও যদি তারা কিছুটা শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করে থাকে তাহলে তা তাদের নিজেদের ক্ষমতা বলে অর্জিত হয়নি বরং অন্যের সহায়তা ও অনুগ্রহের ফল। কোথাও কোন মুসলিম সরকার আল্লাহর নামে তাদেরকে নিরাপত্তা দান করেছে এবং কোথাও কোন অমুসলিম সরকার নিজস্বভাবে তাদেরকে সহায়তা দান করেছে। এভাবে কোন কোন সময় দুনিয়ার কোথাও তারা শক্তিশালী হবার সুযোগও লাভ করেছে। কিন্তু তাও নিজের বাহু বলে নয়, বরং নিছক অপরের অনুগ্রহে তথা পরের ধনে পোদ্দারী করার মতো।
৯১.
এই উপমাটিতে শস্যক্ষেত মানে হচ্ছে জীবন ক্ষেত্র। আখেরাতে মানুষকে তার এই জীবনক্ষেতের ফসল কাটতে হবে। বাতাস বলতে মানুষের বাহ্যিক কল্যাণাকাংখাকে বুঝানো হয়েছে। যার ভিত্তিতে কাফেররা জনকল্যাণমূলক কাজ এবং দান খয়রাত ইত্যাদিতে অর্থ ব্যয় করে থাকে। আর তূষারকণা হচ্ছে, সঠিক ঈমান ও আল্লাহর বিধান অনুসৃতির অভাব, যার ফলে তাদের সমগ্র জীবন মিথ্যায় পর্যবসিত হয়। এ উপমাটির সাহায্যে আল্লাহ‌ একথা বলতে চাচ্ছেন যে, শস্যক্ষেতের পরিচর্যার ক্ষেত্রে বাতাস যেমন উপকারী তেমনি আবার এই বাতাসের মধ্যে যদি তূষারকণা থাকে তাহলে তা শস্যক্ষেতকে সবুজ শ্যামল করার পরিবর্তে ধ্বংস করে দেয়। ঠিক তেমনি দান-খয়রাত যদিও মানুষের আখেরাতের ক্ষেতের পরিচর্যা করে কিন্তু তার মধ্যে কুফরীর বিষ মিশ্রিত থাকলে তা লাভজনক হবার পরিবর্তে মানুষের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। একথা সুস্পষ্ট যে, মানুষের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ‌ এবং মানুষ যে ধন-সম্পদ ব্যয় করছে তার মালিকও আল্লাহ। এখন যদি আল্লাহর এই দাস তার মালিকের সার্বভৌম কর্তৃত্ব স্বীকার না করে অথবা তাঁর বন্দেগীর সাথে আর কারো অবৈধ বন্দেগী শরীক করে এবং আল্লাহ‌ প্রদত্ত সম্পদ ব্যয় করে ও তাঁর রাজ্যের মধ্যে চলাফেরা ও বিভিন্ন কাজ কারবার করে তাঁর আইন ও বিধানের আনুগত্য না করে, তাহলে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তার এ সমস্ত কাজ অপরাধে পরিণত হয়। প্রতিদান পাওয়া তো দূরের কথা বরং এই সমস্ত অপরাধ তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করার ভিত্তি সরবরাহ করে। তার দান খয়রাতের দৃষ্টান্ত হচ্ছেঃ কোন চাকর যেন তার মনিবের অনুমতি ছাড়াই তার অর্থ ভাণ্ডারের দরজা খুলে নিজের ইচ্ছামত যেখানে সঙ্গত মনে করলো সেখানে ব্যয় করে ফেললো।
৯২.
মদীনার আশেপাশে যেসব ইহুদী বাস করতো আওস ও খাযরাজ গোত্রের লোকদের সাথে প্রাচীন কাল থেকে তাদের বন্ধুত্ব চলে আসছিল। এ দুই গোত্রের লোকেরা ব্যক্তিগতভাবেও বিভিন্ন ইহুদীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতো এবং গোত্রীয়ভাবেও তারা ছিল পরস্পরের প্রতিবেশী ও সহযোগী। আওস ও খাযরাজ গোত্রের লোকেরা মুসলমান হয়ে যাবার পরও ইহুদীদের সাথে তাদের সেই পুরাতন সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। ব্যক্তিগতভাবেও তারা তাদের পুরাতন ইহুদী বন্ধুদের সাথে আগের মতই প্রীতি ও আন্তরিকতার সাথে মেলামেশা করতো। কিন্তু নবী ﷺ ও তাঁর মিশনের বিরুদ্ধে ইহুদীদের মধ্যে যে শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল তার ফলে তারা এই নতুন আন্দোলনে যোগদানকারীকোন ব্যক্তির সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে প্রস্তুত ছিল না। আনসারদের সাথে তারা বাহ্যত আগের সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। কিন্তু মনে মনে তারা হয়ে গিয়েছিল তাদের চরম শত্রু। ইহুদীরা তাদের এই বাহ্যিক বন্ধুত্বকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে মুসলমানদের জামায়াতে অভ্যন্তরীণ ফিত্‌না ও ফাসাদ সৃষ্টি করার এবং তাদের জামায়াতের গোপন বিষয়গুলোর খবর সংগ্রহ করে শত্রুদের হাতে পৌঁছিয়ে দেবার জন্য সর্বক্ষণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। মহান আল্লাহ‌ এখানে তাদের এই মুনাফেকী কর্মনীতি থেকে মুসলমানদের সাবধান থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
৯৩.
অর্থাৎ এটা একটা অদ্ভুত ব্যাপারই বলতে হবে, কোথায় তোমরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে, তা নয় বরং তারা তোমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। তোমরা তো কুরআনের সাথে তাওরাতকেও মানো, তাই তোমাদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ করার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে পারে না। বরং তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের অভিযোগ থাকতে পারতো। কারণ তারা কুরআনকে মানে না।
অনুবাদ: