আলে ইমরান

২০০ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
১৪১ ) – এবং তিনি এই পরীক্ষার মাধ্যমে সাচ্চা মুমিনদের বাছাই করে নিয়ে কাফেরদের চিহ্নিত করতে চাইছিলেন।
وَلِيُمَحِّصَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَيَمْحَقَ ٱلْكَٰفِرِينَ ١٤١
১৪২ ) তোমরা কি মনে করে রেখেছো তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ এখনো আল্লাহ‌ দেখেনইনি, তোমাদের মধ্যে কে তাঁর পথে প্রাণপণ যুদ্ধ করতে প্রস্তুত এবং কে তাঁর জন্য সবরকারী।
أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا۟ ٱلْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ جَٰهَدُوا۟ مِنكُمْ وَيَعْلَمَ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٤٢
১৪৩ ) তোমরা তো মৃত্যুর আকাংখা করছিলে! কিন্তু এটা ছিল তখনকার কথা যখন মৃত্যু সামনে আসেনি। তবে এখন তা তোমাদের সামনে এসে গেছে এবং তোমরা স্বচক্ষে তা দেখছো। ১০২
وَلَقَدْ كُنتُمْ تَمَنَّوْنَ ٱلْمَوْتَ مِن قَبْلِ أَن تَلْقَوْهُ فَقَدْ رَأَيْتُمُوهُ وَأَنتُمْ تَنظُرُونَ ١٤٣
১৪৪ ) মুহাম্মাদ একজন রসূল বৈ তো আর কিছুই নয়। তার আগে আরো অনেক রসূলও চলে গেছে। যদি সে মারা যায় বা নিহত হয়, তাহলে তোমরা কি পেছনের দিকে ফিরে যাবে? ১০৩ মনে রেখো, যে পেছনের দিকে ফিরে যাবে সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করবে না, তবে যারা আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে থাকবে তাদেরকে তিনি পুরস্কৃত করবেন।
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ ٱلرُّسُلُ أَفَإِي۟ن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ ٱنقَلَبْتُمْ عَلَىٰٓ أَعْقَٰبِكُمْ وَمَن يَنقَلِبْ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ فَلَن يَضُرَّ ٱللَّهَ شَيْـًٔا وَسَيَجْزِى ٱللَّهُ ٱلشَّٰكِرِينَ ١٤٤
১৪৫ ) কোন প্রাণীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরতে পারে না। মৃত্যুর সময় তো লেখা আছে। ১০৪ যে ব্যক্তি দুনিয়াবী পুরস্কার লাভের আশায় কাজ করবে আমি তাকে দুনিয়া থেকেই দেবো। আর যে ব্যক্তি পরকালীন পুরস্কার ১০৫ লাভের আশায় কাজ করবে সে পরকালের পুরস্কার পাবে এবং শোকরকারীদেরকে ১০৬ আমি অবশ্যি প্রতিদান দেবো।
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ ٱللَّهِ كِتَٰبًا مُّؤَجَّلًا وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ ٱلدُّنْيَا نُؤْتِهِۦ مِنْهَا وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ ٱلْءَاخِرَةِ نُؤْتِهِۦ مِنْهَا وَسَنَجْزِى ٱلشَّٰكِرِينَ ١٤٥
১৪৬ ) এর আগে এমন অনেক নবী চলে গেছে যাদের সাথে মিলে বহু আল্লাহ‌ ওয়ালা লড়াই করেছে। আল্লাহর পথে তাদের ওপর যেসব বিপদ এসেছে তাতে তারা মনমরা ও হতাশ হয়নি, তারা দুর্বলতা দেখায়নি এবং তারা বাতিলের সামনে মাথা নত করে দেয়নি। ১০৭ এ ধরনের সবরকারীদেরকে আল্লাহ‌ ভালবাসেন।
وَكَأَيِّن مِّن نَّبِىٍّ قَٰتَلَ مَعَهُۥ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌ فَمَا وَهَنُوا۟ لِمَآ أَصَابَهُمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا۟ وَمَا ٱسْتَكَانُوا۟ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٤٦
১৪৭ ) তাদের দোয়া কেবল এতটুকুই ছিলঃ “হে আমাদের রব! আমাদের ভুল –ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দাও। আমাদের কাজের ব্যাপারে যেখানে তোমার সীমালংঘিত হয়েছে, তা তুমি মাফ করে দাও। আমাদের পা মজবুত করে দাও এবং কাফেরদের মোকাবিলায় আমাদের সাহায্য করো।”
وَمَا كَانَ قَوْلَهُمْ إِلَّآ أَن قَالُوا۟ رَبَّنَا ٱغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِىٓ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَٱنصُرْنَا عَلَى ٱلْقَوْمِ ٱلْكَٰفِرِينَ ١٤٧
১৪৮ ) শেষ পর্যন্ত আল্লাহ‌ তাদেরকে দুনিয়ার পুরস্কারও দিয়েছেন এবং তার চেয়ে ভালো আখেরাতের পুরস্কারও দান করেছেন। এ ধরনের সৎকর্মশীলদেরকে আল্লাহ‌ পছন্দ করেন।
فَـَٔاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ ثَوَابَ ٱلدُّنْيَا وَحُسْنَ ثَوَابِ ٱلْءَاخِرَةِ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلْمُحْسِنِينَ ١٤٨
১৪৯ ) হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা তাদের ইশারায় চলো, যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করেছে, তাহলে তারা তোমাদের উল্টো দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে ১০৮ এবং তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِن تُطِيعُوا۟ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ يَرُدُّوكُمْ عَلَىٰٓ أَعْقَٰبِكُمْ فَتَنقَلِبُوا۟ خَٰسِرِينَ ١٤٩
১৫০ ) (তাদের কথা ভুল) প্রকৃত সত্য এই যে, আল্লাহ‌ তোমাদের সাহায্যকারী এবং তিনি সবচেয়ে ভালো সাহায্যকারী।
بَلِ ٱللَّهُ مَوْلَىٰكُمْ وَهُوَ خَيْرُ ٱلنَّٰصِرِينَ ١٥٠
১০২ .
লোকদের শাহাদাত লাভের যে আকাংখার অত্যধিক চাপে নবী ﷺ মদীনার বাইরে এসে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এখানে সেই আকাংখার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
১০৩.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাহাদাতের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অধিকাংশ সাহাবী সাহস হারিয়ে ফেলেন। এ অবস্থায় মুনাফিকরা (যারা মুসলমানদের সাথে সাথেই ছিল) বলতে থাকেঃ চলো আমরা আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কাছে যাই। সে আমাদের জন্য আবু সুফিয়ানের কাছ থেকে নিরাপত্তা এনে দেবে। আবার কেউ কেউ এমন কথাও বলে ফেলেঃ যদি মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রসূলই হতেন, তাহলে নিহত হলেন কেমন করে? চলো, আমাদের বাপ-দাদাদের ধর্মের দিকে ফিরে যাই। এ সমস্ত কথার জবাবে বলা হচ্ছে, তোমাদের “সত্যপ্রীতি” যদি কেবল মুহাম্মাদের ﷺ ব্যক্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত হয়ে থাকে এবং তোমাদের ইসলাম যদি এতই দুর্বল ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে যে, মুহাম্মাদের ﷺ দুনিয়া থেকে বিদায় নেবার সাথে সাথে তোমরা আবার সেই কুফরীর দিকে ফিরে যাবে, যা থেকে তোমরা বের হয়ে এসেছিলে, তাহলে আল্লাহর দ্বীন তোমাদের কোন প্রয়োজন অনুভব করে না।
১০৪.
এ থেকে মুসলমানদের একথা বুঝানো হয়েছে যে, মৃত্যুর ভয়ে তোমাদের পালিয়ে যাওয়ার কোন অর্থ নেই। মৃত্যুর জন্য আল্লাহ‌ যে সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তার আগে কেউ মরতে পারে না এবং তার পরেও কেউ জীবিত থাকতে পারে না। কাজেই তোমরা মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার চিন্তা না করে বরং জীবিত থাকার জন্য যে সময়টুকু পাচ্ছো সেই সময়ে তোমাদের যাবতীয় প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য দুনিয়া না আখেরাত কোন্‌টি হবে, এ ব্যাপারে চিন্তা করো।
১০৫ .
পুরস্কার মানে কাজের ফল। দুনিয়ার পুরস্কার মানে, মানুষ তার প্রচেষ্টা ও কাজের ফল স্বরূপ এ দুনিয়ার জীবনে যে লাভ, ফায়দা ও মুনাফা হাসিল করে। আর আখেরাতের পুরস্কার মানে হচ্ছে, ঐ প্রচেষ্টা ও কাজের বিনিময়ে মানুষ তার আখেরাতের চিরন্তন জীবনের জন্য যে ফায়দা, লাভ ও মুনাফা অর্জন করবে। জীবন যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষ যে প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে সে ক্ষেত্রে তার দৃষ্টি ইহকালীন না পরকালীন ফল প্রাপ্তির দিকে নিবদ্ধ থাকবে, ইসলামের দৃষ্টিতে মানবিক নৈতিকতার ক্ষেত্রে এটিই হচ্ছে চূড়ান্ত এ সিদ্ধান্তকারী প্রশ্ন।
১০৬.
শোকরকারী বলতে এমন সব লোকের কথা বলা হয়েছে যারা আল্লাহর বিশেষ নিয়ামতের কদর করে। আল্লাহর এই বিশেষ নিয়ামতটি হচ্ছেঃ তিনি মানুষকে দ্বীনের সঠিক ও নির্ভুল শিক্ষা দিয়েছেন। এ শিক্ষার মাধ্যমে তিনি মানুষকে এ দুনিয়া ও এর সীমিত জীবনকাল থেকে অনেক বেশী ব্যাপক একটি অনন্ত ও সীমাহীন জগতের সন্ধান দিয়েছেন এবং তাকে এ অমোঘ সত্যটিও জানিয়ে দিয়েছেন যে, মানুষের প্রচেষ্টা, সংগ্রাম-সাধনা ও কাজের ফল কেবলমাত্র এ দুনিয়ার কয়েক বছরের জীবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এ জীবনের পর আর একটি অনন্ত অসীম জগতে এর বিস্তার ঘটবে। এ দৃষ্টির ব্যাপকতা, দূরদর্শন ক্ষমতা ও পরিণামদর্শিতা অর্জিত হবার পর যে ব্যক্তি নিজের প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমকে এ দুনিয়ার জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে ফলপ্রসু হতে দেখে না অথবা তার বিপরীত ফল লাভ করতে দেখে এবং এ সত্ত্বেও এ আল্লাহর ওপর ভরসা করে কাজ করতে থাকে, কেননা আল্লাহ‌ তাকে এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, আখেরাতে সে অবশ্যই এর ভালো ফল পাবে-এহেন ব্যক্তিই হচ্ছে আল্লাহর শোকর গুজার বান্দা। এর বিপরীতে যারা এরপরও সংকীর্ণ বৈষয়িক স্বার্থ পূজায় নিমগ্ন থাকে এবং এবং দুনিয়ায় নিজেদের ভ্রান্ত প্রচেষ্টাগুলোর আপাত ভালো ফল বের হতে দেখে আখেরাতে সেগুলোর খারাপ পরোয়া না করে সেগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ে আর যেখানে দুনিয়ায় সঠিক প্রেচেষ্টাগুলোর ফলবতী হবার আশা থাকে না অথবা সেগুলো ক্ষতি হবার আশঙ্কা থাকে, সেখানে আখেরাতে সেগুলোর ভালো ফলের আশায় তাদের জন্য নিজেদের সময়, অর্থ-সম্পদ ও শক্তি-সামর্থ্য ব্যয় করতে প্রস্তুত হয় না, তারাই সত্যিকার অর্থে না-শোকরগুজার ও অকৃতজ্ঞ বান্দা। আল্লাহ‌ তাদেরকে যে জ্ঞান দান করেছেন তাদের কাছে সেই জ্ঞানের কোন মূল্য নেই।
১০৭.
অর্থাৎ নিজেদের সৈন্য সংখ্যা ও যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জামের স্বল্পতা ও অভাব এবং অন্যদিকে কাফেরদের বিপুল সংখ্যক সৈন্য ও সাজ-সরঞ্জামের প্রাচুর্য দেখেও তারা বাতিলের কাছে অস্ত্র সম্বরণ করেনি।
১০৮.
অর্থাৎ যে কুফরীর অবস্থা থেকে তোমরা বের হয়ে এসেছো, তারা আবার তোমাদের সেখানেই ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। ওহোদের পরাজয়ের পর মুনাফিক ও ইহুদীরা মুসলমানদের মধ্যে একথা প্রচার করার চেষ্টা করছিল যে, মুহাম্মাদ ﷺ যদি সত্যি সত্যিই আল্লাহর নবী হয়ে থাকেন, তাহলে যুদ্ধে পরাজিত হলেন কেন? তিনি তো একজন সাধারণ লোক। তাঁর অবস্থাও সাধারণ লোকদের থেকে আলাদা নয়। আজকে জিতে গেলেন আবার কালকে হেরে গেলেন। এই তাঁর অবস্থা। তিনি তোমাদেরকে আল্লাহর যে সাহায্য ও সহযোগিতার নিশ্চয়তা দিয়ে রেখেছেন, তা নিছক একটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক)
অনুবাদ: