আলে ইমরান

২০০ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
১৭১ ) তারা আল্লাহর পুরস্কার ও অনুগ্রহ লাভে আনন্দিত ও উল্লসিত এবং তারা জানতে পেরেছে যে, আল্লাহ‌ মুমিনদের প্রতিদান নষ্ট করেন না।
يَسْتَبْشِرُونَ بِنِعْمَةٍ مِّنَ ٱللَّهِ وَفَضْلٍ وَأَنَّ ٱللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ ٱلْمُؤْمِنِينَ ١٧١
১৭২ ) আহত হবার পরও যারা আল্লাহ‌ ও রসূলের আহবানে সাড়া দিয়েছে, তাদের মধ্যে ১২২ যারা সৎ-নেককার ও মুত্তাকী তাদের জন্য রয়েছে বিরাট প্রতিদান। আর যাদেরকে ১২৩
ٱلَّذِينَ ٱسْتَجَابُوا۟ لِلَّهِ وَٱلرَّسُولِ مِنۢ بَعْدِ مَآ أَصَابَهُمُ ٱلْقَرْحُ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا۟ مِنْهُمْ وَٱتَّقَوْا۟ أَجْرٌ عَظِيمٌ ١٧٢
১৭৩ ) লোকেরা বললোঃ তোমাদের বিরুদ্ধে বিরাট সেনা সমাবেশ ঘটেছে। তাদেরকে ভয় করো, তা শুনে তাদের ঈমান আরো বেড়ে গেছে এবং তারা জবাবে বলেছেঃ আমাদের জন্য আল্লাহ‌ যথেষ্ট এবং তিনি সবচেয়ে ভালো কার্য উদ্ধারকারী।
ٱلَّذِينَ قَالَ لَهُمُ ٱلنَّاسُ إِنَّ ٱلنَّاسَ قَدْ جَمَعُوا۟ لَكُمْ فَٱخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَٰنًا وَقَالُوا۟ حَسْبُنَا ٱللَّهُ وَنِعْمَ ٱلْوَكِيلُ ١٧٣
১৭৪ ) অবশেষে তারা ফিরে এলো আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহ সহকারে। তাদের কোন রকম ক্ষতি হয়নি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির ওপর চলার সৌভাগ্যও তারা লাভ করলো। আল্লাহ‌ বড়ই অনুগ্রহকারী।
فَٱنقَلَبُوا۟ بِنِعْمَةٍ مِّنَ ٱللَّهِ وَفَضْلٍ لَّمْ يَمْسَسْهُمْ سُوٓءٌ وَٱتَّبَعُوا۟ رِضْوَٰنَ ٱللَّهِ وَٱللَّهُ ذُو فَضْلٍ عَظِيمٍ ١٧٤
১৭৫ ) এখন তোমরা জেনে ফেলেছো, সে আসলে শয়তান ছিল, তার বন্ধুদের অনর্থক ভয় দেখাচ্ছিলো। কাজেই আগামীতে তোমরা মানুষকে ভয় করো না, আমাকে ভয় করো, যদি তোমরা যথার্থ ঈমানদার হয়ে থাকো। ১২৪
إِنَّمَا ذَٰلِكُمُ ٱلشَّيْطَٰنُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَآءَهُۥ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ١٧٥
১৭৬ ) (হে নবী!) যারা আজ কুফরীর পথে খুব বেশী দৌড়াদৌড়ি করছে তাদের তৎপরতা যেন তোমাকে মলিন বদন না করে। এরা আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ‌ আখেরাতে এদের কোন অংশ দিতে চান না। আর সবশেষে তারা কঠোর শাস্তি পাবে।
وَلَا يَحْزُنكَ ٱلَّذِينَ يُسَٰرِعُونَ فِى ٱلْكُفْرِ إِنَّهُمْ لَن يَضُرُّوا۟ ٱللَّهَ شَيْـًٔا يُرِيدُ ٱللَّهُ أَلَّا يَجْعَلَ لَهُمْ حَظًّا فِى ٱلْءَاخِرَةِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ ١٧٦
১৭৭ ) যারা ঈমানকে ছেড়ে দিয়ে কুফরী কিনে নিয়েছে তারা নিঃসন্দেহে আল্লাহর কোন ক্ষতি করছে না। তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রয়েছে।
إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱشْتَرَوُا۟ ٱلْكُفْرَ بِٱلْإِيمَٰنِ لَن يَضُرُّوا۟ ٱللَّهَ شَيْـًٔا وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ١٧٧
১৭৮ ) কাফেরদের আমি যে ঢিল দিয়ে চলছি এটাকে যেন তারা নিজেদের জন্য ভালো মনে না করে। আমি তাদেরকে এ জন্য ঢিল দিচ্ছি, যাতে তারা গোনাহের বোঝা ভারী করে নেয়, তারপর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন অপমানকর শাস্তি।
وَلَا يَحْسَبَنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ أَنَّمَا نُمْلِى لَهُمْ خَيْرٌ لِّأَنفُسِهِمْ إِنَّمَا نُمْلِى لَهُمْ لِيَزْدَادُوٓا۟ إِثْمًا وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ ١٧٨
১৭৯ ) তোমরা বর্তমানে যে অবস্থায় আছো আল্লাহ‌ মুমিনদের কখনো সেই অবস্থায় থাকতে দেবেন না। ১২৫ পাক–পবিত্র লোকেদেরকে তিনি নাপাক ও অপবিত্র লোকদের থেকে আলাদা করেই ছাড়বেন। কিন্তু তোমাদেরকে গায়েবের খবর জানিয়ে দেয়া আল্লাহর রীতি নয়। ১২৬ গায়েবের খবর জানাবার জন্য তিনি নিজের রসূলদের মধ্য থেকে যাকে চান বাছাই করে নেন। কাজেই (গায়েবের ব্যাপারে) আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান রাখো। যদি তোমরা ঈমান ও আল্লাহকে ভয় করার নীতি অবলম্বন করো তাহলে বিরাট প্রতিদান পাবে।
مَّا كَانَ ٱللَّهُ لِيَذَرَ ٱلْمُؤْمِنِينَ عَلَىٰ مَآ أَنتُمْ عَلَيْهِ حَتَّىٰ يَمِيزَ ٱلْخَبِيثَ مِنَ ٱلطَّيِّبِ وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى ٱلْغَيْبِ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ يَجْتَبِى مِن رُّسُلِهِۦ مَن يَشَآءُ فَـَٔامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَإِن تُؤْمِنُوا۟ وَتَتَّقُوا۟ فَلَكُمْ أَجْرٌ عَظِيمٌ ١٧٩
১৮০ ) আল্লাহ যাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং তারপরও তারা কার্পণ্য করে, তারা যেন এই কৃপণতাকে নিজেদের জন্য ভালো মনে না করে। না, এটা তাদের জন্য অত্যন্ত খারাপ। কৃপণতা করে তারা যা কিছু জমাচ্ছে তাই কিয়ামতের দিন তাদের গলার বেড়ি হবে। পৃথিবী ও আকাশের স্বত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহরই। ১২৭ আর তোমরা যা কিছু করছো, আল্লাহ‌ তা সবই জানেন।
وَلَا يَحْسَبَنَّ ٱلَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضْلِهِۦ هُوَ خَيْرًا لَّهُم بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا۟ بِهِۦ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ وَلِلَّهِ مِيرَٰثُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَٱللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ ١٨٠
১২২.
ওহোদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফেরার পথে বেশ কয়েক মনযিল দূরে চলে যাবার পর মুশরিকদের টনক নড়লো। তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলো, এ আমরা কি করলাম! মুহাম্মাদের ﷺ শক্তি ধ্বংস করার যে সুবর্ণ সুযোগ আমরা পেয়েছিলাম, তা হেলায় হারিয়ে ফেললাম? কাজেই তারা এক জায়গায় থেমে গিয়ে পরামর্শ করতে বসলো। সিদ্ধান্ত হলো, এখনই মদীনার ওপর দ্বিতীয় আক্রমণ চালাতে হবে। সিদ্ধান্ত তো তারা করে ফেললো তড়িঘড়ি। কিন্তু আক্রমণ করার আর সাহস হলো না। কাজেই মক্কায় ফিরে এলো। ওদিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেরও আশঙ্কা ছিল, কাফেররা আবার ফিরে এসে মদীনার ওপর আক্রমণ না করে বসে। তাই ওহোদ যুদ্ধের পরদিনই তিনি মুসলমানদের একত্র করে বললেন, কাফেরদের পেছনে ধাওয়া করা উচিত। যদিও সময়টা ছিল অত্যন্ত নাজুক তবুও যারা সাচ্চা মু’মিন ছিলেন তাঁরা প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে হামরাউল আসাদ পর্যন্ত ধাওয়া করলেন। এ জায়গাটি মদীনা থেকে আট মাইল দূরে অবস্থিত। এ আয়াতে এ প্রাণ উৎসর্গকারী মু’মিন দলের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
১২৩.
এ আয়াত ক’টি ওহোদ যুদ্ধের এক বছর পর নাযিল হয়েছিল। কিন্তু ওহোদের ঘটনাবলীর সাথে সম্পর্কিত হবার কারণে এগুলোকে এ ভাষণের সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে।
১২৪.
ওহোদ থেকে ফেরার পথে আবু সুফিয়ান মুসলমানদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে গিয়েছিল, আগামী বছর বদর প্রান্তরে আমাদের সাথে তোমাদের আবার মোকাবিলা হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময় এগিয়ে এলে আর তার সাহসে কুলালো না। কারণ সে বছর মক্কায় দুর্ভীক্ষ চলছিল। তাই সে মান বাঁচাবার জন্য একটি কৌশল অবলম্বন করলো। গোপনে এক ব্যক্তিকে মদীনায় পাঠিয়ে দিল। সে মদীনায় পৌঁছে মুসলমানদের মধ্যে এ খবর ছড়াতে লাগলো যে, এ বছর কুরাইশরা বিরাট প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা এত বড় সেনাবাহিনী তৈরী করছে যার মোকাবিলা করার সাধ্য আরবের কারো নেই। তার উদ্দেশ্য ছিল, এ প্রচারণায় ভীত হয়ে মুসলমানরা নিজেদের জায়গায় বসে থাকবে। মোকাবিলা করার জন্য বাইরে আসার সাহস তাদের হবে না। ফলে যুদ্ধক্ষেত্র না আসার দায় থেকে কাফেররা মুক্ত হয়ে যাবে। আবু সুফিয়ানের এ চালবাজি মুসলমানদের এমনভাবে প্রভাবিত করলো যে, নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাদের বদরের দিকে চলার আহবান জানালেন তখন তাতে আশাব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া গেলো না। অবশেষে আল্লাহর রসূল ভরা মজলিসে ঘোষণা করে দিলেন, কেউ না গেলে আমি একাই যাবো। এ ঘোষণার পর পনের’শ প্রাণ উৎসর্গকারী মুজাহিদ তাঁর সাথে যাবার জন্য প্রস্তুত হলো। তাদের সাথে করে নিয়ে তিনি বদরে হাযির হলেন। ওদিকে আবু সুফিয়ান দু’হাজার সৈন্য নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকলো। কিন্তু দু’দিনের পথ অতিক্রম করার পর সে তার সাথীদের বললো, এ বছর যুদ্ধ করা সঙ্গত হবে না। আগামী বছর আমরা আসবো। কাজেই নিজের সেনাবাহিনী নিয়ে সে ফিরে গেলো। নবী ﷺ আট দিন পর্যন্ত বদর প্রান্তরে তার অপেক্ষা করলেন। এ সময়ের মধ্যে তাঁর সাথীরা একটি ব্যবসায়ী কাফেলার সাথে কাজ-কারবার করে প্রচুর অর্থলাভ করলেন। তারপর যখন খবর পাওয়া গেলো, কাফেররা ফিরে গেছে তখন তিনি সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে মদীনায় ফিরে এলেন।
১২৫.
অর্থাৎ মুসলমানদের দলে সাচ্চা ঈমানদার ও মুনাফিকরা এক সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে, মুসলমানদের দলকে আল্লাহ‌ এভাবে দেখতে চান না।
১২৬.
অর্থাৎ আল্লাহ‌ কখনো মু’মিন ও মুনাফিকের পার্থক্য সুস্পষ্ট করার জন্য গায়েব থেকে মুসলমানদের মনের অবস্থা বর্ণনা করে কে মু’মিন ও কে মুনাফিক একথা বলার রীতি অবলম্বন করেন না। বরং তাঁর নির্দেশে এমন সব পরীক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হবে যার মাধ্যমে মু’মিন ও মুনাফিকের অবস্থা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে।
১২৭.
অর্থাৎ পৃথিবী ও আকাশের যে কোন জিনিসই যে কেউ ব্যবহার করছে তা আসলে আল্লাহর মালিকানাধীন। তার ওপর সৃষ্টির আধিপত্য ও তাকে ব্যবহার করার অধিকার সাময়িক। প্রত্যেককেই অবশ্যি তার দখল ছাড়তে হবে। অবশেষে সবকিছুই আল্লাহর কাছে চলে যাবে। কাজেই এ সাময়িক আধিপত্য ও দখলী স্বত্ব লাভ করে যে ব্যক্তি আল্লাহর সম্পদ আল্লাহর পথে প্রাণ খুলে ব্যয় করে সে-ই বুদ্ধিমান। আর যে ব্যক্তি তা আল্লাহর পথে ব্যয় না করে স্তূপীকৃত করে সে আসলে নিরেট বোকা বৈ আর কিছুই নয়।
অনুবাদ: