وَمِنْ ءَايَـٰتِهِۦ خَلْقُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَٱخْتِلَـٰفُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَٰنِكُمْ ۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَـَٔايَـٰتٍۢ لِّلْعَـٰلِمِينَ
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি ৩১ এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের পার্থক্য। ৩২ অবশ্যই তাঁর মধ্যে বহু নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানবানদের জন্য।
৩১
অর্থাৎ তাদের অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব লাভ করা, একটি অপরিবর্তনীয় নিয়মের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং অসংখ্য শক্তির পরম সামঞ্জস্য ও ভারসাম্য সহকারে কাজ করা-এগুলো নিজের অভ্যন্তরে এ বিষয়ের এমন বহু নিদর্শন রাখে যা থেকে জানা যায় যে, এ সমগ্র বিশ্ব-জাহানকে মাত্র একজন স্রষ্টাই অস্তিত্ব দান করেছেন এবং তিনিই এ বিশাল ব্যবস্থা পরিচালনা করেছেন। একদিকে যদি একথা চিন্তা করা যায় যে, এ প্রাথমিক শক্তি (Energy) কোথা থেকে এসে বস্তুর আকার ধারণ করেছে? বস্তুর এ বিভিন্ন উপাদান কেমন করে গঠিত হয়েছে এ উপাদানগুলোকে এহেন বৈজ্ঞানিক কৌশলে সংমিশ্রিত করে বিস্ময়কর সামঞ্জস্য সহকারে এ অত্যদ্ভূত বিশ্বব্যবস্থা গঠিত হয়েছে কেমন করে? এখন কোটি কোটি বছর ধরে একটি মহাপরাক্রমশালী প্রাকৃতিক আইনের আওতাধীনে এ ব্যবস্থাটি কিভাবে চলছে? এ অবস্থায় প্রত্যেক নিরপেক্ষ বুদ্ধিবৃত্তি এ সিদ্ধান্তে পৌঁছবে যে, এসব কিছু একজন সর্বজ্ঞ ও মহাজ্ঞানীর প্রবল ইচ্ছাশক্তি ছাড়া নিছক ঘটনাক্রমে বা অকস্মাৎ ঘটতে পারে না। আবার অন্যদিকে যদি দেখা যায় যে, পৃথিবী থেকে নিয়ে বিশ্ব-জাহানের দূরবর্তী নক্ষত্রগুলো পর্যন্ত সবাই একই ধরনের উপাদানে গঠিত এবং একই প্রাকৃতিক আইনের নিয়ন্ত্রণে তারা চলছে, তাহলে হঠকারিতামুক্ত প্রতিটি বুদ্ধিবৃত্তিই নিঃসন্দেহে একথা স্বীকার করবে যে, এ সবকিছু বহু ইলাহর কর্মকুশলতা নয় বরং একজন ইলাহ এ সমগ্র বিশ্ব-জাহানে স্রষ্টা ও প্রতিপালক।
৩২
অর্থাৎ যদিও তোমাদের বাকশক্তি সমান নয়, মুখ ও জিহ্বার গঠনেও কোন ফারাক নেই এবং মস্তিষ্কের গঠনাকৃতিও একই রূপ তবুও পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে তোমাদের ভাষা বিভিন্ন হয়ে গেছে। তারপর একই ভাষায় যারা কথা বলে তাদের বিভিন্ন শহর ও জনপদের ভাষাও আলাদা। আবার আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রত্যেক ব্যক্তির বলার রীতি, শব্দের উচ্চারণ এবং আলাপ-আলোচনার পদ্ধতি আলাদা। অনুরূপভাবে তোমাদের সৃষ্টি উপাদান এবং তোমাদের গঠন প্রক্রিয়া একই। কিন্তু তোমাদের বর্ণ এত বেশি বিভিন্ন যে, একেক জাতির কথা না হয় বাদই দিলাম কিন্তু একই বাপ-মায়ের দু’টি সন্তানের বর্ণও একই হয় না। এখানে নমুনা হিসেবে কেবলমাত্র দু’টি জিনিসের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু এ দিক থেকে সামনে অগ্রসর হয়ে দেখুন, দুনিয়ায় সকল দিকেই আপনি এত বেশি বৈচিত্র্য (variety) দেখতে পাবেন যে, তাদের সবগুলোকে একত্র করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। মানুষ, পশু, উদ্ভিদ এবং অন্যান্য সমস্ত জিনিসের যে কোনো একটি শ্রেণীকে নেয়া হোক, দেখা যাবে তাদের প্রতিটি এককের মধ্যে মৌলিক একাত্মতা সত্ত্বেও অসংখ্য বিভিন্নতা বিরাজ করছে। এমন কি কোনো এক শ্রেণীর একটি এককও অন্য একটি এককের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যশীল নয়। এমন কি একটি গাছের দু’টি পাতার মধ্যেও পূর্ণ সাদৃশ্য পাওয়া যায় না। এ জিনিসটি পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে, এ দুনিয়ায় এমন কোনো কারখানা নেই যেখানে স্বয়ংক্রিয় মেশিনপত্র চলছে এবং বিপুল উৎপাদনের (Mass production) পদ্ধতিতে সব রকমের জিনিসের এক একটি ছাঁচ থেকে ঢালাই হয়ে একই ধরনের জিনিস বের হয়ে আসছে। বরং এখানে একজন জবরদস্ত কারিগর কাজ করছেন যিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে পূর্ণ ব্যক্তিগত আগ্রহ ও উদ্যোগ সহকারে একটি নতুন ডিজাইনে, নতুন নকশায় ও কারুকাজে, নতুন সৌষ্ঠবে এবং নতুন গুণাবলী সহকারে তৈরি করেন। তাঁর তৈরি করা প্রত্যেকটি জিনিস স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তাঁর উদ্ভাবন ক্ষমতা সবসময় সব জিনিসের একটি নতুন মডেল বের করে চলেছে। তাঁর শিল্পকারিতা একটি ডিজাইনকে দ্বিতীয়বার সামনে নিয়ে আসাকে নিজের পূর্ণতার জন্য অবমাননাকর মনে করে। যে ব্যক্তিই এ বিস্ময়কর দৃশ্য চোখ মেলে দেখবে সে কখনো এ ধরনের মূর্খতা সুলভ ধারণা পোষণ করতে পারে না যে, এ বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা একবার এ কারখানাটি চালিয়ে দিয়ে তারপর নিজে কোথাও গিয়ে ঘুমাচ্ছেন, তিনি যে প্রতি মুহূর্তে সৃষ্টি করে যাচ্ছেন এবং নিজের সৃষ্ট প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর ব্যক্তিগত দৃষ্টি দিচ্ছেন, এতো একথার সুস্পষ্ট প্রমাণ।