এটিও এমন ধরনের নিদর্শনাবলীর অন্যতম যেগুলো থেকে একজন মহাজ্ঞানী স্রষ্টার ব্যবস্থাপনার সন্ধান পাওয়া যায়। বরং এছাড়াও এ জিনিসটি এও চিহ্নিত করে যে, তিনি নিছক স্রষ্টা নন বরং নিজের সৃষ্টির প্রতি তিনি বড়ই করুণাশীল ও স্নেহময় এবং তার প্রয়োজন ও কল্যাণের জন্য তার চেয়ে বেশি তিনি চিন্তা করেন। মানুষ দুনিয়ায় অনবরত পরিশ্রম করতে পারে না। বরং প্রত্যেকবার কয়েক ঘণ্টা মেহনতের পর তাকে কয়েক ঘন্টা বিশ্রাম নিতে হয়। এভাবে আবার সে কয়েক ঘন্টা মেহনত করার শক্তি পাবে। এ উদ্দেশ্যে মহাজ্ঞানী ও করুণাময় স্রষ্টা মানুষের মধ্যে কেবলমাত্র ক্লান্তির অনুভূতি এবং কেবলমাত্র বিশ্রামের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হননি বরং “নিদ্রা"র এমন একটি জবরদস্ত চাহিদা তার অস্তিত্বের মধ্যে রেখে দিয়েছেন যার ফলে তার ইচ্ছা ছাড়াই এমন কি তার বিরোধিতা সত্ত্বেও আপনা আপনিই কয়েক ঘণ্টার জাগরণ ও মেহনতের পর তা তাকে পাকড়াও করে, কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে তাকে বাধ্য করে এবং প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে আপনা আপনিই তাকে ত্যাগ করে। এ নিদ্রার স্বরূপ ও অবস্থা এবং এর মৌল কারণগুলো আজও মানুষ অনুধাবন করতে পারেনি। এটি অবশ্যই জন্মগতভাবে মানুষের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী হয়ে থাকে, এটা একথার সাক্ষ্য পেশ করার জন্য যথেষ্ট যে, এটি কোন আকস্মিক ঘটনা নয় বরং কোন মহাজ্ঞানী সত্ত্বা একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা অনুসারে এ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। এর মধ্যে একটি বিরাট জ্ঞান, কল্যাণ ও উদ্দেশ্য সক্রিয় দেখা যায়। এছাড়াও এ নিদ্রা একথারও সাক্ষ্যবহ যে, যিনি মানুষের মধ্যে এ বাধ্যতামূলক উদ্যোগ রেখে দিয়েছেন তিনি নিজেই মানুষের জন্য তার চেয়ে বেশি কল্যাণকামী। অন্যথায় মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে নিদ্রার বিরোধিতা করে এবং জোরপূর্বক জেগে থেকে এবং অনবরত কাজ করে কেবল নিজের কর্মশক্তিই নয় জীবনী শক্তিও ক্ষয় করে।
তারপর জীবিকার অন্বেষণের জন্য “আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান” শব্দাবলীর ব্যবহার করার মাধ্যমে নিদর্শনাবলীর অন্য একটি ধারাবাহিকতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। যদি পৃথিবী ও আকাশের বিপুল ও অগণিত শক্তি সম্ভারকে জীবিকার কার্যকারণ ও উপায় উপকরণ সৃষ্টি করার কাজে না লাগিয়ে দেয়া হতো এবং পৃথিবীতে মানুষের জন্য জীবিকার অসংখ্য উপায়-উপকরণ সৃষ্টি না করা হতো, তাহলে মানুষ এ জীবিকার সন্ধানই বা কোথায় করতে পারতো। শুধুমাত্র এতটুকুই নয় বরং জীবিকার এ অনুসন্ধান এবং তা উপার্জন এমন অবস্থায়ও সম্ভব হতো না যদি এ কাজের জন্য মানুষকে সর্বাধিক উপযোগী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং দৈহিক ও মানসিক যোগ্যতা না দান করা হতো। কাজেই মানুষের মধ্যে জীবিকা অন্বেষণের যোগ্যতা এবং তার অস্তিত্বের বাইরে জীবিকার উপকরণাদি বিদ্যমান থাকা পরিষ্কারভাবে একজন দয়াশীল ও মর্যাদাবান সত্ত্বার অস্তিত্বের সন্ধান দেয়। বুদ্ধিবৃত্তি অসুস্থ না হলে কখনো কেউ এ ধারণা করতে পারতো না যে, এ সবকিছু অকস্মাৎ হয়ে গেছে অথবা এসব বহু ইলাহর ইলাহিত্বের ফল কিংবা কোনো নির্দয় অন্ধশক্তি এ অনুগ্রহ ও দানের উৎস।