আল্লাহর এ ভাষণ এবং এর আসল প্রাণসত্ত্বা সম্পর্কে যে ব্যক্তিই চিন্তা-ভাবনা করবে সে একথা অনুভব না করে থাকতে পারে না যে, কুরআন মজীদ মানুষের জন্য নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির যে পথ নির্ধারণ করে সেজন্য একটি মুক্ত সমাজ ও মুক্ত অর্থনীতি যেখানে মানুষের মালিকানা অধিকার খতম করে দেয়া হয়, রাষ্ট্র সমস্ত উৎপাদন ও উপকরণের একচ্ছত্র মালিক হয়ে যায় এবং ব্যক্তিবর্গের মধ্যে জীবিকা বণ্টনের যাবতীয় ব্যবস্থা সরকারী কর্মকর্তাদের করায়ত্ত থাকে। এমন কিকোন ব্যক্তি অধিকার চিহ্নিত করার পরও তা তাকে দিতে পারে না এবং অন্য ব্যক্তি কারো থেকে কিছু গ্রহণ করে তাঁর জন্য নিজের মনের মধ্যে কোনো শুভেচ্ছার অনুভূতি লালন করতে পারে না। এভাবে নির্ভেজাল কমিউনিস্ট সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আজকাল আমাদের দেশে “কুরআনী রবুবীয়াত ব্যবস্থা”র গালভরা নাম দিয়ে জবরদস্তি কুরআনের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। এটা কুরআনের নিজস্ব পরিকল্পনার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ এর মধ্যে ব্যক্তিগত নৈতিক বৃত্তির বিকাশ ও উন্মেষ এবং ব্যক্তি চরিত্র গঠন ও উন্নয়নের দুয়ার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কুরআনের পরিকল্পনা এমন জায়গায় কার্যকর হতে পারে যেখানে ব্যক্তিরা সম্পদের কিছু উপায়-উপকরণের মালিক হয়, সেগুলো স্বাধীনভাবে ব্যবহার করার ক্ষমতা রাখে এবং এরপর স্বেচ্ছায় ও স্বাগ্রহে আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের অধিকার আন্তরিকতা সহকারে প্রদান করে। এ ধরনের সমাজে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকটি লোকের মধ্যে একদিকে সহানুভূতি, দয়া-মায়া, মমতা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, সত্যনিষ্ঠ ও সত্য পালন করার উন্নতর গুণাবলী সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা দেখা দেয় এবং অন্যদিকে যেসব লোকের সাথে সদাচার করা হয় তাদের মনে সদাচারীদের জন্য শুভেচ্ছা ও অনুগৃহীত হবার মনোভাব এবং অনুগ্রহের বিনিময়ে অনুগ্রহ করার পবিত্র অনুভূতি বিকাশ লাভ করে। শেষ পর্যন্ত এমন একটি আদর্শ ও মহৎ পরিবেশের সৃষ্টি হয়ে যায় যেখানে অন্যায়ের পথ রুদ্ধ হওয়া এবং ন্যায়ের পথ উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া কোনো স্বৈরাচারী শক্তির ওপর নির্ভরশীল হয় না বরং লোকেরা নিজেদের আত্মিক শুদ্ধতা ও সদিচ্ছাবশেই এ দায়িত্ব মাথা পেতে নেয়।