এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ দু’দলে বিভক্ত হয়ে গেছেন। একদল বলেন, এখানে রিবা শব্দের এমন সুদের কথা বলা হয়নি যাকে শরীয়াতের দৃষ্টিতে হারাম করা হয়েছে বরং এমন ধরনের দান, তোহফা ও হাদিয়াকে সুদ বলা হয়েছে যা গ্রহীতা পরবর্তীকালে ফেরত দেবার সময় তা বর্ধিত আকারে ফেরত দেবে, এরূপ সংকল্প সহকারে দেয়া হয়। অথবা একথা মনে করে দেয়া হয় যে, তা দাতার কোনো ভাল কাজে লাগবে অথবা তাঁর আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করা দাতার নিজের জন্য ভালো হবে। এটি ইবনে আব্বাস (রা.), মুজাহিদ (রা.), দ্বাহহাক (রা.), কাতাদাহ, ইকরামাহ, মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব আল কুরাযী ও শা’বীর উক্তি। আর সম্ভবত তারা এ ব্যাখ্যা এ জন্য করেছেন যে, আয়াতে এ কর্মের ফল হিসেবে কেবলমাত্র এতটুকু বলা হয়েছে যে, আল্লাহর কাছে ব্যাপারটি তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট হতো তাহলে ইতিবাচক ভাবে বলা হতো, আল্লাহর দরবারে তাকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
দ্বিতীয় দলটি বলেন, না, শরীয়াত যে রিবাকে হারাম গণ্য করেছে এখানে তাঁর কথাই বলা হয়েছে। এ মত প্রকাশ করেছেন হযরত হাসান বাসরী ও সুদ্দী এবং আল্লামা আলূসীর মতে আয়াতের বাহ্যিক অর্থ এটিই। কারণ আরবী ভাষায় রিবা শব্দটি এ অর্থেই ব্যবহৃত হয়। মুফাসসির নিশাপুরীও এ ব্যাখ্যাটি গ্রহণ করেছেন।
আমার মতে এ দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটিই সঠিক। কারণ পরিচিত অর্থ পরিত্যাগ করার জন্য ওপরে প্রথম ব্যাখ্যার স্বপক্ষে যে যুক্তি দেখানো হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। সূরা রুম যে সময় নাযিল হয় সে সময় কুরআন মজীদ সুদ হারাম হওয়ার কথা ঘোষণা করেনি। তাঁর কয়েক বছর পর একথা ঘোষিত হয়। এ জন্য সে পূর্ব থেকেই মন-মানসিকতা তৈরি করার কাজে লিপ্ত হয়। মদের ব্যাপারেও পূর্বে শুধুমাত্র এতটুকু বলা হয়েছিল যে, এটা পবিত্র রিযিক নয় (আন নাহল, ৬৭ আয়াত) তারপর বলা হয়, এর ক্ষতি এর লাভের চেয়ে বেশি। (আল বাকারাহ, ২১৯) এরপর হুকুম দেয়া হয়, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাযের ধারে কাছে যেয়ো না। (আন নিসা, ৪৩) তারপর এটিকে পুরোপুরি হারাম করার ঘোষণা দেয়া হয়। অনুরূপভাবে এখানে সুদের ব্যাপারেও কেবলমাত্র এতটুকু বলেই থেমে যাওয়া হয়েছে যে, এটা এমন জিনিস নয় যার মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি বরং সম্পদ প্রকৃতপক্ষে বৃদ্ধি হয় যাকাতের মাধ্যমে। এরপর চক্র বৃদ্ধি হারে সুদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে (আল ইমরান, ১৩০) এবং সবশেষে সুদকেই চূড়ান্ত ভাবে হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে (আল বাকারাহ, ২৭৫)